• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ভুয়া নাম-ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করে ২৭ বছর পালিয়ে ছিলেন ফাঁসির আসামি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২২  

গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিল্লাল হোসেন বিলু (৩৫) হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১। দীর্ঘ ২৭ বছর পলাতক থাকার পর নরসিংদী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৬ আগস্ট) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার মৈশাদী এলাকায় র‍্যাব-১ এর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, বিল্লাল হোসেন বিলু ও আসামি মো. আব্দুল আজিজ পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন। বিল্লাল সে সময়ের স্থানীয় খলাপাড়া এলাকায় ন্যাশনাল জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

ঘটনার দিন ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে রুস্তম আলী বিল্লাল হোসেনকে কথা আছে বলে বিল্লাল ও জাকারিয়াকে ঈশ্বরপুর বাজারে একটি দোকানের উত্তর পাশে ডেকে আনেন।

আব্দুল আজিজসহ আরও কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অপেক্ষায় ছিলেন। বিল্লাল ও জাকারিয়ার সঙ্গে কাদির ও তার ভাই ছাদিরে সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির একপর‍্যায়ে আসামি ফালান তার হাতে থাকা কুড়াল দিয়ে বিল্লালের মাথায় আঘাত করেন।

এতে রক্তাক্ত হয়ে বিল্লাল ঈশ্বরপুর বাজারের দক্ষিণ দিকে রাস্তায় উঠলে আরও কয়েকজন তাকে ধরে কোপাতে থাকেন। এতে তিনি রাস্তার দক্ষিণ পাশের জোতিন্দ্র বাবুর জমিতে পড়ে যান। এসময় আব্দুল আজিজ তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিল্লালকে গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

পরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহের সুরতহাল করেন। গাজীপুর সদর হাসপাতালে ভুক্তভোগীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এরপর ৭ ডিসেম্বর ভিকটিমের ভাই মো. জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় ঘটনায় জড়িত আসামিসহ ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, আজিজ, ওসমান, ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলীসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার পর থেকে আব্দুল আজিজ আত্মগোপনে চলে যান। পরে অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম আদালত, গাজীপুর বিচারকার্য পরিচালনা করেন। এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় থাকার অপরাধে ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ আব্দুল আজিজসহ সর্বমোট ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন।

এ ঘটনার পর থেকে আসামি আব্দুল আজিজ দীর্ঘ ২৭ বছর পলাতক ছিলেন। অন্য আট আসামি বর্তমানে জেল হাজতে আটক আছেন এবং ১ আসামি মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও অপর তিন জন আসামি যথাক্রমে ফালান, আলম এবং মানিক পলাতক রয়েছে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেফতার এড়ানোর জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে তিনি নিজেকে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘটনার পর (১৯৯৫ সালে) থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে আব্দুল আজিজ এনআইডিতে নিজের ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারন করে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার মৈশাদী গ্রামে বসবাস শুরু করেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য পেশা পরিবর্তন করে তরকারির ব্যবসা করে আসছিলেন।

আসামি আব্দুল আজিজ নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য আব্দুল আজিজ মোল্লা নাম দিয়ে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করেন। এছাড়া মৈশাদী, শিবপুর, নরসিংদী এ ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন।

গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ র‍্যাব কর্মকর্তা।