• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

দেখি বাংলার রূপঃ

সাগর কন্যা - কুয়াকাটা (ভিডিওসহ )

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮  

অপরূপ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি - সাগর কন্যা কুয়াকাটা। আর একবার যে গিয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সে নিশ্চিত বাঁধা পড়ে যাবে এর অনিন্দ্য সুন্দর রূপ মাধূর্য্য।ে সমুদ্র চিরদিনই মানুষকে ডাকে আর কুয়াকাটা সে’ত ভ্রমণ পিপাসুদের স্বর্গভূমি। এখানের বিস্তৃত বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত একসঙ্গে উপভোগ করার দারুণ সুযোগ আর আশেপাশের নির্মল প্রকৃতি উদ্বাহু বসে আছে আকর্ষণের পসরা সাজিয়ে। দু'দন্ড ফুরসৎ মিললে নগর সভ্যতার যাতাকলে পিষ্ট নগরবাসী, চট করে ঘুরে আসতে পারেন কুয়াকাটা থেকে। 

অবস্থানঃবরিশাল শহর থেকে ১০৮ কিঃমিঃ দূরে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নে অবস্থিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একসঙ্গে সমুদ্রে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে। প্রায় ৩৬ কিঃমিঃ ধরে বিস্তৃত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। তবে পুরোটা একসাথে নয়। গঙ্গামতির ছোট একটি খাল সৈকতটিকে ২টি ভাগে বিভক্ত করেছে। সাগরের পশ্চিম পাশের্¡ খাজুরিয়া রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে পূর্ব গঙ্গামতির খাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিঃমিঃ সৈকত। খাল পার হয়ে বাকি ২০ কিঃমিঃ সৈকত। 

কখন যাবেনঃ    অধিকাংশ মানুষ কুয়াকাটা বেড়ানোর সঠিক সময় শীতকাল (অক্টোবর - মার্চ) বলে মনে করেন। তবে শীত, গ্রীষ¥, বর্ষা সব ঋতুতেই এখানে যাওয়া যায়। শীতকালেঘুরে বেড়ানোটা অনেকটা আরামদায়ক হলেও এ সময় সমুদ্র থাকে শান্ত। ঢেউ তেমন একটা দেখতে পাবেন না। তাছাড়া ঘন কুয়াশা পড়লে সূর্যোদয়ও দেখতে না পাবার সম্ভাবনা। সমুদ্রের রুদ্র রূপ দেখতে হলে যেতে হবে গ্রীষ¥ বা বর্ষাকালে। সৈকতে শত সহস্র ঊর্মিমালার নিরন্তর আঁছড়ে পড়া দেখার মধ্যে এক ধরণের নেশা আছে। তা উপভোগের সঠিক সময় এটাই। তবে বর্ষাকালে আবার আকাশে ঘন মেঘ থাকায় সূর্যোদয়/ সূর্যাস্ত মিস করার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই যখনই যাননা কেন ২/১ দিন সময় নিয়ে এবং আবহাওয়ার অগ্রিম খোঁজ খবর নিয়ে রওনা হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর যদি সুযোগ থাকে এবং আপনি যথেষ্ট রোমান্টিক মুডের মানুষ হন তবে এ সময়ের ১টি পূর্ণিমা রাত সৈকতে কাটিয়ে যেতে পারেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি সৈকতে ইজিচেয়ারে আলস্যে-আরামে শুয়ে বসে পূর্ণ চন্দ্র দর্শন আপনার জীবনের অন্যতম স্বরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। 

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা-কুয়াকাটা।    ঢাকা থেকে কুয়াকার দূরত্ব ৩৮০ কিঃমিঃ, যেতে পারেন সড়ক, নৌ বা আকাশ পথে। ঢাকার গাবতলী থেকে বেশ কিছু পরিবহন যেমনঃ দ্রুতি, সাকুরা, হানিফ, কনক পরিবহন প্রভৃতি এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ভাড়া এসি ১০০০ টাকা এবং নন-এসি ৬০০-৬৫০ টাকা। সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা। সড়ক পথে এই দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণ বয়স্ক বা শিশুদের জন্যে একেবারেই আরামদায়ক হবে না। তাই পছন্দ করতে পারেন বিকল্প পন্থাও। 

  ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ছেড়ে আসা বিলাসবহুল লঞ্চ পারাবত, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, উপকূল, প্রিন্স অব বরিশাল প্রভৃতি যোগে আমতলী বা পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাবেন সকালে। সময় লাগবে ১২ ঘন্টা প্রায়। ভাড়া ডেক-২০০-৩০০ টাকা, শ্রেনী ভেদে কেবিন ভাড়া ১০০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। সেখান থেকে অটোতে করে বাসটার্মিনাল গেলেই মিলবে কুয়াকাটা যাওয়ার বাস। পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত, ভাড়া ১৩০-১৫০ টাকা। আর আমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট - ১ঘন্টা, ভাড়া ৫০-৭০ টাকা। এছাড়া সদরঘাট থেকে রাত ৮-৩০ টার মধ্যে ছেড়ে আসা লঞ্চ সুন্দরবন, পারাবত, এ্যাডভেঞ্চার, সুরভী, কীর্তনখোলা প্রভৃতি যোগে ভোরে পৌঁছাতে পারেন বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে। সময় লাগবে প্রায় ৮ ঘন্টা। ভাড়া ডেক ১৫০-২০০ টাকা, শ্রেনী ভেদে কেবিন ভাড়া ৭০০-৩৫০০ টাকা। 

    এছাড়া সময় বাঁচাতে চাইলে আকাশ পথেও আসতে পারেন বরিশাল। সপ্তাহে ৪দিন বিমান বাংলাদেশ এবং সপ্তাহে ৭ দিনই ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারের ফ্লাইট আছে দিনের বিভিন্ন সময়ে। তাই পছন্দমত সময় বেছে নিয়ে ঘন্টাখানিকের ব্যবধানে ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছানোর এ সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারেন।

বরিশাল - কুয়াকাটা।    বরিশাল এয়ারপোর্ট বা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রেন্ট এ কার এ যেতে পারেন কুয়াকাটা। সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা। ভাড়া (একদিন অথবা দুইদিনের জন্যে) গাড়ি ভেদে ১৫০০০-২০০০০ টাকা। এছাড়া অটোতে করে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটাগামী বাস যেমনঃ- ইমন পরিবহন, মায়েরদোয়া পরিবহন, আল-আমীন পরিবহন, হাওলাদার পরিবহন করেও যেতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। ভাড়া ২৪০ টাকা।

 কোথায় থাকবেন।  

 

 কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্যে বিভিন্ন মানের প্রায় অর্ধশতাধিক হোটেল/মোটেল/রিসোর্ট আছে। একেবারে কম খরচে ৪০০-৫০০ টাকা থেকে শুরু করে মধ্যমমান/বিলাসবহুল ভাবে ২০০০-৬০০০ টাকার মধ্যে থাকা যাবে। গ্রেভার ইন, বীচ হ্যাভেন, কুয়াকাটা স্কাই প্যালেস, গোল্ডেন প্যালেস, সী গার্ল, তাজ, সি ভিউ, সৈকত, নীলাঞ্জনা, সাগর কন্যা প্রভৃতি হোটেলগুলোতে। আর বাজেট যদি বেশী হয় একটু নিরিবিলিতে অভিজাত ভাবে সময় কাটাতে চান তবে উঠতে পারেন ফাইভ স্টার শিকদার রিসোর্ট ভিলা (মোবাইল ০১৭২০২৬১১৩৬ ভাড়া ৬০০০-২৪০০০) বা কুয়াকাটা গ্রান্ড হোটেলে (ভাড়া ১৬০০০-৩০০০০ টাকা, মোবাইল ০১৭০৯৬৪৬৩০৫)। এছাড়া সরকারী ডাক বাংলো বা রেষ্টহাউজ গুলোতেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন। 

    একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সিজনে বা সরকারী লম্বা ছুটির সময়গুলোতে গেলে আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে যাওয়াটা সুবিবেচনার কাজ হবে। অন্য সময়ে হোটেলে রুম পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে না। অবশ্য কম খরচে বেড়াতে চাইতে অফ সিজনে বেস্ট। এ সময় হোটেলে ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ অনেকটাই কম। 

ঘোরাঘুরি করবেন যেভাবে।    কুয়াকাটায় ঘোরাঘুরি করার জন্যে মোটর বাইক ভাড়ায় পাওয়া যায়। চালকের পিছনে ২জন বসতে পারবেন। এখানের রাস্তাঘাট তেমন ভাল নয়। ফলে মোটর সাইকেলে ঘোরা সহজ। আবার ভাটার সময় সৈকত দিয়ে মোটর বাইকে করে নানা জায়গায় ঘুরতে যেতে পারবেন সহজেই। সৈকত এলাকাতেই বাইক ভাড়া পাবেন। আবার যে হোটেলে থাকবেন তাদের বললে তারাও যোগাযোগ করিয়ে দেবে। অবশ্যই দরদাম করে নেবেন। যে কয়দিন ঘুরতে চান ওদের সঙ্গে চুক্তি করে নিলে ওরা হোটেল থেকেই আপনাদের পিক করে নেবে। 

    তাছাড়া ভ্যানে বা গাড়িতে করেও কিছু কিছু জায়গা ঘোরা যাবে। আর সমুদ্রের মধ্যে কয়েকটি চর আছে যা দেখতে চাইলে স্পিডবোট, ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে। 

কি করবেনঃ    প্রথম কথা প্রাণ ভরে উপভোগ করবেন বঙ্গোপসাগরের অপরূপ রূপ। সৈকতে সারিসারি ছাতা এবং ইজি চেয়ার ভাড়া পাওয়া যায়। দিনে এখানে বসে সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ দেখতে খুবই ভাল লাগে। তাছাড়া সমুদ্রের একটি নিজস্ব ভাষা আছে তা উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে বসতে হবে রাতে। সমুদ্র থেকে বয়ে আসা øিগ্ধ বাতাস আর বিরামহীন ঢেউয়ের গর্জন নেশা জাগাবে মনে। ঢেউয়ের ফেনায় আলো পড়ে জ্বলে ওঠা ফসফরাস দেখে মুগ্ধ হবেন নিশ্চিত। সৈকতে হাঁটাহাটি করতে পারেন। ঘোড়ায় চড়ে কিছুটা সময় মজা করে কাটাতে পারেন। ফুটবল বা ভলিবল খেলতে পারেন। ওয়াটার বাইক বা স্পিড বোটেও কিছু সময়ের জন্যে এ্যাডভেঞ্চার করে নিতে পারেন।   

 কুয়াকাটায় সমুদ্রের সাহচর্যে কাটবে অধিকাংশ সময়। ১টা বেলা তাই রাখতে পারেন সমুদ্র øানের জন্যে। জোয়ার ভাটার হিসাব রেখে জোয়ারের সময় নামতে পারেন পানিতে। আর সে জন্যে আট-সাট সাঁতার উপযোগী পোষাক নিতে ভুলবেন না যেন। নিরাপত্তার স্বার্থে নিরিবিলি জায়গায় না নেমে ঝাপা-ঝাপি, আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠুন জণাকীর্ণ জায়গায়। আর দক্ষ সাঁতারু না হলে উরু পানির বেশী নামার সাহস না করাই ভাল। 

কি দেখবেনঃ    

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দর্শন।    অতি প্রত্যুষে বঙ্গোপসাগরের পেট চীরে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসা অপূর্ব সূর্যোদয়ের দৃশ্যটি সবচেয়ে ভাল দেখা যাবে গঙ্গামতির বাঁক থেকে। আবার শেষ বিকালে সমুদ্রের বুকে টুপ করে ডুব দেওয়া সূর্যাস্তের কমলা আভায় যদি রাঙাতে চান মন তবে যেতে হবে কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকতের সানসেট পয়েন্টে। 

শুটকি পল্লী।    সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে লেম্বুপাড়ায় প্রতিবছর নভেম্বর-মার্চ মাস পর্যন্ত চলে শুটকি তৈরীর মৌসুম। এসময় এখানে জেলেরা অস্থায়ী ভাবে গড়ে তোলে শুটকী পল্লী। সম্পুর্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এখানে সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে জেলেরা শুটকি তৈরী করে। বিশাল এলাকা জুড়ে বাঁশের মাচায় শুকিয়ে শুটকি তৈরীর পদ্ধতিটি এখানে দেখে আসতে পারবেন স্বচক্ষে। তাছাড়া একেবারে কম দামে ভাল মানের ইলিশ, রূপচাঁদা, লইট্টা, শাপলাপাতা, হাঙর, চিংড়ী প্রভৃতি শুটকিও কিনে আনতে পারবেন। 

চর গঙ্গামতি।    কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ১০ কিঃমিঃ দূরে একটি অত্যন্ত সুন্দর জায়গা চর গঙ্গামতি। ট্রলার, স্পিডবোট বা নৌকা নিয়ে ঘুরে দেখার সুযোগ আছে এখানে। এখানে স্বচ্ছ লেক, একধারে বেলাভূমি অন্যদিকে গঙ্গামতির জঙ্গলে কেওড়া, গেওয়া, খেয়া, ছইলা প্রভৃতি নানা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের হাতছানি। সঙ্গে দেখা মিলতে পারে বন মোরগ, বানর বা বুনো শুয়োরের। আর হ্যাঁ, এখান থেকেই কিন্তু সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব মনোলোভা দৃশ্যও একসঙ্গে উপভোগ করা হয়। 

ক্রাব আইল্যান্ড।    কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্ব দিকে গঙ্গামতির জঙ্গল পার হয়ে যেতে হবে ক্রাব আইল্যান্ড বা লাল কাঁকড়ার দ্বীপে। এখানে দেখা মিলবে শত শত ছোট লাল কাকড়ার। তবে লাল কাকড়া দেখতে চাইলে চুপচাপ, শব্দ না করে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। শব্দ করলেই তারা চট করে ঢুকে পড়বে বালির গর্তের মধ্যে। 

ফাতরার বন।    কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে নদী পার হলেই দেখা মিলবে এক মিনি সুন্দর বনের যেটা ফাতরার বন নামে পরিচিত। এখানে দেখতে পাবেন সুন্দরী, কেওড়া, গোলপাতা, বাইন প্রভৃতি নানা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের। ছোট বড় নানা পাখী সহ গুইসাপ, অজগর এগুলোও চোখে পড়তে পারে। এখানে ট্রলারে করে যেতে সময় লাগবে ১ঘন্টা। 

রাখাইন পল্লী ও অন্যান্য।    রাখাইনরা প্রায় ২০০ বছর ধরে বসবাস করছে এ অঞ্চলে। কুয়াকাটা থেকে ১০ কিঃমিঃ দূরে কেরানিপাড়ায় গেলে তাদের জীবন-যাপন পদ্ধতির সঙ্গে তাঁত বুননও দেখে আসতে পারবেন। সঙ্গে তাঁতের জিনিস কিনতেও পারবেন। 

কাছেই মিশ্রিপাড়ার বৌদ্ধ মন্দিরটিতে আছে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশালাকারের ১টি মূর্তি যেটি কিনা উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। আগ্রহ থাকলে ঢু মেরে আসতে পারেন এখানেও। তাছাড়া সময় থাকলে কুয়াকাটার নামকরণ হয়েছে যে কুয়াটি থেকে সেটিও দেখে আসতে পারেন। কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের ৩৭ মণ ওজনের বুদ্ধি মূর্তিটিও দেখে আসা যাবে এ সুযোগেই। 

তাছাড়া কুয়াকাটা বীচ সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধের ভিতরে রাখা আছে উদ্ধার হওয়া ৭২ ফুট দীর্ঘ প্রাচীন একটি নৌকা। সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন এটিও। 

কোথায় খাবেন, কি খাবেন।    কুয়াকাটার স্পেশাল খাবার হলো মাছ এবং শুটকি। কুয়াকাটা যাবেন আর টাটকা, তাজা সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নেবেন না তা হয় নাকি !হোটেল/মোটেলগুলোর নিজস্ব রেষ্টুরেন্ট'তো আছেই। এছাড়া কুয়াকাটা বীচ রেষ্টুরেন্ট, তরঙ্গ রেষ্টুরেন্ট, কলাপাড়া হোটেল, হোটেল মান্নান, হোটেল বরিশাল, হোটেল খেপুপাড়া প্রভৃতি জায়গায় কম খরচে মানসম্মত স্থানীয় খাবার পাবেন। রূপচাঁদা, ইলিশ, লইট্টা, তুলার ডান্ডি, হাঙর, কাকড়া প্রভৃতি মাছ টেষ্ট করে দেখতে পারেন। এখানের চিংড়ী ভর্তারও বেশ নাম ডাক আছে। সঙ্গে নানা রকম শুটকি। তাছাড়া বীচ এলাকায় আছে মাছের নানা দোকান যাদের দামদর ঠিক করে মাছ পছন্দ করে দিলে তৎক্ষণাৎ তা কুটে বেছেফ্রাই করে দেয়। বীচে বসেই সমুদ্রের ঢেউ গুণতে গুণতে পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে উপভোগ করতে পারেন এ লোভনীয় মাছ ভাজা। আবার এদের কাছ থেকেই বড় মাছ কিনে সন্ধ্যার পর সবাই মিলে মেতে উঠতে পারেন বারবিকিউ পার্টিতে। 

শপিং এর খবরা খবর।    বীচ এলাকায় কিছু দোকানপাঠ থাকলেও সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটা করতে চাইলে যেতে পারেন রাখাইন মার্কেটে। পিনাট চকলেট, বাদাম, বার্মিজ আঁচার, রাখাইনদের বানানো তাঁতবস্ত্র, বিছানার চাদর, মুক্তার গহনাসহ নানা রকম পুথি এবং পাথরের মালা, শামুক-ঝিনুক, শুটকি মাছ প্রভৃতি কিনতে পারেন এখান থেকে। 

অন্যান্যঃ

সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় সূর্যের তাপ থাকে প্রখর। ফলে সানবার্ন হয়ে গায়ের রং কালো হয়ে যায়। তাই ব্যাগ গোছানোর শুরুতেই ভাল মানের সানস্ক্রিন লোশন, ক্যাপ এবং সানগ্লাস ঢুকিয়ে নিন। 

    যে কোন বিপদ/আপদ বা সমস্যায় টুরিষ্ট পুলিশের সাহায্য নিন। বীচেই টুরিষ্ট পুলিশ ক্যাম্প আছে। ০১৭৬৯৬৯০৭৪০ নম্বরে ফোন করলেও তারা পৌঁছে যাবে আপনার সহায়তায়। 

    ভাটার সময় সমুদ্রে নামবেন না। ভাটায় স্রোতের টানে পায়ের নীচ থেকে বালি সরে যায় ফলে দূর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া ভাটার সময় স্রোত থাকে বহির্মুখী ফলে অসাবধান হলে ভেসে যাওয়ার ভয়ও আছে। 

    কুয়াকাটা আমাদের গর্ব। সমুদ্রের করাল গ্রাসে ভেঙে সংকুচিত হয়ে পড়ছে এখানের বীচটি। ইতিমধ্যে বীচ এলাকার মনোমুগ্ধকর নারিকেল বাগানের অনেকাংশই ভেঙে গিয়েছে সমুদ্র গর্ভে। পাশর্¡বর্তী জনপদও এখন হুমকির মুখে। এই সর্বনাশা ভাঙ্গন রোধে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে এটাই প্রার্থনা।

    আর আমরা, পর্যটকেরা যত্রতত্র পলিথিন, প্লাষ্টিক বর্জ্য, ডাবের খোলা প্রভৃতি ফেলে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবো না এটাই কাম্য। কুয়াকাটার অনন্য সুন্দর নৈসর্গিক পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যে আমার, আপনার-আমাদের সকলের।