• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বিরল ঘটনা, ৫ বছর বয়সে সন্তান জন্ম!

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২১  

পেরুর বাসিন্দা লিনা মেদিনা। ১৯৩৯ সালে মাত্র ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন লিনা! বিশ্বের কনিষ্ঠতম মা হওয়ার খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও কিছুই জানতেন না তিনি।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা সানের খবরে বলা হয়েছে, লিনার জন্ম হয়েছিল পেরুর টিক্রাপোতে। বাবা টিবুরেলো মেদিনা এবং মা ভিক্টোরিয়া লোসিয়া। লিনারা ছিলেন ৯ ভাইবোন। তবে অন্যদের তুলনায় লিনা যেন একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছিল। তার পেট ক্রমশ বাড়তে থাকে। মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন থেকে চিকিৎসক সবাই প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলেন পেটে টিউমার হয়েছে।

সানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পিসকো হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন লিনার গর্ভে বড় হচ্ছে সন্তান! লিনা তখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা! আর লিনার বয়স তখন ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন। অর্থাৎ ৬ বছর হওয়ার আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল লিনা! চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর আগে এমন উদাহরণ ছিল না। অস্বাভাবিক এ পরিস্থিতি নিয়ে তখন বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক মহলও টালমাটাল অবস্থায়।

এই ঘটনা সামনে আসার সঙ্গে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছিল। লিনার ওপর হওয়া যৌন হেনস্থার বিষয়। ছোট্ট লিনার সন্তানের বাবা কে তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়। এ ঘটনায় তার বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না মেলায় ছেড়েও দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচার করে লিনার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় গেরার্ডো। যে চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচার করেছিলেন তারই নামানুসারে। জন্মের সময় সন্তানের ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম ৭০০ গ্রাম। অর্থাৎ স্বাভাবিক ওজন নিয়ে সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছিল ছোট্ট লিনা।

তার ছেলে গেরার্ডোর কাছে লিনার পরিচয় ছিল বড় বোন। গেরার্ডো তার সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করতেন। সারা দিন ‘বোনের’র সঙ্গে খেলাধুলো করে, কখনও বা লড়াই করে দিন কেটে যেত। ১০ বছর বয়স হলে গেরার্ডো জানতে পারে লিনা আসলে তার মা।

লিনাকে নিয়ে চিকিৎসক মহলে নানা গবেষণা চলেছে। লা প্রেসি মেডিকেল জার্নালে তাকে নিয়ে বিস্তর প্রচ্ছদ প্রকাশিত হয়। তাতে জানা যায়, ৮ মাস বয়স থেকেই ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল তার। অর্থাৎ তখন থেকেই প্রজননশীল হয়ে পড়েছিল সে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় প্রিকসিয়াস পিউবার্টি। অর্থাৎ সময়ের অনেক আগেই প্রজনন ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া। মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে যৌন হরমোন নিঃসৃত হয়, সেই অংশেরই কিছু সমস্যার কারণে এমনটি ঘটে থাকে। যা বিরলতম ঘটনা।

পরবর্তীকালে তার চিকিৎসক গেরার্ডো লোজাডার ক্লিনিকেই তিনি সেক্রেটারির কাজ করতেন। উপার্জনের টাকায় ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড়ও করেন লিনা। কিন্তু নিজের পরিস্থিতি নিয়ে ঘনিষ্ঠ বৃত্ত ছাড়া কারও সঙ্গেই আলোচনা করেননি তিনি।

১৯৭০ সালে বিয়ে করেন লিনা। দু’বছর পর তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। আর প্রথম সন্তান গেরার্ডো ১৯৭৯ সালে মাত্র ৪০ বছর বয়সে অস্থিমজ্জা সংক্রান্ত রোগে মারা যান।

লিনার বয়স এখন ৮৭ বছর। পেরুতেই থাকেন তিনি। আজও তাকে তাড়া করে বেড়ান সাংবাদিকরা। কিন্তু প্রথম থেকেই একটি বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে কখনও কোনও সাক্ষাৎকার তিনি দেননি। পুরা ঘটনাটি আজও রহস্যই থেকে গেছে।