• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

আমার মা জীবন ভিক্ষা চাননি, বাবার উপযুক্ত সাথী- প্রধানমন্ত্রী

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২০  

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৫ আগস্টে ঘাতকদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন।

শনিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার নির্মম ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সঙ্গে সেখানে এ কথাই বলেছিলেন—আমার স্বামীকে হত্যা করেছো, আমি তার কাছেই যাব। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মা আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন। ’

‘আব্বার যে আর্দশ, সেই আর্দশটা তিনি খুব সঠিকভাবে ধারণ করেছিলেন। আর সেটা ধারণ করেই তিনি নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন। ’

বঙ্গমাতার সংগ্রাম ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ত্যাগের মধ্যে দিয়ে একটা সংসারকে সুন্দর করা যায়, একটা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়, একটা দেশকে সুন্দর করা যায়। চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া—এর চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। আমার মা সেই দৃষ্টান্তই দেখিয়ে গেছেন। ’

বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, ‘মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা। বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বঙ্গমাতার জন্মদিন। সেই জন্মের পর ৩ বছর থেকেই পিতা-মাতা সব হারিয়ে সারাটা জীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন। কষ্টই করে গেছেন। কিন্তু এই দেশের স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতার জন্য তিনি যে কত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন সেটা আমরা জানি। এই দেশ স্বাধীন হবে, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে। ’

সংসার সামলে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে তার সহধর্মিনী সহযোগিতা করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি কাজে আমার মাকেও দেখেছি বাবার পাশে থেকে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কখনো সংসারের কোন সমস্যা নিয়ে বিরক্ত করেননি বা বলেনওনি। বরং বেশিরভাগ সময়ই তো আমার বাবা কারাগারে ছিলেন। একটানা দুই বছরও তিনি কারাগারের বাইরে থাকেননি। কিন্তু আমার মা যখন কারাগারে দেখা করতে যেতেন তখন মা নিজেই বলতেন চিন্তার কিছু নেই। সব কিছু তিনি নিজেই দেখতেন। ’

‘আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব আমার মায়ের হাতেই ছিল। তার পাশাপাশি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নির্দেশনা দেওয়া বা বাইরের অবস্থা জেলখানায় থাকা আব্বাকে জানানো, বাবার নির্দেশনা নিয়ে এসে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া। এই কাজগুলো তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে করতেন। ’

বঙ্গমাতার মধ্যে কোন অহমিকা বোধ ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে এলেন তখনও কিন্তু আমার মায়ের মধ্যে এই অহমিকা বোধ কখনো ছিল না। তিনি কখনো সরকারি বাস ভবনে বসবাস করেননি। ’

‘কাজের জন্য আমার বাবা সকালে চলে আসতেন, বাড়ি থেকে নাস্তা করে চলে আসতেন। আবার দুপুরে আমার মা নিজের হাতে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে করে আমার মা পাঠিয়ে দিতেন। রান্নাটা সবসময় নিজের হাতে করতেন। তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী পাকের ঘরে গিয়ে রান্না করবেন সেই সমস্ত চিন্তা তার কখনো ছিল না। ’

নিজের মায়ের হাতের রান্না খুব সুস্বাধু ছিলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মায়ের হাতের রান্না খুবই সুস্বাধু ছিল। ’

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সন্তানদের মাটির দিকে চেয়ে চলতে শিখিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা পেয়েছি বাবা-মায়ের কাছ থেকে মাটির দিকে তাকিয়ে চলার। অন্তত তোমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখো। উপরের দিকে না, তোমার চেয়ে কে ভালো আছে সেটা তোমার চেয়ে খারাপ যারা আছে তাদের দিকে দেখো এবং সেটাই উপলব্ধি করো। কখনো নিজের দৈন্যতার কথা বলতেন না। কখনো কোন চাহিদা ছিল না। নিজে কোন দিন কিছু চাননি। সবসময় তিনি দিয়ে গেছেন। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণভবনে বা সরকারি বাসভবনে থাকেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে তিনি বলতেন, আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকব না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সবসময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। ’

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এবং গোপালগঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।

বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সেয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র, অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২শ’ সেলাই মেশিন এবং ১৩শ’ দরিদ্র নারীকে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা করে দেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।

গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া গোপালগঞ্জ প্রান্তে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।