• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

মঠবাড়িয়ায় সূর্যমুখী আবাদে ঝুঁকছেন প্রান্তিক কৃষকরা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩  

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বেশ কয়েক বছর ধরে এর ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছে। এলাকার অন্তত সহ¯্রাধিক কৃষক এবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন এবং ভালো ফলন পাচ্ছেন। সূর্যমূখী একটি অধিক অর্থকারী ফসল হওয়ায় এ এলাকার চাষীরা  ধান চাষের পাশাপাশি এ মৌসুমে এখন সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ১১ ইউনিয়নে প্রায় ২৬২ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখীর আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। যা গত মৌসুমে ছিলো ১৮০ হেক্টর। এবছর দ্বীগুনেরও বেশী সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এছাড়া ১১টি ইউনিয়নে ৫০ শতক করে ৮০টি সূর্যমুখী প্রদর্শণী প্লট গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে গড়ে উঠছে দুই ইউনিয়নে সূর্যমুখী প্রযুক্তি গ্রাম। কৃষি বিভাগ ৮০টি প্রদর্শনী প্লটে  বীজ ও সার বিনামূল্যে দিয়েছে। এর বাইরে স্ব-উদ্যোগে আরও সহ¯্রাধিক কৃষক তাদের অনাবাদি জমিতে এবার সূর্যমুখি আবাদ করেছেন। ফলন ভাল ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার কৃষকদের সূর্যমুখি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। হেক্টর প্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ টন সূর্যমুখি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার সাপলেজা, আমড়াগাছয়া, বেতমোর রাজপাড়া, তুষখালী ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাঠে-মাঠে হলুদ ফুলে সাজানো রয়েছে। বিকেলে শত-শত নারী-পুরুষ ও শিশুরা সূর্যমনি ক্ষেতে গিয়ে ফটো ও সেলফি তুলছে। সূর্যমনি ক্ষেতে একটু দূর থেকে মনে হয় কোন শিল্পী মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে একটি বাগান। মাঠের সূর্যমূখি ফুলে ফুলে এখন নতুন সম্ভাবনার শষ্য দানা । আর পক্ষকাল পরেই সূর্যমূখি ফসল সংগ্রহের পালা শুরু হবে। কৃষকরা জানিয়েছেন, গত দুই বছর ধরে সূর্যমূখি আবাদের সম্প্রসারণ ঘটেছে। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা গত দুই বছর আগেও সূর্যমূখি আবাদে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে এখন খুব সহজেই চোখে মাঠজুড়ে এখন সূর্যমূখির হাসি।

উপজেলার উত্তর সোনাখালী গ্রামের কৃষক বেলায়েত খাঁ জানান, তিনি এবারই প্রথম অনাবাদি ৩০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করে সফল হয়েছেন। গ্রামের অনেক কৃষকই সূর্যমুখী আবাদ করায় তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হন। তার মত বহু কৃষকের অনাবাদি রুক্ষ্ম মাঠে এখন শোভন সূর্যমুখির সমারোহ।

উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া গ্রামের মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাগো এলাকায় সূর্যমূখি কেউ চাষ করতনা । গত কয়েকবছর ধরে কৃষিবিভাগ সার বীজ দিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিছে। বহু কৃষক এবার সূর্যমূখি চাষ করছে। সূর্যমূখি বীজে তৈল হয় আবার এতে জমির উর্বরতা বাড়ে।

তুষখালী ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র কর্মকার বলেন, অনবাদি জমিতে এবার কৃষকরা সূর্যমুখি আবাদ করে এ ফসলের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এলাকায় সেচ সংকট থাকায় চাষে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে এবার মৌমুমে আগাম বৃষ্টির কারনে সেচ সংকট কম। এবার আশাতীত ফলনের সম্ভানা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান জানান, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের ৪০% আবাদ বাড়ানোর প্ররিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের নানা ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সূর্যমুখি উপকুলে নতুন সম্ভাবনার ফসল। এ ফসলের আবাদে অনাবাদি জমি আবাদি হয়ে উঠছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সক্ষম তেল ফসল সূর্যমুখি চাষ করে এলাকার অনেক কৃষক সফলতার মুখ দেখছেন।