• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

পাচার করা অর্থ ফেরাতে দুদককে সহযোগিতা করবে এফবিআই

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদককে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। এজন্য এফবিআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুদকের কর্মকর্তাদের যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হবে। এই টিম পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা গেলে পাচার করা অর্থে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথ তদন্তের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) থেকে শনিবার (২১ মে) পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। হোটেল র‌্যাডিসনে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় দুদকের সহকারী পরিচালক ও মহাপরিচালক পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। ‘প্রটেক্টিং পাবলিক ইন্টিগ্রিটি: ইনভেস্টিগেটিং অ্যান্ড প্রসিকিউটিং কমপ্লেক্স করাপশন কেস’ শিরোনামের এই কর্মশালায় এফবিআইয়ের রেসিডেন্ট লিগ্যাল অ্যাডভাইজার সারাহ এডওয়ার্ড, এফবিআইয়ের সুপারভাইজারি স্পেশাল এজেন্ট জন পেই, স্পেশাল এজেন্ট শ্যানন বেইনিক, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর ফ্রড সেকশনের প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি চিফ মার্ক সিপোলেট্টি, ক্রিমিনাল ডিভিশনের ইন্টারন্যাশন অ্যাফেয়ার্স অফিসার টেরি এটন ও ফ্রিড শেফিল্ডসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অংশ নেন।

দুদক সূত্র জানায়, তদন্ত ও অনুসন্ধান কাজে কমপ্লেক্স করাপশন কেসের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এই কর্মশালা আয়োজন করেছিল। মূলত মানি লন্ডারিং মামলাগুলোর ক্ষেত্রে কিভাবে তদন্ত বা অনুসন্ধান পর্যায়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় সেসব কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া এক দুদক কর্মকর্তা জানান, এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা বিদেশে অর্থ পাচারের মামলাগুলো এফবিআইয়ের সঙ্গে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করে। বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবৈধভাবে অর্থ পাচার করেছে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে এফবিআই সহযোগিতা করতে পারবে। একইসঙ্গে সেসব অর্থ ফ্রিজ করে তথ্য পাঠানোর পাশাপাশি ফেরত পাঠাতেও সহযোগিতা করতে পারবে।

দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে কানাডায়। এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথ তদন্ত করতে পারলে কানাডায় যারা অবৈধভাবে অর্থ পাচার করেছেন তাদের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এছাড়া কানাডার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও পাচার করা অর্থের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এফবিআই এজেন্টরা যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করে থাকে, তাদের পক্ষে যে কোনও দেশেই পাচার করা অর্থের বিষয়ে তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পাচার করা এসব অর্থ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যায়। গত ২ মে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার পাচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছয় লাখ ছয় হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৪ সালেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৯১১ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। হুন্ডি বা হাওলার পাশাপাশি আমদানি-রফতানিতে আন্ডার ভয়েস এবং ওভার ভয়েসের মাধ্যমেই মূলত এসব অর্থ পাচার করা হয়।

দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। যাদের বিরুদ্ধে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আন্ডার ভয়েস এবং ওভার ভয়েস করার অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে মানি লন্ডারিং মামলাগুলোর বিষয়ে কাজ করতে পারলে অর্থ পাচার কিছুটা কমে আসতে পারে।