• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

রংতুলির ছোঁয়ায় পূর্ণতা পাচ্ছে দেবী দুর্গার রূপ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২  

আর কিছুদিন পরই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। এখন চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। মাটির প্রলেপের ওপর রংতুলির ছোঁয়ায় পূর্ণতা পাচ্ছেন মা দুর্গা। দশভুজা নিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশে আবারো মর্ত্যে আগমন ঘটবে মহামায়ার।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) মহালয়া, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। আগামী ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।

দুর্গাপূজা সামনে রেখে চলছে উৎসবের আমেজ। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আগের মতো বিশাল পরিসরে উদযাপনের প্রত্যাশা ভক্তদের। পূজা উদযাপনে ভক্তকুলে দেখা মিলেছে মহাব্যস্ততার।

দুর্গাপূজার পাঁচ দিন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পরিচিত। রাজধানীজুড়েই পূজা হয়। তবে সবচেয়ে জমজমাট পূজা উদযাপন করা হয় রাজধানীর পুরান ঢাকাকে কেন্দ্র করে। সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, নর্থব্রুক হল রোড, শ্রী শ্রী কালী মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় একমাস ধরে নিরলসভাবে প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন শিল্পীরা।

বাংলাবাজারের মৃৎশিল্পী বলাই পাল জানান, পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলা থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন তিনি। তার পূর্বপুরুষরাও এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চুক্তি ও মজুরি দুভাবেই প্রতিমা তৈরি করেন। তবে মজুরির চেয়ে প্রেম ও ভক্তির বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পায়। প্রতিমা বানাতে প্রয়োজন হয় পরিমাণ মতো কাঠ, বাঁশ, তারকাটা, রশি, খড়কুটো, এঁটেল ও বেলে মাটি, রং, ধুতি, চুল ও হাতিয়ার। আবার শুধু খড়কুটো ও মাটি দিয়েও করা যায়। সর্বনিম্ন ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার প্রতিমা তৈরি করেন তিনি। তবে উচ্চতা ও মানভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে।

এ বছর ২০টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন বলাই পাল। এর মধ্যে ১২টির কাজ করেছেন বিভিন্ন মন্দিরে। চাহিদা অনুযায়ী ক্যাটালগ দেখে, আবার কখনো নিজের মতো করে প্রতিমাগুলো তৈরি করেন। ক্যাটালগ দেখে করতে পরিশ্রম একটু বেশি হয়। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে এখন চলছে রং-তুলির কাজ।

তবে প্রতিমা তৈরিতে ব্যাপকভাবে কারিগর সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান মৃৎশিল্পে আন্তর্জাতিক পদক পাওয়া শাঁখারীবাজারের প্রাচীন প্রতিমাশিল্পী হরিপদ পাল। তিনি বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজে এখন খরচ বেশি, মুনাফা কম। এ শিল্পে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ একেবারেই নেই। ফলে কারিগর সংকট অনেক বেশি। আবার প্রতিমা তৈরির উপকরণগুলোর দাম গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ। সেই অনুযায়ী মূল্যায়ন নেই। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় ঝুঁকছে কম।

এদিকে পূজাকে কেন্দ্র করে জমজমাট শাঁখারিবাজার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাওয়া যায় এখানে। পূজা উপলক্ষে শাঁখা, সিঁদুর ও শাড়ি কিনতে আসা গৃহিণী অনিমা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা। এই সময়টায় পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটে।

এবার ঢাকা মহানগরে ২৪১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগর দক্ষিণে ১৫৪টি ও উত্তরে ৮৭টি। সবচেয়ে বেশি পূজা হবে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানায়। এখানে মোট পূজার সংখ্যা ২৫টি।

রাজধানীতে পূজা উদযাপনের সার্বিক বিষয়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, মহানগরে প্রতিটি পূজা মন্দিরে প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। কয়েকটি মন্দিরে সামান্য কাজ বাকি আছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে।

চলতি বছর শাঁখারীবাজারে ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির মধ্য দিয়ে পূজার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতিমা তৈরি শেষে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন পুরোহিতরা।

শাঁখারীবাজারের পুরোহিত সুকুমার চক্রবর্তী জানান, পূজা করতে মোট ১০০টি উপকরণ প্রয়োজন পড়ে। শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজার থেকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও শাঁখারীবাজার থেকে এসব উপকরণ জোগাড় করেন।