• বুধবার ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ||

  • অগ্রহায়ণ ১৪ ১৪৩০

  • || ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

সৌরবাতি বদলে দিয়েছে উপকূলের মানুষের জীবন-যাত্রা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২  

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া দুর্গম উপকূলে। প্রাচীন আমলের কেরোসিনের বাতি আর হারিকেনের পরিবর্তে ঘরে ঘরে এখন জ্বলছে সৌরবাতি। এই বাতির আলোয় আলোকিত হচ্ছে আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত উপকূলের ঘর-বাড়ি।

দিনের সূর্যের আলো রাতে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যবাতির মাধ্যমে। বদলে যাচ্ছে উপকূলের মানুষের জীবন-যাত্রা। দুর্গম উপকূল এখন অনেকটা আধুনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয়েছে। উপকূলীয় জনপদ মানেই ছিল সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে আঁধার। দুর্গম চর আর গ্রামের মেঠোপথ ছিল পথচারীদের কাছে ‘আতঙ্ক’। গ্রামের হাট থেকে বাড়ি ফিরতে হতো দলবেঁধে। টর্চলাইট আর হারিকেনই ছিল যাত্রা পথের ভরসা। এখন টর্চলাইট-হারিকেন দেখাই যায় না। উপকূলীয় জনপদে এখন জ্বলছে স্ট্রিট লাইট। সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত প্রতিটি গ্রাম। সন্ধ্যা নামলেও আর কোন সমস্যা নেই। সড়ক, হাট-বাজার ও মেঠোপথ থাকে আলোয় আলোয় ভরা।

উপকূলের জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ নদীতে মাছ শিকারে যেত কুপি বাতি (ল্যাম্প) নিয়ে। বাতাসে যেনো বাতি নিভে না যায় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা করত তারা। স্থানীয় ভাষায় এ পদ্ধতিতে আলো জ্বালানোকে ‘বোম্বা বাতি’ বলা হয়। কিন্তু তাতেও জেলেরা স্বাচ্ছন্দ্যে রাতের বেলা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারত না।

উপকূলে বেশ কয়েটি জনপদ ঘুরে দেখা গেছে সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। জলবিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে উপজেলার হাট-বাজার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবাতি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় ভাবে জ্বলে উঠছে এসব বাতি। লোডশেডিংয়ের ঝামেলা না থাকায় এ সড়ক বাতিগুলো আলো দেয় সারা রাত। এ আলোর ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই আগের তুলনায় অনেক কমেছে। ছোট ছোট নৌকা, ট্রলার, বনের মধ্যে ছোট্ট কুঁড়ে কিংবা সাগর পাড়ের জেলেপল্লীর সারি সারি ঘর সৌর আলোয় ঝলমলে। কোথাও কোথাও রেডিও, টেলিভিশন বা মিউজিক প্লেয়ারে গান-বাজনার শব্দও শোনা যায়। রাতের আধাঁর দূর করতে জ্বালানি তেল কেরোসিন কেনা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন লোকজন।

সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা জানান, রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা (ছোট ডিসি ফ্যান) ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সূর্যবাতি উপকূল অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বেশ কয়েকজন জেলে জানান, আর বাতাসে বাতি নিভে যাবার ভয় নেই। মাছ ধরি, আর ভালোভাবে জীবন কাটাই। আমাদের আয় রোজগারেও অনেক সুবিধা হচ্ছে। এখন আর দুশ্চিন্তায় অন্ধকারে পড়ে থাকতে হয় না। আগে সন্ধ্যা নামলেই কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তো এ অঞ্চলের মানুষরা।

মঠবাড়িয়া উপজেলার খেজুর বাড়িয়া গ্রামের বলেশ্বর নদীর তীরে বাসিন্দা জব্বার আলী ও রহিমা বেগম জানান, আগে কেরোসিন দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করতো। বেশিক্ষণ পড়া-লেখা করতে পারতো না। বর্তমানে সৌর বিদ্যুতের আলোয় রাত জেগে পড়া-লেখা করতে পারে তারা।

কৃষক ইউসুফ আলী জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌর বিদ্যুতের কারণে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সহজে সেরে নেয়া যায়। সবচেয়ে বড় সাফল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। সৌর বিদ্যুতের সংযোগের মাধ্যমে সোলার পাম্প দিয়ে সেচ কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন। সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প দিয়ে ক্ষেতে পানি দিলে খরচ অনেক কম পড়ে।

উপকূলীয় এলাকার স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, অল্প বৃষ্টি বা ঝড় হলে এ সব এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া করতে সমস্যা হয়। সোলার লাইটগুলো শিক্ষার্থীদের খুবই উপকারে এসেছে।

হোগলপাতি গ্রামের রাস্তার পাশে দোকানী ইউনুস হাওলাদার জানান, দোকানটিতে সৌরবিদ্যুৎ থাকায় অনেক রাত পর্যন্ত বেচা-কেনা চলে, ফলে বিক্রিও বেড়ে গেছে। বাড়িতেও রয়েছে সৌর বিদ্যুতের সুবিধা।

উপকূলের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান “হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন” এর সামাজিক উদ্যোক্তা  সুমন চন্দ্র মিস্ত্রি বলেন, বর্তমানে শহরের সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাচ্ছে উপকূলের গ্রামাঞ্চলে। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, সড়ক বাতিসহ নাগরিক সব সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। সোলারের আলোয় উপকূলের চরাঞ্চল সহ প্রত্যন্ত  গ্রাম গুলোতে মানুষের জীবনমান অনেকখানি পাল্টে গেছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার বলেন, বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ এর কারনে মানুষের জীবন-যাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। সোৗর বিদ্যুতে লোডসেডিংয়ের কোন সুযোগ নেই। সন্ধ্যা খেকে সারা রাত জ¦লে। এত বিভিন্ন ধরনের অপরাধও কমে গেছে।