• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

আজ মজলুম জননেতা হামিদ খান ভাসানীর প্রয়াণ দিবস

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৯  

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আজ ৪৩ তম প্রয়াণ দিবস। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অনন্য ও ব্যতিক্রমধর্মী রাজনৈতিক। যিনি রাজনীতিকে কখনোই ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করেননি। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করেছেন কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় জাগরিত করেছেন। জমিদারদের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক-মেহনতি শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ হতে শিখিয়েছেন। তাদের নিয়ে করেছেন জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তিনি ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিমা পাকিস্তানের শাসকদের ‘ওয়ালাইকুমুসসালাম’ বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়ে ছিলেন।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ব্রিটিশ ভারতের ঔপনিবেশিক অত্যাচার-অনাচার জর্জরিত সময়ে আনুমানিক ১৮৮৫ সালে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিলো হাজী শরাফত আলী খান। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারের ৪ টি সন্তানের মধ্যে ভাষানী ছিলেন সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ১৮৮৪-৮৫ সালে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মহামারী ওলাওঠা দেখা যায়। এতে তার পরিবারের মা, দাদাসহ সবাইকে হারান। শুধুমাত্র তিনি বেঁচে থাকেন।

ভাসানী কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেছেন। সে সময় ইরাকের আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দিন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। ভাসানী তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান এবং সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। পরে ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে আসামে স্থানীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এসময় তিনি আবারও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে  ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। এই সময়ই রাজনীতির প্রতি ঝুঁকেন তিনি। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। তার ধারাবাহিকতায় ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি তিনি ব্রিটিশদের কারাগারে ১০ মাস কারাদণ্ড ভোগও করেন।

কারামুক্তির পর ভাসানী খেলাফত আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে পর কৃষক-প্রজাদের মাধ্যমে জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত। এবং ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এই সম্মেলনেই তার নাম রাখা হয় ‘ভাসানী’র মাওলানা’। তারপর থেকেই তার নামের শেষে যুক্ত হয় ভাসানী শব্দ।

ভাসানী ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী গণআন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ এ মামলার সকল আসামীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দেন। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শ-চেতনার সংমিশ্রণে একজন মানুষ। তিনি আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রামে কখনো পিছু হটেননি। ক্ষমতাবিমুখ রাজনীতির এক মহান পুরুষ ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই দেশ বরেণ্য নেতা ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। 

আজ এই মহান মজলুম জননেতার প্রয়াণ দিবস।