• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

নাটোরে সেবার বঙ্গবন্ধুর কর্মব্যস্ত সফর

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খাদ্য বিভাগের কর্মচারীদের সংগৃহীত খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য গুদামজাত করার আগে তার নিশ্চয়তা বিধানের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ না মানার পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ারও করে দেন। প্রধানমন্ত্রী সকালে অনির্ধারিতভাবে নাটোর শহরের পাশে ধানক্ষেত, খাদ্য সংরক্ষণ, পাট ও মৎস্য খামার স্বচক্ষে দেখতে বের হন এবং দুই ঘণ্টা কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। তিনি ধানক্ষেতে চাষিদের ফসল কাটা দেখেন এবং তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।

প্রাতরাশ সেরে বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবন থেকে তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা ও স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হন। প্রথমে তিনি গাড়ি থামিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ও ধানক্ষেতে কর্মরত চাষিদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ করেন। তিনি যেখানেই যান সর্বস্তরের মানুষ হর্ষধ্বনি ও জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, তোমার নেতা আমার নেতা বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু—স্লোগানের মধ্য দিয়ে তাঁকে আন্তরিক অভিবাদন জানান।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ নভেম্বর ১৯৭৩

আকস্মিক মাঠ পরিদর্শন

নাটোর শহরে পৌঁছে বঙ্গবন্ধু আকস্মিকভাবে স্থানীয় একটি শস্য সংরক্ষণ গুদাম পরিদর্শন করেন। বর্তমান খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে সংগৃহীত খাদ্যশস্য সেখানে কীভাবে সংরক্ষিত করা হচ্ছে, তা স্বচক্ষে দেখা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। একটি বস্তা খুলে প্রধানমন্ত্রী তার মধ্যে ভেজা ধান দেখতে পান। এরপর তিনি সংরক্ষণ করার আগে ভালো করে শস্য শুকিয়ে নেওয়ার বিষয়টি শিখে নেওয়ার কথা বলেন। সে জন্য স্থানীয় কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ অমান্য করার পরিণাম সম্পর্কে তিনি হুঁশিয়ার করে দেন। স্থানীয়ভাবে ধান সংগ্রহের সাংগঠনিক বন্দোবস্ত দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্থানীয় কর্মচারীদের তিনি ধান সংগ্রহ অভিযানের গতি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

দৈনিক বাংলা, ২৬ নভেম্বর ১৯৭৩ স্কুল-কলেজ পরিদর্শন

প্রধানমন্ত্রী সিরাজউদ্দৌলা কলেজে গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে ছাত্ররা তাঁকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন এবং কলেজকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। তিনি শহীদ রিয়াজুন্নবী হাইস্কুল পরিদর্শন করেন এবং স্কুলটির জন্য দুই হাজার টাকা এককালীন সাহায্য ঘোষণা করেন। শহরের উপকণ্ঠে মৎস্য খামারে মাছ চাষের অগ্রগতি দেখে বঙ্গবন্ধু সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এই খামারের তিনটি পুকুরের একটি থেকে মাছের পোনা ধরে সংখ্যা যাচাই করার নির্দেশ দেন। খামার কর্মচারীরা জাল দিয়ে মাছ ধরে তাঁকে দেখান। খামারের খোলা প্রাঙ্গণে নারকেল গাছ ও শাকসবজি চাষ দেখে বঙ্গবন্ধু খুশি হন। শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় পথে পাটের মূল্য স্থিতিশীলকরণ সংস্থার পাটগুদামের কাছে খোলা মাঠে পাট পড়ে থাকার দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু নাটোর-রাজশাহী সড়কে এভাবে খোলা অবস্থায় অগোছালো পাট রাখতে দেখে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গাড়ি থেকে নেমে তিনি সোজা পাটগুদামে গিয়ে জেলা কর্মচারীদের এসব পাট সংরক্ষণ করার জন্য আরেকটি শেড তৈরি করতে টিন জোগাড় করার কথা বলেন।

ডেইলি অবজারভার, ২৬ নভেম্বর ১৯৭৩ জাতির পিতাকে কাছে পেয়ে অভিভূত কার্তিক

জাতির পিতাকে এত কাছাকাছি পেয়ে আনন্দে নির্বাক হয়ে পড়ে কার্তিক নামের ১৮ বছরের এক কিশোর। সকালে নাটোরের কাছে একটি ধানক্ষেতে মনের আনন্দে ধান কাটছিল সে। নিজের কাজে নিমগ্ন ছিল। কার্তিকের বাবা সুধীর মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। এ বছর আমন ধানের ফসল প্রচুর। তাই কার্তিক কাস্তে দিয়ে মনের আনন্দে ধান কাটছিল। পরের বছরের জন্য তার পরিবারের কাছে এই ধানই একমাত্র ভরসা। হঠাৎ কার্তিক তার পেছনে পদশব্দে সচকিত হয়ে তাকিয়ে দেখে আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়লো। সে লক্ষ করে যে  তার কাছে প্রাণাধিক প্রিয় বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। তরুণ কার্তিক জাতির পিতাকে এত কাছাকাছি পেয়ে আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বঙ্গবন্ধু কার্তিককে কাছে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন তার পরিবারের খোঁজ-খবর। স্নেহের আতিশয্যে অভিভূত কার্তিক তখন জানায় কীভাবে হানাদাররা তার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।