• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

‘এ বিজয় মুজিব ও আ.লীগের নয়, সাড়ে ৭ কোটি মানুষের’

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দলের অসামান্য সাফল্য সম্পর্কে অভিমত দেন যে, ‘এ বিজয় শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের নয়, এ বিজয় বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের। তারাই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে ও রক্ত দিয়েছে।’

১৯৭৩ সালের এই দিন (৮ মার্চ) বিকালে গণভবনে সমবেত দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের আশু কর্তব্য হচ্ছে— ক্ষুধার জ্বালা থেকে জনগণকে মুক্তি দান এবং জনগণের শিক্ষা-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা।’ জনৈক সাংবাদিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই বিরাট সাফল্যের পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জনগণকে ভালোবাসি জনগণও আমাকে ভালোবাসে।’

 দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ মার্চ ১৯৭৩ জনগণের আস্থা প্রয়োজন

এই নির্বাচনের রায়ই প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ আমার দলের অনুষ্ঠিত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করতে পেরেছে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র  ও ধর্মনিরপেক্ষতা— এই চারটি মূল নীতি, তাকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না, কেন, এর ভিত্তিতে দেশ পুনর্গঠনে জনগণ অনুমোদন দিয়েছে।’ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর শোচনীয় পরাজয় সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের প্রয়োজন। আকস্মিক ঘটনায় জনতার আস্থা আসে না। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের সঙ্গে থাকতে হবে ও তাদের সঙ্গেই মরতে হবে।’

কারা হবে বিরোধীদল

দেশের বিরোধী দল হিসেবে তিনি কোনও দলকে স্বীকার করেন কিনা, জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বিরোধী দল বলে কিছু নেই। সাধারণ নির্বাচনই ছিল তার পরীক্ষা। এতে কেউই বিরোধী দল হিসেবে যোগ্যতা দেখাতে পারেনি। এখন আমি কি তাদের জন্য ভোট সংগ্রহ করবো? ওরা নিজে নিজে অবলুপ্ত হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। জনগণ সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতামত প্রচার করেছে।’ জনৈক বিদেশি সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জাতীয় সংসদের বিরোধী সদস্য মিলে একটি গ্রুপ— ২৫ জন মিলে একটি দল করতে পারেন।’ উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ঘরোয়াভাবে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও  মন্ত্রী মোল্লা জালাল উদ্দিনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

 বাংলাদেশ অবজারভার, ৯ মার্চ ১৯৭৩

এখানে সবাই বাঙালি

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলার মাটিতে সংখ্যালঘু বলে কেউ নেই, এখানে সবাই বাঙালি। এদেশের নাগরিক হলে যে কেউ এখানে বাস করতে পারেন। একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বাংলাদেশে বাঙালি-অবাঙালি প্রশ্ন উঠতে পারে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান এখান থেকে অবাঙালিদের ফেরত নেবে না কেন? আমিতো পাকিস্তানে আটক সকল বাঙালিকে ফেরত নিতে চাই। এই দেশে থাকা অবাঙালিদের আমি দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে পারি কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ, আমি একজন মানুষ। মানবিক কারণে তা করিনি। তবে এদের বেশি দিন রাখা যায় না। কারণ, আমার দেশে খাদ্যসহ নানা সমস্যা রয়েছে।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে

প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আবারও বলেন, খুব শিগগিরই বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।’ পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সম্পর্কে তিনি শুধু বলেন, ‘বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও সিদ্ধু পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায় কিনা, তার ওপর গণভোট নেওয়া যেতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী। বিশেষভাবে সে উপমহাদেশের দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিতে বাস করতে চায়।’