• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

পিরোজপুর সংবাদ

হিমাগারে মজুত লাখ লাখ ডিম, সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হচ্ছে দাম

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৪  

হিমাগারে মজুত করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে ডিমের দাম। ডিমের পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও গত কয়েকদিনে হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতা। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানি কম হওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। আর বাজার নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক আশ্বাস ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ডিমের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। অথচ কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হচ্ছে দাম। হালিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। শহরের বিসিক শিল্প নগরীর ভেতরেই মাদারীপুর হিমাগার। পর্যাপ্ত জায়গা খালি থাকায় মার্চ মাস থেকে ডিম মজুত শুরু করে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ উঠেছে, শহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কাজী দুই ব্যবসায়ীই পুরো ডিমের বাজার অস্থির করে রেখেছেন। হিমাগারে ডিম মজুত রেখে সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছেন দাম। হঠাৎ ডিমের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতা, বিপাকে খুচরা ব্যবসায়ীরাও।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ডিমের সংকট থাকায় বেড়েছে দাম। আর জেলায় কোনো ফার্ম না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, রমজান মাসে ডিমের দাম কম থাকায়, তখন থেকেই মজুত শুরু করে ব্যবসায়ীরা। পরে সুবিধা মতো আস্তে আস্তে বাজারে ছাড়ে ডিম।

মাদারীপুর হিমাগারে বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ডিম মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এক হালি ফার্মের ডিম পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। যা খুচরা পর্যায়ে পৌঁছে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দেখা নেই বাজারে।

মো. শাহজালাল নামে এক ক্রেতা বলেন, হঠাৎ ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতারা বলেন বাজারে ডিম নেই। সাধারণ ক্রেতারা এখন মহাবিপদে পড়েছি। মাছ-মাংসের দাম বেশি, এখন ডিমেরও বেশি দাম হলে না খেয়ে থাকা লাগবে। এই ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া উচিৎ।

আরেক ক্রেতা মো. মাইনুল হাসান বলেন, ডিমের বাজার চড়া। হঠাৎ ডিমের হালি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে ডিম কিনে খাবো।

শহরের পুরাণবাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট চলছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ডিম মজুত রেখেছে। ক্রেতাদের সাথে ডিমের দাম নিয়ে প্রতিনিয়তই ঝগড়া হচ্ছে। আমরাও চাই ডিমের দাম স্বাভাবিক থাকুক।

আরেক খুচরা ব্যবসায়ী কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চাহিদা মতো ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিম পাওয়া খুবই কষ্ট, দুই থেকে তিনদিন পর পর এক গাড়ি ডিম আসে। তাতে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। মাদারীপুর জেলায় প্রতিদিন দেড় লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে।

ফড়িয়া ডিম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুর জেলার কোথাও ডিমের ফার্ম নেই। এই ডিম অন্য জেলা থেকে কিনে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে খরচ বেশি ও দামও বেশি পড়ে যায়। বর্তমানে ডিমের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তাই একটু দাম বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত ডিম পাওয়া গেলে, এই সংকট থাকবে না।

মাদারীপুর কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল করিম বলেন, দুই ব্যবসায়ীর প্রায় ৬ লাখ ডিম হিমাগারে মজুত রয়েছে। তারা মার্চ মাস থেকে ডিম মজুত রেখেছেন। তারা সুবিধা মতো সময়ে বাজারে ডিম ছাড়েন। ডিম তিন থেকে সাড়ে তিন মাস হিমাগারে ভালো থাকে। এর বেশি দিন হলে ডিম পঁচে যাবার আশঙ্কাও থাকে।

মাদারীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সুবোদ কুমার দাস বলেন, মাদারীপুর জেলায় প্রতিদিন দেড় লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে। গরমের সময় ডিম বেশিদিন হিমাগারে রাখা ঠিক নয়। এতে ডিমের গুনাগুণ নষ্ট হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফরের মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, মাদারীপুরে ডিম মজুত করে রাখার অভিযোগ প্রমাণ পেলে ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। অবৈধভাবে মজুত রেখে ডিমের দাম বাড়ানোটা অযৌক্তিক। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।