• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

কক্সবাজারেই হচ্ছে এশিয়ার বৃহৎ ‘আইকনিক রেলস্টেশন’

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২২  

সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছিতে তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। দেখতে অনেকটা ঝিনুকের মতোই হবে আইকনিক রেলস্টেশনের চেহারা। এটিকে বলা হচ্ছে এশিয়ার বৃহৎ রেলস্টেশন।

ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ভবনটির মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ। ৬ তলা স্টেশন ভবনটিতে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, শিশু যত্নকেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

শুভ্র সাদা বিশাল আকৃতির এক ঝিনুক। এর ভেতরে আসা যাওয়া করছে ট্রেন; এমন দৃশ্য বাস্তব হতে চলেছে সৈকত শহর কক্সবাজারে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হতে ৩ কিলোমিটার দূরে দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন।

আইকনিক স্টেশনের সামনে ঝিনুকাকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। তার চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি। আর ঝিকঝিক শব্দ করে আসছে ট্রেন। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করছে। তারপর চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীরা সেতু হয়ে উঠছে ট্রেনে। আবার ট্রেন থেকে নেমে অন্য পথে বেরিয়ে যাত্রীরা পা বাড়াচ্ছে সৈকত শহরে। এ জন্য থাকছে গমণ ও বহির্গমনের দুটি সড়ক। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের তিনটি বড় জায়গা।

রয়েছে ৮০ ফুট লম্বা দীর্ঘ সেতু। এর সঙ্গে যুক্ত পৃথক তিনটি চলন্ত সিঁড়ি। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে রয়েছে তিনটি প্ল্যাটফর্ম।

আইকনিক স্টেশন ভবনের নিচতলায় রয়েছে টিকিট কাউন্টার, স্বাগত জানানো কক্ষ, লকার, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও যাত্রীদের সেতুতে যাতায়াতের পথ। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে শপিং মল, শিশু যত্নকেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল; চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।

আর রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে গিয়ে পর্যটকরা লাগেজ, মালামাল স্টেশনে রাখতে পারবেন। সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরে পারবেন নিজ গন্তব্যে। এমন সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে বৃহৎ এই আইকনিক রেলস্টেশনে।

ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ছয়তলা আইকনিক স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ। এখন চলছে সৌন্দর্য বর্ধন, ফায়ার ফাইটিং, স্যানিটারি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের নানা কাজ। মেয়াদের আগেই আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ করার আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন এটি। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি কক্সবাজারে আসবে স্বপ্নের রেল।

চান্দের পাড়ায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, চান্দের পাড়ার মধ্যভাগে ২৯ একর জায়গাজুড়ে চলছে রেলস্টেশন নির্মাণযজ্ঞ। ছয় শতাধিক শ্রমিক ও প্রকৌশলী স্টেশন ভবন, যাত্রীদের যাতায়াতের সেতু, প্ল্যাটফর্ম ও ১৯টির বেশি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ার লাভলু হোসেন বলেন, ছয়তলা রেলস্টেশনের মূল ভবনটির কাজ শেষ। এখন ভবনের চারদিকের গ্লাস ফিটিংস, ছাদের ওপর স্টিলের ক্যানোফি টানার প্রস্তুতি চলছে। এগুলো চীন থেকে আমদানি হবে। পাশাপাশি ভবনের দরজা-জানালা ফিটিংস, টাইলস, স্যানিটারি, বিদ্যুতের লাইন ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপনের কাজ চলছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের (আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং) কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আবদুল জব্বার বলেন, ১০০ কিলোমিটারের নির্মাণাধীন রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে আইকনিক এই রেলস্টেশন। যেখানে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশু যত্নকেন্দ্র, লকার বা লাগেজ রাখার স্থান। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে নেমে পর্যটকেরা লাগেজ, মালামাল স্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে।

রেলওয়ে প্রজেক্টের (আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং) প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. ফরহাদ হোসাইন বলেন, ছয় তলা আইকনিক স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম ও যাত্রীদের যাতায়াতের সেতুর কাজও ৩০ শতাংশ এগিয়েছে। ছাদের কাঠামো স্থাপনসহ ভবনের অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে। বর্ষা মৌসুমেও কাজে সমস্যা হবে না। কারণ, ভবনের মূল কাঠামোর কাজ যেহেতু শেষ, ফলে এই কাজগুলো ভেতরে বসে করা যাবে। মেয়াদের দুই মাস আগেই যেন আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়, সে লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ চালানো হচ্ছে। স্টেশন ভবনের পশ্চিম পাশে একসঙ্গে চলছে পাঁচতলা ২০টি ভবনের নির্মাণকাজ।

দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনটি ২৯ একর জায়গাতে নির্মিত হচ্ছে। ৬ তলা এই স্টেশন ভবনটি তৈরির বিপরীতে খরচ হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা।