• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ছোঁয়াচে ‘মাম্পস’ রোগের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২৩  

লক্ষ্মীপুরে হঠাৎ করেই ভাইরাসঘটিত যন্ত্রণাদায়ক ও ছোঁয়াচে ‘মাম্পস’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে; সঙ্গে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াও। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মাম্পস রোগটি ছোঁয়াচে হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

এদিকে হাসপাতালটিতে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। জনবল সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালটিতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে কনসালটেন্ট ও  জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মেডিকেল অফিসারের ২২ পদের বিপরীতে  রয়েছে ১৩ জন। গাইনি, নাক, কান, গলা, চক্ষু, প্যাথলজিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৭টি কনসালটেন্ট পদ খালি দীর্ঘদিন থেকে। একইভাবে নার্স, আয়া, ব্রাদার, সুইপার, ঝাড়ুদার ও দারোয়ানসহ বিভিন্ন পদের সংখ্যা ১০৩টি। কিন্তু সেখানেও অর্ধেক লোক দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।

জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে শিশু শয্যা রয়েছে মাত্র ১৫টি। অথচ প্রতিদিনই শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ভর্তি থাকে ৮০ থেকে ১০০ জন। এতে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও কর্তব্যরত সেবিকাদের।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে শয্যা সংকট থাকায় একই বেডে ২ থেকে ৩ জন করে চিকিৎসা নিচ্ছে। এরপরও সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হয় অনেককে। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। টাকা না দিলে, মিলে না সেবা, এমন অভিযোগও করেন কেউ কেউ।

এ ছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এ জন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করলেন রোগীরা।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা আসা শাহনাজ আক্তার অভিযোগ করে জানান, হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা, বাজে দুর্গন্ধের কারণে ওয়াশরুমেও পর্যন্ত যাওয়া যায় না। এতে রোগীর পাশাপাশি শিশুর মায়েরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) চিকিৎসক ডা. মোরশেদ আলম হিরু জানান, গত ২০ দিনে ভাইরাসজনিত মাম্পস রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে সহস্রাধিক শিশু। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসজনিত মাম্পস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও। তবে মাম্পস রোগ ছোঁয়াছে হলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হোম আইসোলেশনে থাকলে সেরে যায় এ রোগ।

সদর হাসপাতালের তবে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক ডা. জহিরুল ইসলাম রনি জানান, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবল সংকট থাকার কারণে বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে তারা সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা প্রদানে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ১০০ শয্যার এই হাসপালে প্রতিদির গড়ে ভর্তি থাকেন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে ১১০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এরপরও তারা সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

তবে মাম্পস রোগে আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি বলে জানান তিনি।