• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে পিছিয়ে না যায় সে ব্যবস্থা নিচ্ছি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২২  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য তার সরকার নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস এবং যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন) আমাদের জন্য অনেক বাধা তৈরি করেছে। আমরা এ সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন ছিলাম। তবে আমাদের আরও সতর্ক এবং সাশ্রয়ী হতে হবে। এছাড়া শিক্ষা প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে পিছিয়ে না যায় সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সোমবার (২৮ নভেম্বর) তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে (পিএমও) মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা স্ব-স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখের বেশি অংশ নেয়। মোট তিন হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রায় ১৬ লাখ।

শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করা হচ্ছে

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার নতুন প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করে সময়োপযোগী করে প্রস্তুত করতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি পরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করে চলেছে, যাতে তারা আধুনিক সমাজে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

তিনি বলেন, তরুণরা বাংলাদেশের শক্তি। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য তাদের যোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে তা ডিজিটালাইজড ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আবির্ভাবের ফলে দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তার সরকার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিশুদের শৈশব থেকেই এমনভাবে শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনার পর থেকে পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারা দেশে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে, যেখানে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ প্রচুর পরিমাণে আসবে এবং বিপুল দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, তিনি বাংলাদেশিদের অদক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে পাঠানোর পক্ষপাতী নন। বরং যোগ্য হিসেবে পাঠানোর পক্ষে।

তিনি বলেন, ‘তাই, আমরা শিক্ষাকে বহুমাত্রিক (শিক্ষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং বৃত্তিমূলক মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত করে) করছি, যাতে আমাদের দেশ আধুনিক শিক্ষার সুবিধা কাজে লাগাতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, যা তাদের ভাগ্য গড়তে সাহায্য করবে। কারণ, সবাই বিএ এবং এমএ ডিগ্রি নিয়ে বড় পদে যাবে না।

কেউ যেন পরীক্ষায় ফেল না করে সে জন্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান এবং অন্যদের পরের বারের জন্য শুভকামনা জানান।

বিখ্যাত স্কুলই ভালো, এই মানসিকতা বদলাতে হবে

প্রধানমন্ত্রী সন্তানরা কোনও বিখ্যাত স্কুলে না পড়লে ভালো শিক্ষা পাবে না, অভিভাবকদের এমন মানসিকতা পরিবর্তন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যদিও অতীতে দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিজ্ঞানী, সিভিল সার্ভিস অফিসার এবং নেতারা জেলা স্কুল থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

দেশের বহু জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, নেতা, পাকিস্তান আমলের বহু সিএসপি অফিসার জেলা স্কুলগুলো থেকে পাস করেই হয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন কারও কারও ধারণা এমন যে মাত্র কয়েকটা স্কুল ভালো। ওখানে না পড়লে ভালো পড়া হয় না। এই যে মানসিকতা এটাও বদলাতে হবে।’

এসএসসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রত্যেকটা স্কুলেই যেন ভালোভাবে পড়াশোনা হয় সেটা দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘সুতরাং, কোনও বিদ্যালয়কে অবহেলা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ভালো স্কুলগুলোর ভালো ভালো শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে ভালো ফল করাটা সহজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সাফল্যের কৃতিত্ব তাদের (শিক্ষক বা বিদ্যালয়) দেওয়া উচিত, যারা তাদের মধ্যম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তুলতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সমর্থন দেওয়া এবং পুরস্কৃত করা উচিত।’

শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন শিক্ষা ছাড়া কোনও দেশ দারিদ্র্য দূর করতে পারে না। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে এর শিক্ষকদের সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়ে দেন। তিনি সংবিধানেও শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক এবং নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন, যেমন শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্য বই প্রদান, উপবৃত্তি ও বৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে স্কুল ফিডিং প্রবর্তন এবং শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন স্কুল, কলেজ ছাড়াও সাধারণ, চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।

এসএসসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা থেকে পিছিয়ে পড়বো না

তিনি বলেন, আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি এবং যথাসময়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর রয়েছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। সুতরাং, আমাদের একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে যে আমরা কখনোই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা থেকে পিছিয়ে পড়বো না।

তার সরকার জাতির পিতার করে দেওয়া ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের আলোকে একটি যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নে সক্ষম হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০০৯-এ সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত সরকারে আছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি সবকিছু ভালোই এগোচ্ছিল। কিন্তু এই করোনাভাইরাস অতিমারির ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, ছেলেমেয়েদের স্কুল ও লেখাপড়া বন্ধ, ঘরের মধ্যে পড়ে থাকার মতো একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ ছিল। এটা আমাদের শিশুদের জন্য খুবই একটা ক্ষতির সময়। তারপরও অনলাইনে হলেও শিশুরা লেখাপড়াটা যাতে চালিয়ে যেতে পারে, সে সময়েও আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে কিছু পড়াশোনার সুযোগ হয়েছে। অনেক উন্নত দেশ থেকেও বাংলাদেশ সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে। পাশাপাশি আজ শিক্ষার হারও ৭৫ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি।