• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার আহ্বান

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৩  

‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরও কৃষি রপ্তানিতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নেট খাদ্য আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশের (এনএফআইডিসি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে পরও কৃষি ভর্তুকি অব্যাহত রাখাতে হবে।’

রোববার (৪ জুন) রাজধানীর পর্যটন ভবনের মিলনায়তনে এক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারা বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর কৃষি ভর্তুকি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকানুনের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের রপ্তানি সহায়তা স্কিম তৈরি করা উচিত।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশ ট্রেড ফেসিলিটেশন প্রজেক্ট যৌথভাবে ‘ইমপ্যাক্ট অব এলডিসি গ্রাজুয়েশন অন দ্য এগ্রিকালচার সেক্টর অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

এসময় কৃষিমন্ত্ৰী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও মানবৃদ্ধি করা সম্ভব হলে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সুযোগসুবিধা ক্রমশ প্রত্যাহার হলে তা আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি জোর আকাঙ্ক্ষা তৈরি করবে।

ইআরডি সচিব শরিফা খান কৃষি খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে সরকারের নীতিগত ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এনএফআইডিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।

সেমিনারে ইউএসডিএ’র অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাকর্মের ওপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ড. রাজ্জাক তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে বিদেশের অনেক বাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

সেই প্রেক্ষাপটে তিনি উত্তরণের পর আরও অধিক সময়ের জন্য শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায় সে লক্ষ্যে বাণিজ্যিক অংশীদার দেশসমূহের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, স্থানীয় কৃষিখামার ও শিল্পসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ব্যয় হ্রাসকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. রাজ্জাক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কৃষিপণ্যের জন্য প্রদত্ত সহায়তার পরিমাণ যেহেতু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে সেহেতু উত্তরণ পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কৃষিজ ভর্তুকি প্রদানে কোনো সমস্যা হবে না। তবে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে সমস্যা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি এ ধরনের ভর্তুকিসমূহ আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে শ্রেণীবদ্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সেলর স্কট ব্রেন্ডন এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী।

সেমিনারে বক্তারা জানান, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরও স্থানীয় চাহিদা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম-কানুনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন ও কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে।

একই সঙ্গে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি সাধন এবং কৃষিখাতে পণ্যের গুণ ও মান সুনিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা যে ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন সেই বিবেচনায় কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও সভায় আলোকপাত করা হয়।

ইউএসডিএ’র অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশ ট্রেড ফেসিলিটেশন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মাইকেল জে পার বলেন, ইউএসডিএ আসন্ন সময়ে বাংলাদেশের কৃষি, বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পদ্ধতি সহজীকরণ, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয়করণ, খাদ্য ও রাসায়নিক পরীক্ষাগারসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কোল্ড চেইন পদ্ধতির উন্নতি সাধনের জন্য বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।

সেমিনারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধি, সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং কৃষি ও বাণিজ্যিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।