• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

শেষ হচ্ছে জনশুমারি, জুলাইয়ে জানা যাবে দেশের মোট জনসংখ্যা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২  

সারাদেশে গত ১৫ জুন একযোগে শুরু হয় জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম। গত ২১ জুন জনশুমারির শেষদিন ছিল। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলায় বন্যা শুরু হওয়ায় এসব জেলায় জনশুমারি কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হয়। এ অবস্থায় এসব এলাকায় শুমারির মেয়াদ সাতদিন বাড়ানো হয়। ফলে মঙ্গলবার (২৮ জুন) পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনা জেলায় চলছে জনশুমারি। এর মাধ্যমে শেষ হচ্ছে দীর্ঘ ১১ বছর পর অনুষ্ঠিত কাঙ্ক্ষিত জনশুমারি।

এবারই প্রথম সারাদেশে ডিজিটাল জনশুমারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুমারি শেষ হলে জুলাই মাসে জানা যাবে দেশের মোট জনসংখ্যার হিসাব। এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পুরোদমে কাজ করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, এক সপ্তাহ সময় বৃদ্ধির পর সিলেট বিভাগেও জনশুমারি শেষ পর্যায়ে। ফলে এখন জানা যাবে দেশের মানুষ কত? দেশে গৃহ কত? এছাড়া কতজন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন এবং কতজন বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে অবস্থান করেন- সব তথ্য জানা যাবে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন জানান, দেশের মানুষের সঠিক তথ্য দিতে আমরা সবাই সচেষ্ট ছিলাম। সবাই একযোগে কাজ করেছি। যেখানে গণনাকারী যাননি, আমি নিজে চেক করে সেখানে গণনাকারী পাঠিয়েছি। আমাদের কাজ দেশের মানুষের সঠিক হিসাব দেওয়া। অনেকেই বলেন আমার বাসায় গেলো না ওর বাসায় গেলো? আমাদের কাজ কিন্তু মানুষের সংখ্যার হিসাব বের করা।

তিনি বলেন, কাজের কারণে অনেকেই (বাড়িতে) থাকতে পারেননি। তখন আমরা অন্য খানা থেকে তথ্য নিয়েছি। আমাদের গণনাকারী একাধিকবার গেছেন। এছাড়া আমরা কিন্তু হেল্প ডেস্ক চালু করেছি। যাদের তথ্য নেওয়া হয়নি তারা এখানে তথ্য দিতে পারেন। সব মিলিয়ে একটা যুগোপযোগী জনশুমারি দিতে আমরা কোনো ত্রুটি রাখিনি।

এবারের শুমারিতে ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেট ব্যবহার করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউয়িং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সহজে ও সুনির্দিষ্টভাবে শুমারির গণনা এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং কোনো খানা গণনা থেকে বাদ না পড়া বা একাধিকবার গণনা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও গুগল ম্যাপ সমন্বয় করে ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ম্যাপ ব্যবহার করে সাময়িকভাবে নিযুক্ত গণনাকারীরা প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার নির্ধারিত গণনা এলাকার প্রতিটি বাসগৃহ, খানা ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেন।

ডিজিটাল এ শুমারি বাস্তবায়নে সারাদেশে একযোগে তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার হয় তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট। মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাবলেটসমূহ মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট (এমডিএম) সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া মাঠপর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্থাপিত বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের (বিডিসিসিএল) টায়ার আইভি সিকিউরিটি সমৃদ্ধ ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা হয়। মাঠপর্যায় থেকে বিডিসিসিএল হয়ে বিবিএস সার্ভারে আসার পূর্ব পর্যন্ত সংগৃহীত সব তথ্য-উপাত্ত গোপন অবস্থায় থাকবে, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এছাড়া একটি ওয়েবভিত্তিক ইন্টিগ্রেটেড সেনসাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শুমারির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম রিয়েল টাইম মনিটর করা হয়। সবমিলিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সহজতর হয়। একইভাবে এ প্রক্রিয়ায় স্বল্পতম সময়ে শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ সম্ভব হবে।

দেশে ১০ বছরে গড়ে বাড়ে দুই কোটি মানুষ
পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী আদমশুমারিকে ‘জনশুমারি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। জনশুমারি ও গৃহগণনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পরিচালিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপকভিত্তিক পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। দ্বিতীয় আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে, সেসময় মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ।

এরপর ১০ বছর পর পর দেশের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা যথাক্রমে ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে ১১ কোটি ১৫ লাখ, ২০০১ সালে ১৩ কোটি ৫ লাখ ও ২০১১ সালে সর্বশেষ ১৪ কোটি ৯৮ লাখ জনসংখ্যা ছিল। গত শুমারিগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতি ১০ বছরে গড়ে প্রায় দুই কোটি বেড়েছে। এবারও এমনটাই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ বাড়তে পারে।

এবারের জনশুমারি শেষে দেশের মানুষের সংখ্যা কত হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটা এখন বলা যাবে না। দুই একদিনের মধ্যে একটা প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এই প্রতিবেদন আমাদের সরকার প্রধানকে (প্রধানমন্ত্রী) দেখানো হবে। তিনি আমার বস, তিনি যেদিন নির্দেশ দেবেন সেই দিন শুমারির তথ্য প্রকাশ করা হবে। আপনাদের (সাংবাদিক) ডেকে জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করবো। এবার ডিজিটাল জনশুমারি হয়েছে, আশা করছি দ্রুত সময়ে তথ্য দেবো।