• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

পিরোজপুর সংবাদ

ভূগর্ভে বৈদ্যুতিক তারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, কমবে দুর্ঘটনাও

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৩  

নানা চ্যালেঞ্জ আর বাধা-বিপত্তি পেরি‌য়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা থে‌কে তৃণমূল পর্যন্ত সারাদেশে টেকসই উন্নয়নে কাজ ক‌রে যাচ্ছে। লক্ষ‌্য ২০৪১ সালের ম‌ধ্যে দেশ‌কে স্মার্ট বাংলাদেশে বি‌নির্মাণ করা। এরই মধ্যে রাজধানী‌ থে‌কে তৃণমূল পর্যন্ত যো‌গা‌যোগ খা‌তে বিপ্লব ঘ‌টে‌ছে। উন্নয়‌নের এই চলমান বিপ্লব সর্বস্ত‌রে ছড়িয়ে দিতে মহপ‌রিকল্পনা নি‌য়ে এগু‌চ্ছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়‌নে প্রথমেই গড়তে হবে স্মার্ট ঢাকা। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারির বেশিরভাগ কার্যক্রম এই নগরী‌কে ঘি‌রেই। তাই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগে ঢাকাকে দ্রুত স্মার্ট নগরী‌তে প‌রিণত কর‌তে হ‌বে।

সেই প‌রিকল্পনায় রাজধানীজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা তারের জঞ্জালমুক্ত সুন্দর স্মার্ট নগরী গড়তে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ভূগর্ভে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক তার, তা বাস্তবায়‌নে দ্রুত গ‌তি‌তে কাজও এগিয়ে চলছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ব‌লেন, ২০৪১ সা‌লের ম‌ধ্যে দেশ‌কে ডি‌জিটাল থে‌কে স্ম‌ার্ট বাংলা‌দে‌শে রূপান্ত‌র কর‌তে বর্তমান সরকার ম‌হাপ‌রিকল্পনা নি‌য়ে কাজ ক‌রে যা‌চ্ছে। আগ‌ামী ৫ বছ‌রের ম‌ধ্যে এই শহরে থাকবে স্মার্ট বিদ্যুৎব্যবস্থা।

শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, দেশের বড় শহরগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে নিয়ে যাওয়া হবে। এরই মধ্যে সেই প্ল্যান বাস্তবায়‌নে উন্নত দেশের আদলে ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল স‌রি‌য়ে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনগুলো মাটির নিচে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূ‌ত্রে জানা যায়, ঢাকা নগরী‌কে ঝুলন্ত তা‌রের জঞ্জাল থে‌কে ম‌ুক্ত কর‌তে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কাজের সামগ্রিক অগ্রগতিও বেশ সন্তোষজনক। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের দৃশ্যমান বৈদ্যুতিক তার মুক্ত করা হবে। পুরো শহরে বৈদ্যুতিক তার থাকবে ভূগর্ভে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) সূ‌ত্রে জানা যায়, আবাসিক এলাকা ধানম‌ন্ডি‌কে চারটি ভাগে ভাগ করা হ‌য়ে‌ছে। এরই ম‌ধ্যে পাইলটিং কাজের অংশ হিসেবে ধানমন্ডির বেশ কয়েকটি সড়কে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন মাটির নিচে স্থাপন করা হচ্ছে। সেই কাজ ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকী কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটা নির্ভর করবে সিটি কর্পোরেশনের ওপর।

আরো জানা যায়, রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরে একই প্রকল্প চলমান র‌য়ে‌ছে। এই দুই জেলার ১৯০ কিলোমিটার সড়কে এ কাজ করা হবে। এতে ১ লাখ ১৫ হাজার গ্রাহক সেবা পাবেন। চীন সরকারের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাইলটিংয়ে সফলতা মিললে বড় পরিসরে কাজ করবে সরকার। এ প্রক‌ল্পের মেয়াদের সময়সীমা ২০২৭ সাল পর্যন্ত ধরা হ‌য়ে‌ছে।

ডি‌পি‌সি সূ‌ত্রে আরো জানা যায়, ভূগর্ভে বৈদ্যুতিক তার প্রক‌ল্পের আওয়তায় এ পর্যন্ত ৩৬টির ম‌ধ্যে ১২টি রাস্তায় কাজ করা হয়ে গেছে।

ডিপিডিসির প্রকল্প ও নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান বলেন, ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক সময় তার ছিঁড়ে যায়, শর্টসার্কিট হয়ে যায়। বড় দুর্ঘটনায় অনাকাঙ্খিত মৃত‌্যুর পাশাপাশি বিদ‌্যুৎ সরবরাহেও ঘটে বিঘ্ন। এ অবস্থা থে‌কে মু‌ক্তি দি‌তে ভূগর্ভে স্থাপন করা হ‌চ্ছে বৈদ্যুতিক তার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হ‌লে নগরবাসী‌কে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হ‌বে। এছাড়া বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনাও কমবে। ধানমন্ডিতে এটা আমরা করছি। ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের অন্যান্য জায়গায়ও করা হবে।

ডিপিডিসি সূত্রে আরো জানা যায়, বৈদ‌্যুতিক সব সাব স্টেশনগু‌লো মা‌টির নি‌চে নেয়ার পর ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। তাই মডার্ন স্কেডা (সুপারভাইজার কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা ইকুজিশন) প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে ডিপিডিসি। এতে আধুনিক অপারেশন টেকনোলজি প্রয়োগ করা যা‌বে। একই সঙ্গে স্কেডার মাধ্যমে পুরো ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত হবে।

ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডেসা থেকে যখন ডিপিডিসি হয়, বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল ৬-৭ লাখ। আর এখন ১৭ লাখ। ফলে আমাদের নেটওয়ার্ক বড় হয়ে গেছে। এরপরও আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা দিয়ে যাচ্ছি।

তি‌নি আরো বলেন, ৪৫টি সাবস্টেশন হচ্ছে। প্রতিটি উপকেন্দ্রে কমপক্ষে দুটি বিকল্প থাক‌বে। যাতে একটি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে আরেকটি থাকে। মাটিরে নিচে লাইন হওয়ায় ত্রুটির কোনো কারণ নেই। এরপরও কিছুদূর পরপর অপারেশন করতে বা মেনটেইন করতে যাতে সুবিধা হয়, সে সুযোগ রাখা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্মার্টভাবে মনিটরিংসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড স্মার্ট করছি।