• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

মহামারিতেও বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২১  

বৈশ্বিক মহামারীতে নানা নেতিবাচক খবরের মধ্যেও বাংলাদেশে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৩৫০ কোটি ১০ লাখ (সাড়ে ৩ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি এফডিআই এসেছে। আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৩২৩ কোটি ৩০ লাখ (৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন) ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া গেল অর্থবছরে দেশে নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৭৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে ১২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। ফলে এক বছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর বাকি অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো বেশ কিছু বাধা দূরে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। তবে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত উপকরণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শ্রম আইন কার্যকরে শিথিলতা এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে এখনো বড় বাধা। তাই বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশের সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি আরও সহজ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে। বিদেশিদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়েও নজর দিতে হবে সরকারকে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে কোরিয়া, চীন ও হংকং থেকে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, ব্যাংক, টেলিকমিউনিকেশন খাতেও কিছু বিনিয়োগ এসেছে। এ কারণে করোনা মহামারীর মধ্যেও এফডিআই খানিকটা বেড়েছে বলে জানান তারা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করেই ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা আসে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে যায়। তবে আমরা এর মধ্যেও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। যেসব দেশ মূলত বিনিয়োগ করে তাদের সঙ্গে সরাসরি না পারলেও ভার্চুয়ালি যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। যাদের বিনিয়োগ আছে তাদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ এবং নীতি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে দেশে এখনো কাক্সিক্ষত বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। সেটি বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে শুধু টাকাই আসে না, এর সঙ্গে প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলও কিন্তু আসে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘বৈশি^ক মহামারীর মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। ভোগ ও বিনিয়োগ উভয়ই কমেছে। আগামীতে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে এ সংকোচন হ্রাস এবং অর্থনীতির চাকা সচল করতে হবে। তিন কারণেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নজর দিতে হবে। প্রথমত. তৈরি পোশাক খাতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে অতিক্রম করেছে। দ্বিতীয়ত. কমতে শুরু করেছে মূল চালিকা শক্তি রেমিট্যান্সও। তৃতীয়. সরকারি ও বেসরকারি দেশীয় বিনিয়োগ কমেছে। এসব বিবেচনায় বিদেশি বিনিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালে মোট বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে এসেছে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, ব্যাংকিং খাতে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, টেক্সটাইলে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশনে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, খাদ্যে ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এই এফডিআইয়ের মধ্যে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মূল পুঁজি, ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ এবং ৬ শতাংশ এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।

জানা যায়, ২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে দেশে এফডিআই আসে মোট ২ হাজার ৫৫০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে মূল পুঁজি এসেছে ৯১২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মুনাফা ও ঋণ থেকে বিনিয়োগ হয়েছে বাকি ৬৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ মূল বিনিয়োগ মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। তারা মোট বিনিয়োগের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, মিসরের ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ৬ দশমিক ১ শতাংশ, হংকংয়ের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশগুলোর ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে।

বিডার পরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, ‘দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেবার মানও বাড়ছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ২৪ হাজার সেবা দিয়েছে বিডা। এ ছাড়া সব কার্যক্রমের ৯৫ শতাংশ অনলাইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব উদ্যোগের ফলে আগামীতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।’