• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বেকুটিয়া সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে: জুলাইয়ে উদ্বোধন

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২২  

দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত পিরোজপুরের অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর (বেকুটিয়া সেতু) নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মূল সেতুর নির্মাণ। আগামী জুনের মধ্যেই প্রকল্পের বাকি কাজটুকু শেষ হবে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এরপর উদ্বোধনের পালা। দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি চালু হলে বরিশালের সঙ্গে খুলনায় সড়কপথে হবে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ। এর ফলে গতি আসবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও।

পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের ফলে বরিশাল বিভাগের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ চালু হবে খুলনার। কচা নদীতে ফেরি পারাপারে সময় লাগে অন্তত ৪৫ মিনিট। বর্ষায় পানিপ্রবাহ ও স্রোত বেড়ে গেলে সময় লাগে আরও বেশি। এছাড়া জরাজীর্ণ ফেরি ও বৈরী আবহাওয়ার ভোগান্তি তো আছেই। তাই এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেতু নির্মাণের। জানা গেছে, ২০১৮ সালে বেকুটিয়া ফেরিঘাটের কাছে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পিরোজপুর পৌরসভা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে কচা নদীর কুমির মারা বেকুটিয়া পয়েন্টের ওপরে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটি চীন সরকারের সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে। ভার্চুয়ালি নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে মূল সেতুর কাজ। টোল প্লাজা নির্মাণের কাজও আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন।

এটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে সেভেনটিন ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২২ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা গ্র্যান্ড অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার। ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বক্স গার্ডার টাইপ এই সেতু। ৯টি স্প্যানের ৭টি ১২২ মিটার এবং ৭২ মিটার স্প্যান রয়েছে ২টি। জি টু জি পদ্ধতিতে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে সড়ক সংযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। স্থানীয়ভাবে প্রথমদিকে বেকুটিয়া সেতু বললেও এটিকে অস্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু হিসেবেও অবহিত করা হয়। প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে জুনে।

৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও বরিশাল সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম মাহমুদ সুমন বলেন, ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই মাসের মধ্যে সেতুর বাকি কাজও শেষ হয়ে যাবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সড়ক বিভাগের কাছে সেতুর হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে সরকারের তরফ থেকে দিনক্ষণ ঠিক করে উদ্বোধন করলেই পিরোজপুরবাসীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের পরিসমাপ্তি ঘটবে। পিরোজপুরবাসী উদ্বোধনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের প্রহর গুনছেন। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পিরোজপুরবাসীর প্রতিক্ষিত স্বপ্নের বেকুটিয়া ব্রিজ তথা ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। এটি চালু হলে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, বেনাপোল, খুলনা, মোংলা বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়কপথে বরিশাল হয়ে ঢাকা এবং বরগুনা, কুয়াকাটার পথে চলাচলকারীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। সেতুটি চালু হলে বরিশাল-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যাতায়াতে সময় অনেক কমবে এবং এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল থেকে পায়রা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। বেকুটিয়া ফেরিঘাটের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের শিকার থেকে মুক্তি পাবে পরিবহন, পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা। এই সেতু চালুর মাধ্যমে পিরোজপুরের মতো একটি বিচ্ছিন্ন পৌরসভা শিল্প-কলকারখানা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাবে বলে অনেকেই প্রত্যাশা করছেন।

তবে সেতু সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ জুলাইয়ের যে কোনো সময়ে ব্রিজ উদ্বোধন হতে পারে বলে মনে করছেন। কাজের অগ্রগতি দেখেও এমনটা অনুমান করা গেছে। এদিকে, পিরোজপুর পৌর মেয়র ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেক গত ৫ মে বেকুটিয়া ব্রিজ পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে সেতু পরিদর্শন শেষে পৌর মেয়র ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেক জানিয়েছেন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ জুন সেতুটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করবে বলে তাকে সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও জেলা শহর হিসেবে পিরোজপুরের অর্থনৈতিক ও নাগরিক জীবনযাত্রার মান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি তার।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেতুটি চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে। সম্ভাবনা দেখা দিবে এই অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠার।

পিরোজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ব্রিজের আশপাশে যেসব জমিজমা আছে সেগুলোতে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে পারে। এতে এই এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পিরোজরবাসী স্বপ্নের ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (বেকুটিয়া ব্রিজ) উদ্বোধনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় আছেন। তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন, এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে পিরোজপুরে এক নতুন যুগের সূচনা হবে। অর্থনৈতিক উন্নতির পথে পিছিয়ে থাকা পিরোজপুর দেশের অন্যান্য জেলার মতো উন্নত জেলায় পরিণত হবে এটাই তাদের একান্ত প্রত্যাশা। সব মিলিয়ে পিরোজপুরবাসীর কাছে এই সেতুটি নতুন এক স্বপ্নের নাম। প্রত্যাশার নাম। আর এই সেতু সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলেই পিরোজপুরবাসীর বিশ্বাস।