• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

আইন মেনেই বিদেশি কম্পানিকে এদেশে ব্যবসা করতে হবে- প্রধান বিচারপতি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ফান্ডে আরো এক হাজার কোটি টাকা দিতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। গ্রামীণফোনের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আপনারা এই টাকা দিয়ে দিন। তা না হলে টাকা দেওয়ার ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেওয়া হবে। আর যদি টাকা দিয়ে দেন তাহলে বিটিআরসিকে বলে দেবো, গ্রামীণফোনকে ব্যবসা করতে যাতে কোনো ঝামেলা না করে। আর একটা কথা, আমরা চাই বিদেশি কম্পানি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করুক। তবে সেটা আমাদের দেশের নিজস্ব আইন ও নিয়ম-কানুন মেনে করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ আজ সোমবার গ্রামীণফোনের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন। এরইমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করায় বাকী এক হাজার কোটি টাকা গ্রামীণফোন তিন মাসের মধ্যে কিভাবে পরিশোধ করবে তা লিখিত আদেশে বলে দেবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে গতবছর ২৪ নভেম্বর দেওয়া আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে গ্রামীণফোনের করা রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল আপিল বিভাগ এ আদেশ দিলেন। আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

আদেশের পর গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একহাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আদালত আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকী একহাজার কোটি টাকা দিতে বলেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা টাকা দিবো। তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছিলাম ওই একহাজার কোটি টাকা ছয়মাসে কিস্তির মাধ্যমে দিতে চাই। তবে আদালত তিন মাসের মধ্যে দিতে বলেছেন।

বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, আদালত এক হাজার কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে দিতে গ্রামীণফোনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন যে গ্রামীণফোন যদি টাকা দেয় তাহলে তাদের ব্যবসা করতে যেন বিটিআরসি কোনো ঝামেলা না করে।

সোমবারের শুনানি

শুনানিতে গ্রামীণফোনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপনারা এক হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এসময় তিনি একহাজার কোটি টাকার পে-অর্ডারের কপি দেখান।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, বাকী টাকা কবে দেবেন? জবাবে আমিন উদ্দিন বলেন, সময় চাই।

প্রধান বিচারপতি অপরাপর বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করে বলেন, তিন মাসের মধ্যে বাকী একহাজার কোটি টাকা দেবেন। আপনাকে যাতে ব্যবসা করতে যাতে কোনো ঝামেলা না করে সেটা আমরা বলে দেবো বিটিআরসিকে।

এ সময় গ্রামীণফোনের আইনজীবী বলেন, আমাদের ছয়মাস সময় দিন। আর কিস্তিতে টাকা দিতে চাই।

আদালত বলেন, না। তা হবে না। তিন মাসের মধ্যেই টাকা দিতে হবে। তা না হলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেবো। গ্রামীণফোনের আইনজীবী বলেন, আমাদের ৫ মাস সময় দিন। প্রতিমাসে দুইশ কোটি টাকা করে দিবো। তিনি বলেন, রবিকে ৫টি কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে বিটিআরসি।

এ সময় আদালত বলেন, এতদিন কি করেছেন? অনেকতো সময় পেয়েছেন। আদালত বলেন, টাকা দিয়ে দিন। নিম্ন আদালতে যে মানি স্যুট আছে তা নিষ্পত্তি শেষে যদি দেখা যায় আপনারা বেশি টাকা জমা দিয়েছেন তাহলে সেটা সমন্বয় করা হবে। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা চাই বিদেশী কম্পানি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করুক। তবে সেটা দেশের নিজস্ব আইন ও নিয়ম-কানুন মেনে করুক।

প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫শ ৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (নিরীক্ষা আপত্তির দাবি) দাবি করে গ্রামীণফোনকে গতবছর ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। এই চিঠির বিরুদ্ধে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা (মানি স্যুট) করে গ্রামীণফোন। মামলায় অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চায় গ্রামীণফোন। কিন্তু গতবছর ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেয়। নিম্ন আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। গতবছর ১৭ অক্টোবর ওই আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ওপর দুইমাসের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। এ অবস্থায় আপিল বিভাগ গতবছর ২৪ নভেম্বর এক আদেশে তিন মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে গ্রামীণফোনের প্রতি নির্দেশ দেন। এরপর গ্রামীণফোন রিভিউ আবেদন করে। এ অবস্থায় আদালত গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দেন। এ আদেশে ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোন একহাজার কোটি টাকা পরিশোধ করে। এ অবস্থায় আরো এক হাজার কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিলেন।