• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ব্রিফকেস নয়, কানাডার বাজেটে নজর থাকে অর্থমন্ত্রীর জুতায়

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২২  

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজেট উপস্থাপনের সময় মনোযোগ কেড়ে নেয় অর্থমন্ত্রীর হাতে থাকা ব্রিফকেস। তবে শুনতে আশ্চর্য লাগলেও কানাডায় বাজেট উপস্থাপনের আগে সবার মনোযোগটা থাকে অর্থমন্ত্রীর জুতার দিকে।

এর শুরুটা ১৯৬০ সালে। সে বছর এক জোড়া ঝকঝকে নতুন জুতা পরে বাজেট পেশ করতে দেখা যায় কানাডার তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ডোনাল্ড ফ্লেমিংকে। সংবাদমাধ্যমে ব্যাপারটি বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়।
এরপর থেকেই বাজেট অধিবেশনে কানাডার অর্থমন্ত্রীর নতুন জুতা পরার বিষয়টি একটি ঐতিহ্য হয়ে ওঠে। দেশটির অর্থমন্ত্রীরা বেশ ঘটা করে বাজেটের জন্য নতুন জুতা কেনেন।

তবে এ বাজেট উপলক্ষ্যে কেনা এই জুতা কিন্তু সমকালীন কানাডার অর্থনৈতিক অবস্থা, বাজেটের মূলমন্ত্র, সরকারের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, এসব কিছুরই প্রতিনিধিত্ব করতো। যেমন ১৯৭৯ সালে জো ক্লার্ক এস্কিমো বুটের মতো জুতা পরে বাজেট অধিবেশনে গিয়েছিলেন কানাডার নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে।
১৯৯৪ সালে শ্রমজীবী মানুষের অবদানের প্রতি সম্মান রেখে ওয়ার্ক বুটস পরেছিলেন পল মার্টিন। অর্থনীতিতে চমক আনার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৪ সালে র‌্যাল্ফ গুডেল পরেছিলেন নতুন চকচকে অক্সফোর্ড শুজ।

এরপর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কানাডার জাঁদরেল অর্থমন্ত্রী জিম ফ্ল্যাহার্টি একেক বছরের বাজেট অধিবেশনে একেক রকম জুতা পরেছেন।  তবে ২০০৮ সালে তিনি নতুন জুতা না কিনে পুরোনো জুতা মেরামত করিয়ে নিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে কানাডা সরকার বিলাসিতা চায় না এ বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
২০১১ সালেও তিনি সারিয়ে নেয়া পুরোনো ড্রেস শুজ পরেন কানাডার অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে কৃচ্ছসাধনের ইঙ্গিত দিয়ে। আবার ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিনিই একেবারে ঝাঁ–চকচকে আটোসাঁটো, খাঁটি চামড়ার তৈরি অক্সফোর্ড শু পরে বাজেট পেশ করেছেন চাঙ্গা অর্থনীতির খুশিতে।

জিম ফ্ল্যাহার্টির প্রয়াণের পরে নতুন অর্থমন্ত্রী জো অলিভার ২০১৫ সালে কানাডার বাজেটে ভারসাম্যের কথা বোঝাতে পরেছিলেন ‘নিউ ব্যালান্স’ কোম্পানির রানিং শুজ বা স্নিকার্স।

এরপর পরবর্তী অর্থমন্ত্রী বিল মরনো ২০১৭ সালে পরেছিলেন কানাডিয়ান উদীয়মান নারী উদ্যোক্তা দুই বোনের ব্র্যান্ড পপি বার্লির জুতা। পরপর দুই বছর এ পপি বার্লির জুতাই পরেন তিনি। গরুর চামড়ায় তৈরি কালো রঙের এ ডার্বি জুতা যেন কানাডার অর্থনীতিতে স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের বিজয়গাথার স্বীকৃতি।

বাজেটে জুতার ফ্যাশন ঐতিহ্যের ব্যাপারটিতে একেবারে অন্য রকম এক আবেদন এনে দিয়েছেন কানাডার প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তাকে নিয়ে অবশ্য নানা মহলের কৌতূহল ছিল। প্রথমত তিনি ছিলেন কানাডার ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী। আবার তিনি ছিলেন একজন ডাকসাইটে সাংবাদিকও বটে।

২০২১ সালে বাজেট দেয়ার আগে একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান থেকে কালো রঙের জুতা কেনেন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। যে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা একজন নারী। ওই বছর কানাডা সরকারের লক্ষ্য ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দেয়া। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের। মনে করা হয় সে কারণেই ওই দোকান থেকে জুতা কেনেন তিনি।

অত্যন্ত স্টাইলিশ আর অভিনব কালো রঙের এ পাম্প শুর ডিজাইনার আইয়ুবজাদেহ আবার ইরানি বংশোদ্ভূত তার ব্র্যান্ডের নাম ভাজেল। এ জুতা কোম্পানি টরন্টোয় যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৫ সালে। অপেক্ষাকৃত নতুন ও ক্ষুদ্র এ কোম্পানি থেকে বাজেট অধিবেশনের জুতা কেনার পর ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ফোন করেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর আইয়ুবজাদেহকে। কানাডার অর্থনীতিতে অভিবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবেও দেখা হয় এই পদক্ষেপকে।