• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

‘আপনার নম্বরে উপবৃত্তির টাকা যাবে পাসওয়ার্ড দিন’

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২  

করোনাকালে অনুদান দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মোবাইলে বার্তা পাঠায় একটি প্রতারক চক্র। প্রথমে শিক্ষাবোর্ডের নামে টার্গেটের মোবাইলে বার্তা দিয়ে যোগাযোগের নম্বর হিসেবে চক্রের সদস্যের নম্বর দেওয়া হয়। প্রতারকেরা বার্তায় শিক্ষাবোর্ডের নামে ভুয়া নম্বর দিয়ে ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। সরলমনা শিক্ষার্থী-অভিভাবক তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অর্ধকোটি টাকা খুইয়েছেন।

এমন অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা হলেন- মো. আশিকুর রহমান (২৫), মো. সাইফুল সর্দার (৩০) ও মোক্তার হোসেন (৩৪)।

বুধবার (২৫ মে) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।

তিনি বলেন, সম্প্রতি উপবৃত্তি দেওয়ার নামে কয়েকটি চক্রের প্রতারণাকাণ্ডে অত্যন্ত উৎকণ্ঠায় রয়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। প্রতারকেরা বার্তা দিয়ে শিক্ষাবোর্ডের নামে ভুয়া নম্বর দিয়ে তাতে যোগাযোগ করতে বলে। কোনো সরলমনা শিক্ষার্থী-অভিভাবক যদি তাদের ফাঁদে পা দেন, তাকে মোটা অংকের টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হতে হচ্ছে।

এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা আইনে মামলা হয়। সিআইডির এলআইসির একটি চৌকস দল প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্র শনাক্ত ও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে। এরই ধারাবাহিকতায় একাধিক প্রতারণা চক্র শনাক্ত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতারক চক্র সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. আশিকুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তারা গত ২-৩ বছর ধরে উপবৃত্তির নামে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বরে বার্তা দিয়ে প্রতারণা করে আসছি। প্রথমে শিক্ষাবোর্ডের নামে টার্গেটের মোবাইল নম্বরে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগের নম্বর হিসেবে চক্রের সদস্যের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়।

করোনা পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হলেও করোনাকালে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়। তারা এই বন্ধের সুযোগ নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন অংকের অর্ হাতিয়ে নেয়। চক্রটি সাধারণত ৩-৪ সদস্যের হয়ে থাকে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের কাজগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়।

যেভাবে প্রতারণা শুরু

চক্রের প্রথম সদস্য টাকা পাঠানোর কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে অবস্থান নেয়। কৌশলে তারা গ্রাহকের লেনদেনের খাতার ছবি তুলে নেয়। ওই ছবি ইমো/মেসেঞ্জার/হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে প্রথম ব্যক্তির কাজ শেষ হয়।

দ্বিতীয় ব্যক্তি কাজ পিন কোড সংগ্রহ করা। প্রতারকেরা শিক্ষার্থী-অভিভাকদের নম্বরে বার্তা পাঠানোর পর ফোন করে কথা বলার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। একপর্যায়ে উপবৃত্তির যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয় তার সঙ্গে পিন কোডটি যোগ/বিয়োগ করে বলতে বলা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা তাদের ফাঁদে পড়ে পিন কোডটি যোগ/বিয়োগ করে চক্রটিকে তথ্য দেয়।

চক্রের তৃতীয় সদস্যরা প্রাপ্ত পিন কোডটি অসংখ্য ব্যাংকিং অ্যাপ সংবলিত অপর একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের অ্যাপে লগইন করলে ভেরিফিকেশন কোড যায় শিক্ষার্থী/অভিভাকদের নম্বরে। তখন দ্বিতীয় সদস্য কৌশলে পাসওয়ার্ডটি শিক্ষার্থী/অভিভাকদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়।

যখন শিক্ষার্থী/অভিভাকদের নম্বরে কোথাও থেকে ক্যাশ ইন হয়, তাৎক্ষণিকভাবে দলের তৃতীয় সদস্য ওই টাকা তাদের দলনেতার কাছে রেজিস্ট্রেশন করা নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে চক্রের দলনেতা প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত টাকাগুলো বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত তাদের পরিচিতদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

সিআইডির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, দলনেতা ওই টাকাগুলো ক্যাশ আউট করে প্রত্যেক সদস্যকে বিভিন্ন হারে বণ্টন করে দেয়। মূলত দলনেতাই ভুয়া এনআইডিতে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ডগুলো সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের সরবরাহ করে।