• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে কারা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পাল্টাপাল্টি জয়ের দাবি করেছে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পিটিআই ও নওয়াজ শরিফের পিএমএলএন। পিটিআই দাবি করছে, তাদের সমর্থিত প্রার্থীরাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসনে জয়ী হয়েছে। আর নওয়াজ শরিফ দাবি করছেন, একক বৃহত্তম দল পিএমএলএন। এমন পরিস্থিতিতে কারা সরকার গঠন করবে এখনও স্পষ্ট হয়নি।

জিও নিউজের খবর অনুসারে, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত জাতীয় পরিষদের ২৬৬টির মধ্যে ২৫১টি আসনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা জয় পেয়েছেন ১০১ আসনে, নওয়াজের পিএমএল-এন জিতেছে ৭০ আসনে এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি আসন পেয়েছে ৫১টি। পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য ২৬৬টি আসনের মধ্যে ১৩৪টিতে জয়লাভ করতে হয়। ফলে কোনও দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। কয়েকটি আসনের ফল ঘোষণা এখনও বাকি থাকলেও সেগুলোতে জয়ী হয়েও কোনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।

নির্বাচনে একক বৃহত্তম দল ও জয়ের দাবি করে সমর্থকদের উদ্দেশে ‘বিজয় ভাষণ’ দিয়েছেন পাকিস্তানের তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা পিএমএলএন নেতা নওয়াজ শরিফ। ভোটের পর পিএমএল-এন দেশের একক বৃহত্তম দল। দেশকে সংকট থেকে উত্তরণের দায়িত্ব তার দলের। আমাদের একমাত্র এজেন্ডা সমৃদ্ধ পাকিস্তান।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে তার দল পিএমএল-এন এককভাবে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসনে জয়ী হতে পারেনি। জোট সরকার গঠনে অপর দলগুলোকে তিনি আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি চান পাকিস্তানকে পাল্টে দিতে অপর দলগুলোর সঙ্গে সম্প্রীতির আলোকে বসতে।

নওয়াজের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইমরান খানের পিটিআই দলের নেতারা। দলটির নেতা আসাদ কায়সার বলেছেন, কেন্দ্রে সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে পিটিআই সমর্থিতরা। পিএমএলএন নেতার বিজয় ভাষণ দেওয়ার কোনও অধিকার নেই।

জাতীয় পরিষদের সাবেক এই স্পিকার বলেছেন, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ফলাফল অনুসারে পিটিআই হলো বৃহত্তম দল। জনগণ পিএমএলএনকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইমরান খানকে বেছে নিয়েছে। কারচুপির নির্বাচনে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র যন্ত্রকে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো পরও তারা শীর্ষে রয়েছেন।

আসাদ কায়সার বলেছেন, তার দল সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন বিকল্পের কথা বিবেচনা করছে এবং আগামীকাল একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। কেন্দ্র এবং পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়াতে আমাদের সরকার গঠনের চেষ্টা করছি। আমাদের বৈঠক আছে এবং ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছি। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা দলের ভেতরে নির্বাচনের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। আদালতের কাছেও যাওয়া হবে। দেখা যাক আমাদের জন্য উপযুক্ত কী হয়।

দলটির মুখপাত্র রাউফ হাসান বলেছেন, সরকার থেকে তাদের দলকে দূরে রাখতে রাজনৈতিক কারসাজির পরও পিটিআই কারচুপির নির্বাচনেও নৈতিক জয় নিশ্চিত করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন জিতে গেছি। তারা ছলাকলার মাধ্যমের আমাদের কাছ থেকে তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা নৈতিক জয় নিশ্চিত করেছি।

ভোটে কারচুপির বিষয় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আদালত ও ঊর্ধ্বতন আদালতে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, ভোটে পিটিআইয়ের সাফল্যের পরও বেশ কিছু প্রতিকূলতা রয়েছে দলটির। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দলটির প্রতীক কেড়ে নেওয়া এবং শীর্ষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের কারাগারে পাঠানো ও মামলা রয়েছে।

এর অর্থ হচ্ছে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেলেও তারা হয়ত সরকার গঠন করতে পারবে না। কারণ স্বতন্ত্র হিসেবে তারা সংখ্যালঘুদের আসনের ভাগ পাবে না।

এই বিষয়ে পাকিস্তানি সাংবাদিক উসাতুল্লাহ খান বলেছেন, এর আগে জেনারেল জিয়াউল হকের সময়ে পুরো পার্লামেন্ট তৈরি হয়েছিল স্বতন্ত্রদের দিয়ে। ১৯৮৫ সালে নির্দলীয় নির্বাচন ছিল। কোনও দল নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের অংশ নিতে দেয়নি। ভোট হয়েছিল স্বতন্ত্রভাবে। যদিও সবার প্রতি কোনও না কোনও দলের সমর্থন ছিল, কিন্তু কাগজে কলমে তারা ছিলেন স্বতন্ত্র।

তিনি বলেন, জয়ীরা পার্লামেন্টে এসে দলের নাম দেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ। যা এখন পিএমএল-এন ও পিএমএল-কিউ নামে পরিচিত। এর আগে ছাত্তা লিগ বলেও পরিচিত ছিল।

এ বিষয়ে সাংবাদিক জারার খুরো বলেছেন, এমন কিছুর সম্ভাবনা খুব বেশি তিনি দেখছেন না। ইমরান খান ও তার দলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিচারে আমি মনে করি না খুব দ্রুত পিটিআই কোনও অলৌকিক স্বস্তি পাবে। আইনে যা-ই থাকুক না কেন।

তবে কিছুটা আশাবাদী আইনজীবী আবদুল মইজ জাফেরি। তিনি বলছেন, ইসিপি নির্বাচনি প্রতীক কেড়ে নিলেও পিটিআইয়ের নিবন্ধন বাতিল করেনি। আইনত পিটিআই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। সব আসনে এক প্রতীকে দলটির প্রার্থীরা লড়াই করতে না পারলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ব প্রভাবিত হয়নি। দলটি বিলুপ্ত হয়নি।

সাংবাদিক জারার খুরো বলছেন, অনেকেই তাদের সঙ্গে আসতে চাইবে। সব স্বতন্ত্রদের নিয়ে আমি ঢালাও মন্তব্য করতে চাইছি না। অঞ্চল ভেদে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। খাইবার পাখতুনখোয়াতে পক্ষত্যাগকারীরা জনগণের খুব কঠোর প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বেন। পাঞ্জাবের দক্ষিণে হয়ত পরিস্থিতি অন্যরকম হবে। এখানে হয়ত কয়েকজন স্বতন্ত্র বিজয়ীদের সমর্থন পেয়ে যেতে পারে পিএমএলএন।

সাংবাদিক শাহজিব জিলানির মতে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র বিজয়ীদের তিন দিন সময় দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন একভাবে কোনও দলে যোগদান করবেন, না কি দলগতভাবে একটি দলে ভিড়বেন।

তার মতে, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি পার্লামেন্টের বৃহত্তম গোষ্ঠী হয়ে যান তাহলে তাদেরকে একটি বিদ্যমান রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে হবে। যে নামের কথা শোনা যাচ্ছে সেটি হলো মজলিশ ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিন (এমডব্লিউএম)। এটি ইতোমধ্যে একটি নিবন্ধিত দল। এতে যোগ দিলে তারা সংরক্ষিত আসনের ভাগও পেয়ে যাবেন। এরপর তারা পার্লামেন্টের নেতা হওয়ার জন্য নিজেদের একজন প্রার্থী দিতে পারবেন।

জিলানি বলছেন, এমনটি করার জন্যও তাদেরকে একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে হবে। যদি তারা একটি বিদ্যমান দলে শামিল হয় এবং সংখ্যায় বেশি থাকেন তাহলে নিশ্চিতভাবে তারা পার্লামেন্টের নেতা নির্বাচন করতে চাইবেন। যদি কোনও কারণে তা করতে না পারেন তাহলে তাদের সামনে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনের সুযোগ থাকবে।