• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান

বিছানায় গিয়ে ঘুম না এলে যেসব আমল করবেন

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২১  

ঘুম আল্লাহর নেয়ামত। ঘুম মানুষের ক্লান্তি দূরকারী। অনেকে বিছানায় ঘুমাতে গেলে আর ঘুম আসে না। তাদের জন্য একটি কার্যকরী আমলের কথা এসেছে হাদিসে। এ ছাড়াও ঘুমের আগে পরে দোয়া করার কথা বলেছেন প্রিয় নবি। তাহলে বিছানায় গিয়ে ঘুম না আসলে কী আমল করতে হবে?

মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার জন্য জিকিরের বিকল্প নেই। আর এ জিকিরের কথা বলেছেন বিশ্বনবি। যদি কেউ বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে জিকির করে তবে তার ঘুম এসে যাবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবুল আহওয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেনহজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘আল্লাহর জিকির করলে শয়তানের পক্ষ থেকে ঘুম এসে যাবে। তোমরা (প্রমাণ) চাইলে অনুশীলন করে দেখতে পারো। তোমাদের কেউ যখন বিছানায় গিয়ে ঘুমাতে ইচ্ছা করে তখন সে যেন মহামহিম আল্লাহর জিকির করে।’ (বুখারিমুসলিমআবু দাউদ)

হাদিসে উল্লেখিত জিকির বলতে যে কোনো জিকির করা যেতে পারে- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার কিংবা সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবাহানাল্লাহিল আজিম, কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ইত্যাদি।

বিছানায় গিয়ে প্রিয় নবি যেসব আমল করতেন-

১. হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার (ঘুমানোর আগে) সময় নিজ হাত গালের নিচে রাখতেন। (এরপর বলতেন)-

‏ بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ- ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’

অর্থ : 'হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই মরি ও বাচি।’

২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় ঘুমাতে যেতেন তখন বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا، وَكَفَانَا وَآوَانَا، كَمْ مَنْ لا كَافٍّ لَهُ وَلا مُؤْوِيَ‏

উচ্চারণ : আলহামদুল্লিাহিল্লাজি আত্বআমানা  সাক্বানা  কাফানা  আওয়ানাকাম মান লা কাফফিন ওয়া লা মুওয়িয়া

অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের পানাহার করিয়েছেন, আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এবং আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। কতো লোক আছে যাদের কোনো পৃষ্ঠপোষকও নাই, আশ্রয়দাতাও নাই।’ (আদাবুল মুফরাদ, মুসলিম)

৩. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা আলিফ-লাম-মীম তানখীল (সুরা সাজদা) এবং তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) না পড়ে ঘুমাতেন না। (তিরমিজি)

এই সুরা দুইটি কুরআন মাজিদের অন্য সব সুরার তুলনায় সত্তর গুণ সওয়াবের মর্যাদা লাভের অধিকারী। কোনো ব্যক্তি এই সুরা দুইটি পড়লে তার জন্য এর বিনিময়ে ৭০টি নেকি লেখা হয়। এর অসিলায় তার মর্যাদা সত্তর গুণ বেড়ে যায় এবং এর দ্বারা সত্তরটি গুনাহ মাফ করা হয়।’ (নাসাঈ, দারিমি, মুসতাদরেকে হাকেম, ইবনে আবি শায়বা)

৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুমাতে বিছানায় গেলে সে যেন তার ভেতরের পরনের বস্ত্র খুলে তা দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কেননা সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে তার বিছানায় কি হয়েছিল। এরপর সে ডান কাতে শুয়ে যেন বলে-

بِاسْمِكَ وَضَعْتُ جَنْبِي، فَإِنِ احْتَبَسَتْ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণ : ‘বিসমিকা ওয়াদাতু ঝানবিফাইনিহতাবাসাত নাফসি ফারহামহাওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজ বিহিস সালিহিন

অর্থ : ‘তোমার নামে আমার পার্শ্বদেশ (বিছানায়) রাখলাম। তুমি আমার আত্মা আটক করে রেখে দিলে তার প্রতি দয়া করো, আর তাকে ছেড়ে দিলে তাকে হেফাজত করো, যেভাবে তুমি হেফাজত করে থাকো তোমার সৎকর্মপরায়ণ লোকদের।’ (আদাবুল মুফরাদ, বুখাবি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান)

৫. হজরত বারাআ ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানাগত হয়ে ডান কাতে শুয়ে যেতেন। এরপর বলতেন-

اللَّهُمَّ وَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَأَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَهْبَةً وَرَغْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَنْجَا وَلاَ مَلْجَأَ مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ওয়াঝহাতু ওয়াঝহি ইলাইকা; ওয়া আসলামতু নাফসি ইলাইকা; ওয়াঝাতু জাহরি ইলাইকা; রাহবাতা ইলাইকা; লা মানঝা ওয়া লা মালঝা মিনকা ইল্লা ইলাইকা; আমানতু বিকিতাবিকাল্লাজি আনযালতা; ওয়া নাবিয়্যিকাল্লাজি আরসালতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার মুখ তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমাকে তোমার কাছে সোপর্দ করলাম এবং তোমার রহমতের আশা ও তোমার শাস্তির ভয় সহকারে আমার পিঠ তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। তোমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার এবং নাজাত পাওয়ার তুমি ছাড়া আর কোনো ঠিকানা নাই। তুমি যে কিতাব নাজিল করেছে এবং যে নবি পাঠিয়েছো আমি তার উপর ঈমান এনেছি।’

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কোন ব্যক্তি রাতে এই দোয়া পড়লে, এরপর মারা গেলে সে দ্বীন ইসলামের উপর মারা গেলো।’ (আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)

৬. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানায় গিয়ে বলতেন-

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ، وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ كُلِّ ذِي شَرٍّ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ، وَأَغْنِنِي مِنَ الْفَقْرِ

অর্থ : আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি; ওয়া রাব্বা কুল্লি শাইযিন; ফালিক্বাল হাব্বি ওয়ান নাওয়া; মুনযিলাত্‌তাওরাতি ওয়াল ইনঝিলি ওয়াল কোরআনি; আউজুবিকা মিন কুল্লি জি শাররি আনতা আখিজা বিনাসিয়াতিহি; আনতাল আউয়ালু ফালাইসা ক্বালবিকা শাইয়িন; ওয়া আনতাল আখিরু ফালাইসা বাঅদাকা শাইউন; ওয়া আনতাজ জাহিরু ফালাইসা ফাউক্বাকা শাইউন; ওয়া আনতাল বাত্বিনু ফালাইসা দুনাকা শাইউন; আক্বদা আন্নিদ দাইনা; ওয়া আগনিনি মিনাল ফাক্বরি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রভু, প্রতিটি জিনিসের প্রভু, বীজ ও অংকুরের প্রভু, তাওরাত, ইনজীল ও কোরআন নাজিলকারী! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রতিটি ক্ষতিকর বস্তুর ক্ষতি থেকে, আপনিই এগুলোর নিয়ন্ত্রক। আপনিই আদি, আপনার আগে কিছুর অস্তিত্ব নাই। আপনিই অন্ত, আপনার পরে কিছু নাই। আপনি প্রকাশমান, আপনার উর্দ্ধে কিছু নাই। আপনি লুকায়িত, আপনার অগোচরে কিছু নাই। আপনি আমার পক্ষ থেকে আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন এবং আমাকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিন।’ (আদাবুল মুফরাদ, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে আবি শায়বাহ, আবু আওয়ানা, ইবনে হিব্বান)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বিছানায় যাওয়ার যদি কারো ঘুম না আসে। তবে জিকিরের আমল করা। আর ঘুমের আগে বিছানায় শুয়ে উল্লেখিত দোয়াগুলোর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আমলগুলো যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। ঘুমকে প্রশান্তিময় করে দিন। আমিন।