• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

আবারও নিবন্ধন বাতিলের শঙ্কায় বিএনপি!

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

 

দলীয় কোন্দলের জেরে সাবেক কমিটির এক নেতার করা মামলায় পণ্ড হওয়ার পথে ছাত্রদলের বহুল প্রতীক্ষিত কাউন্সিল। আইনি প্রক্রিয়ায় ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলা মূল বিএনপিকে ভয়ানক পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ছাত্রদলের ঝামেলায় বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

গুঞ্জন উঠেছে, আইনি মারপ্যাঁচে বাতিল হতে পারে বিএনপি’র নিবন্ধনও। দলীয় সংবিধান লঙ্ঘন, গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজকর্মের কারণে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনীতি করার অধিকারও হারাতে পারে বলে জানা গেছে।

বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রদলের সাবেক কমিটির ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক আমান উল্লাহ ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছিলেন। এই মামলার পরেই বেরিয়ে এসেছে বিএনপি’র গঠনতন্ত্র ও আরপিও লঙ্ঘনের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির গঠনতন্ত্র বলছে, ছাত্রদল হলো দলটির সহযোগী সংগঠন। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ছাত্রদল নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে। লিখিতভাবে বিএনপির কোনো নেতা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৩ ধারায় বলা আছে, ছাত্রদল ও শ্রমিক দল নিজ নিজ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে। এখানে মূল দলের কেউ অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কিন্তু গত ৩ জুন রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপি’র প্যাডে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। যা বিএনপি’র গঠনতন্ত্র ও আরপিও লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে ২৩ জুন একইভাবে বিএনপি’র দলীয় প্যাড ব্যবহার করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ ১২ নেতাকে বহিষ্কার করেন। এটাও বিএনপি’র গঠনতন্ত্র ও আরপিও এর সরাসরি লঙ্ঘন বলছেন আইনজীবীরা।

এছাড়াও একইদিনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদলের কাউন্সিল করতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন না করে বিএনপি নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, যাচাই-বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটি গঠন করেন। যা বিধি মোতাবেক হয়নি বরং সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র ও আরপিও এর লঙ্ঘন।

পরবর্তীতে গত ২৪ জুন ছাত্রদল কাউন্সিল আয়োজনে গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৫৭৫ জন কাউন্সিলর বা ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে বিএনপির কোনো নেতা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

এদিকে একটি সূত্র বলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন বিএনপির গঠনতন্ত্র যাচাই বাছাই না করেই মনগড়া এসব প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিএনপি’র দলীয় প্যাডে প্রকাশ করেন। আর এসবের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রদলের সাবেক ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক আমান উল্লাহ ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছিলেন।

ছাত্রদলের সৃষ্ট সংকটে মূল বিএনপির অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, কাউন্সিল প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং তাদের স্বাক্ষরে সব কার্যক্রম হয়েছে, যা আইনত সংগঠনটির গঠনতন্ত্র বিরোধী। আবার ছাত্রদলের চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রও নেই। যা আছে তাও খসড়া। সব মিলিয়ে কাগজপত্রে বিএনপির অবস্থান খুবই দুর্বল। এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ করতে দলীয় সংবিধান ও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করেননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। যা গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিপন্থী। দলীয় অসংগতির বিষয়টি আদালতে চলে যাওয়ায় আইনি মারপ্যাঁচে পড়তে যাচ্ছে খোদ বিএনপি’র গঠনতন্ত্র। এতে করে আরপিওর লঙ্ঘন করার অভিযোগে বাতিল হতে পারে বিএনপির নিবন্ধন। নিজেদের কাঁটা খালে পড়তে যাচ্ছে বিএনপি।