• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করে?

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২০  

 

অনেকে বলেন যে, ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। অথচ ডাক্তারদের মতে, অনেক ছোঁয়াচে রোগ আছে। আর বাস্তবেও দেখা যায় যে, কিছু রোগ একজন থেকে অন্যজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। তাহলে ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করে? চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

প্রথমেই মৌলিক কিছু কথা মাথায় রাখা উচিত।

ক) ইসলামের কোনো বিষয়ই বাস্তবতার পরিপন্থী নয়। কেননা, এ বিশ্বজগত যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই শরিয়ত দিয়েছেন। সুতরাং ইসলামের কোনো বিষয়ের সাথে সঠিক বাস্তবতার সংঘর্ষ হতে পারে না।

খ) এ বিশ্ব জগতে যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তায়ালার ফয়সালাতে হয়ে থাকে। এর পিছনে যেসব বিষয়কে বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে দেখা যায় এগুলো যদিও বাস্তব, তবে এসবের কার্যক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। আল্লাহ তায়ালা কার্যক্ষমতা না দিলে এগুলো কার্য সম্পাদন করতে পারবে না। এজন্যই ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপের পরও আল্লাহর হুকুম না হওয়ার কারণে আগুন কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি।

গ) সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুস্থতার যেমন বিভিন্ন কারণ রয়েছে তদ্রূপ অসুস্থতারও বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন, মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় সর্দি বা জ্বর হয়। তেমনিভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ এটিও যে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া। এটি একটি বাস্তব বিষয়। শরিয়ত একে অস্বীকার করেনি। তবে অন্যান্য আসবাবের ব্যাপারে যে কথা এখানেও একই কথা; কার্য সম্পাদনের ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। রোগের মধ্যে ক্রিয়া করার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহ চাইলে রোগাক্রান্ত হবে নতুবা হবে না। এজন্যই দেখা যায়, সংস্পর্শে যাওয়ার পরও অনেকে রোগাক্রান্ত হয় না।

ভূমিকার পর এবার আসা যাক মূল উত্তরের দিকে। 

প্রশ্নে যে হাদিসের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এর সঠিক তরজমা এই, ‘রোগ-ব্যাধি (তার নিজস্ব ক্ষমতায়) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে লেগে যায় না।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৭৪২]

ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই- এটি হাদিসের বিশুদ্ধ তরজমা নয়। কেননা, এর থেকে বোঝা যায়, বাস্তব ছোঁয়াচে রোগকে ইসলাম অস্বীকার করেছে। অথচ রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ যেমনিভাবে বাস্তব, রোগাক্রান্ত হওয়ার এই কারণটিও বাস্তব। ইসলাম একে অস্বীকার করেনি।

এক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে ভ্রান্ত ও বাতিল সাব্যস্ত করা হয়েছে তা হল, কোনো ব্যাধিকে এমন মনে করা যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। যেমনটি জাহেলি যুগে মনে করা হত। উপকার ও অপকারের একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালা। হায়াত-মউত, সুস্থতা-অসুস্থতা সবই তাঁর হুকুমে হয়ে থাকে। মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমণের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়, বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদিসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : বাযলুল মাজহুদ ১৬/২৪২; শরহুন নববি ২/২৩০; ফয়যুল কাদির ৬/৪৩৩; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩৭০; তরজুমানুস সুন্নাহ ২/৪১৬।