• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

উন্নয়নের রোল মডেল ঝালকাঠি জেলা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩  

‘ধান নদী খাল, এই তিনে বরিশাল’। নদী মাতৃক দক্ষিণ বাংলার বরিশাল বিভাগীয় শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী ঝালকাঠি জেলা। এ জেলার ব্রান্ডিং পণ্য পেয়ারা আর শীতলপাটি। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ঝালকাঠি পরিচিতি পাচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসন থেকে ‘পেয়ারা আর শীতলপাটি, এই নিয়ে ঝালকাঠি’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঝালকাঠি জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে বেশ কয়েকটি নদী। নদীগুলো শাখা শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বয়ে গেছে প্রত্যন্ত এলাকায়।
ভিশন-২০৪১ কে সামনে রেখে তথ্য প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে নেই উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আওতায় গড়ে উঠছে বেশকিছু মেগা প্রকল্পসহ বহু উন্নয়ন কার্যক্রম। জেলা এবং উপজেলা সদর থেকে অন্য জেলা এবং উপজেলার মধ্যবর্তী অংশে বড় বড় নদীতে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থাকে সুগম করেছে। সড়কগুলো প্রশস্তকরণের পাশাপাশি প্রতিটি সড়কেই ছোটবড় অসংখ্য ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে শহরের চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে উন্নয়ন বেশি দৃশ্যমান রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভিশন-২০২১ এবং ২০৪১ এর টার্গেট অর্জনের জন্য পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে এ জেলা অর্থনৈতিক জোনের আওতায় রয়েছে। যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপূর্ত, কৃষিসহ অবকাঠামো গড়ে তোলা ও সংস্কার এবং শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য ঝালকাঠিতে স্থাপিত বিসিক শিল্পনগরী ক্রমান্বয়ে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

জেলায় অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন খাতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে তিন হাজার ২১০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। ৭১৭.৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় প্রায় সাত লাখ মানুষের বসবাস। দুইটি পুরাতন পৌরসভার মধ্যে ঝালকাঠি পৌরসভা ১৮৭৫ সালে এবং নলছিটি পৌরসভা ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জেলার অন্য চারটি উপজেলা হচ্ছে ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া। ব্রিটিশ আমলে ধান লবণ ও পান সুপারিকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠিতে গড়ে উঠেছিল ব্যবসায়িক বন্দর।


শিল্পায়নের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে জেলা শহরতলীর ঢাপড় নামক স্থানে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিক শিল্প নগরী। ১১.৮ একর জায়গায় বিসিক শিল্প নগরীতে বিভিন্ন সাইজে নির্মিত ৭৯টি প্লটের বরাদ্দ হয়েছে ৪০টি। এতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ২০ কোটি টাকা এবং ২৫০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বিসিক শিল্প নগরীটি সড়ক ও নৌ পথের জন্য উপযোগী স্থানে হওয়ায় এখানে বিনিয়োগ করছে বড় বড় কোম্পানি।

প্রতিনিয়ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পাল্টে দিচ্ছে ঝালকাঠি জেলার পুরোনো চিত্রকে। জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়নে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। এই বিভাগে গত ১৪ বছরে ৩৬৪টি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ৭৩৮ কোটি আট লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে ছোট, মাঝারি ও মেগা টাইপের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের সড়ক পাকাকরণসহ ৪৫টি বড় আকারের তিন তলাবিশিষ্ট সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৪০টি মানসম্মত পাকা বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামীণ জনপদের হাট বাজার এলাকায় মহিলাদের জন্য বিপণন কেন্দ্র ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

তিন তলাবিশিষ্ট উপজেলা কৃষক সেন্টার, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কৃষক সেবা কেন্দ্র নির্মাণ ও ছয়টি পুকুর খনন হয়েছে। ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পোনা নদীর ওপর ১৮৯ মিটার ব্রিজ এবং কালিজিরা নদীর আমিরাবাদ অংশে ১৭৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া ১০ মিটার থেকে ১০০ মিটার আয়তনের বিভিন্ন সড়কে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সরকার জানান, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ওপরে কীর্তনখোলা ব্রিজের মতোই ঝালকাঠির নলছিটির মাটিভাঙ্গা ও ভৈরবপাশা অংশে ৭৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং পটুয়াখালী পায়রা নদীর নলছিটি অংশে খয়রাবাদ নদীর ওপর ১৩৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাটি পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ দুইটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঝালকাঠির উন্নয়ন আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।

ঝালকাঠি জেলার গণপূর্ত বিভাগের ২৮টি দৃশ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এ জন্য ৪০০ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যা থেকে বর্তমান হাসপাতালের পাশেই ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে আট তলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা সদর ও রাজাপুর নলছিটি কাঁঠালিয়া উপজেলায় একটি করে নির্মিত হচ্ছে মডেল মসজিদ। এছাড়া পাঁচ তলাবিশিষ্ট সমাজসেবা ভবন, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, সার্কিট হাউজের সম্প্রসারণসহ গণপূর্ত বিভাগের আরো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

ঝালকাঠিকে আরো নান্দনিক করার জন্য ঝালকাঠি পৌরসভা ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর সংলগ্ন সুগন্ধা নদীর পাড় ঘেঁষে চার কিলোমিটার রাস্তা, বনায়ন এবং শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বাসন্ডা নদী সংলগ্ন কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প থেকে নেছারাবাদ পর্যন্ত পশ্চিম তীর ঘেঁষে অনুরূপ সড়ক ও বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঝালকাঠি পৌরসভা। পৌরবাসীর বিনোদনের জন্য এ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। উন্নত দেশের ভিশন ২০৪১ এর পথে ঝালকাঠি জেলা এগিয়ে চলছে।

ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন জানান, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এরই ধারাবাহিকতায় তার ঝালকাঠিতেও উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঝালকাঠি জেলায় এখন উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং আরো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।