• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ, কোন্দলে অস্বস্তিতে বিএনপি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২২  

বরিশালে আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ। এর আগে বরিশাল জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মহাসমাবেশের সফলতা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে সফল মহাসমাবেশের বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি নেতারা। এদিকে মহাসমাবেশে কোনো ধরনের বাধা না দেওয়ার দাবি করেছে আওয়ামী লীগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর অশ্বিনী কুমার হল ও বিবির পুকুর ছেয়ে গেছে বিএনপির মহাসমাবেশের ব্যানার ও ফেস্টুনে। একই চিত্র বিএনপির সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে। এ ছাড়া বরিশালের প্রবেশদ্বার নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনালেও বিএনপির ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ছাড় দেওয়ায় বিভাগীয় মহাসমাবেশের প্রচারণা চালাতে পারছে বিএনপি। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মহাসমাবেশের সফলতা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি।

বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির গতকালের কর্মিসভায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সদ্য সাবেক বিএনপি নেতাদের কেউই আমন্ত্রণ পাননি। তবে কখনো দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে না থেকেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতাদের অনুসারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ও মহানগর বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘যেহেতু মহাসমাবেশ বিভাগীয় শহর বরিশালে হবে, সেহেতু মহানগর ও সদর উপজেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য জেলা থেকে নেতাকর্মীরা না আসতে পারলেও সদর উপজেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা গণজোয়ার করবেন—এমন প্রত্যাশা ছিল। তবে তাঁদের কার্যক্রমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মহাসমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তাঁরা ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে ব্যস্ত। ’

এদিকে বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে গত সোমবার সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া ইউনিয়নে কর্মিসভার আয়োজন করেন উপজেলা বিএনপির নেতারা। একপর্যায়ে মঞ্চে উঠে কর্মিসভার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম সেলিম। ওই ব্যানারে তাঁর নামের আগে উপজেলা শ্রমিক দল সভাপতি রফিকুল ইসলাম আকনের নাম থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মিসভা পণ্ড করে দেন সেলিম।  

উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সদস্য ফজলুল হক সরদার বলেন, ‘এই দ্বন্দ্ব অনেক আগের। বরিশাল জেলা বিএনপি নিজেদের মতো করে সদর উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। কমিটিতে জামায়াত থেকে আসা নুরুল আমিনকে আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব করা হয় যুবদল নেতা হত্যা মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম সেলিমকে। এরপর সদর উপজেলা বিএনপি দুই ভাগ হয়ে যায়। ’

সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি ১০টি ইউনিয়নে কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করে। একই সঙ্গে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় আগের কমিটি। এতে তিক্ততা আরো বাড়তে থাকে। ইউনিয়নগুলোতে কমিটি গঠনের আলোচনা করতে গেলে পদবঞ্চিতদের বাধার মুখে পড়েন জেলা ও সদর উপজেলার নেতারা। এর জেরে সম্প্রতি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে কমিটি গঠন নিয়ে কর্মিসভা করতে বারণ করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তবে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে পাঁচটি ইউনিয়নে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নে কমিটি গঠনের আলোচনা করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্যসচিব আক্তার হোসেন। চরবাড়ীয়া ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম সেলিমকে লাঞ্ছিত করেন জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন। এ ছাড়া চন্দ্রমোহন, শায়েস্তাবাদ ও রায়পাশা-করাপুরের কর্মিসভায় লাঞ্ছিত হন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা।

গতকাল দুপুরে বরিশাল নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সদর উপজেলা বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক আহ্বান করেন বিভাগীয় মহাসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির সহসভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে দাওয়াতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে নির্দেশ অমান্য করে বিলুপ্ত কমিটির কাউকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে নিজ অনুসারীদের আমন্ত্রণ জানান তাঁরা।

সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এনায়েত হোসেন জানান, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

চরবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম সাবু বলেন, মহাসমাবেশ নয়, বরং ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে ব্যস্ত জেলা ও উপজেলার নেতারা। আগামী ৬ নভেম্বর ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা হবে। তাঁদের এমন কর্মকাণ্ড মহাসমাবেশকে প্রভাবিত করবে।  

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির বৈঠকে কারা থাকবেন, তা নির্ধারণ করবে উপজেলা বিএনপি। এখানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ’

বরিশাল বিভাগীয় মহাসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির সহসভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নেই। উপজেলা বিএনপির মতবিনিময়ে তৃণমূল নেতাদের দাওয়াত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ’


বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘সমাবেশে বাধা দেওয়ার পক্ষে আমরা কখনোই ছিলাম না। শহরের চিত্র দেখলেই আপনারা সেটা বুঝতে পারবেন। তবে সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় বরিশাল বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষ বাধাতে পারেন। ’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘সমাবেশে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। ’