• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

এই সময় আপনার সন্তানকে কি বাইরে খেলতে দেবেন?

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২০  

 

করোনা ভাইরাসের দাপট যেন কিছুতেই কমছে না। আতঙ্কে বিশ্বের অনেক দেশেরই স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘরবন্দি শিশুদের কী করতে দেবেন আর কী দেবেন না তা নিয়ে দোটানায় পড়েছেন মা-বাবারা। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, সন্তানকে বাইরে খেলতে পাঠাতে পারবেন কি না। সামাজিক দূরত্ব বলতে কি তাদের খেলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা? প্রশ্নগুলো উত্তর খোঁজার আগে ইতালির ক্যাথরিন উইলসনের কথা শুনুন। 

‘আমার হাতে সময় বদলে দেওয়ার সুযোগ থাকলে কদিন আগে ফিরে যেতাম আর পরিবারের সদস্যদের প্রতিবেশীর বাড়িতে রাতের খাবার খেতে পাঠাতাম না’- বলছিলেন ক্যাথরিন। 

সপ্তাহ দুয়েক আগে যখন ইতালিজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছিল, তখন পর্যন্ত মানুষকে বাড়িতে থাকতে হবে কি না, তেমন কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। রোমে বসবাসকারী দুই সন্তানের মা ক্যাথরিনও করোনাকে অতটা গুরুত্ব দেননি। 

আরও দুই পরিবারের সঙ্গে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে খাবারের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন ক্যাথরিন পরিবার। ক্যাথরিন তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি আর আমার স্বামী ভেবেছিলাম, আমরা তো কারও অ্যাপার্টমেন্টেই যাচ্ছি। এখানে তো আর বড় কোনো জমায়েত হচ্ছে না।’

ক্যাথরিন বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম স্কুল ছুটি মানে সন্তানের জন্য ছুটির সময়। অনেক মা একই রকম আচরণ করেন। তারা মনে করেন, দারুণ একটা ছুটি মিলল। যেসব পার্কে কখনো আগে যাওয়া হয়নি, সেখানেও সন্তানকে নিয়ে যান।’

দাওয়াত খেতে যাওয়ার সামান্য ভুলের মাশুল দিচ্ছেন এখন ক্যাথরিন। সারাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারি রূপ নেওয়ার পর এখন তিনি আফসোস করে বলছেন, ‘তখন যদি আরেকটু সতর্ক হতাম। পরিবারের সদস্যদের চলাফেরায় যদি আরেকটু সীমারেখা টেনে দিতাম, তবে এমন দিন দেখতে হতো না। এটা না করা বোকামি ছিল। তবে ওই সময় “না” বলাটাও কঠিন হতো।’

কিছুদিনের মধ্যেই ইতালি সরকার পুরোপুরি অচলাবস্থা জারি করে। এর মানে, কোনো পার্কে যাওয়া যাবে না, কোথাও খেলা যাবে না। 

বিশ্বজুড়ে ক্যাথরিন উইলসনের মতো অনেক মা-বাবাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন, সন্তানকে বাইরে খেলতে দেবন না কি দেবেন না। অন্য দিকে, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বত্র লকডাউন করা হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিকভাবে দূরত্ব রাখা জরুরি।

ম্যারিল্যান্ডের জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক কেরি অ্যালথপ বলেছেন, প্রত্যেকের সামাজিক দূরত্ব রাখা প্রয়োজন। বয়স্ক ও শিশুর মধ্যে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এর মানে হলো বাস্কেটবল বা ফুটবলের মতো খেলাও নিরাপদ নয়। 

শিশুরা চাইলে টেনিস, লুকোচুরির মতো কম সংস্পর্শে আসা লাগে এমন খেলাগুলো খেলতে পারে। তবে বড়দের খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন পরস্পরের খুব কাছে না আসে। 

অ্যালথপ বলেন, শিশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা যায় না কিংবা দেখা গেলেও খুব কম দেখা যায়। এর অর্থ, শিশুকে সুস্থ দেখালেও করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে কমিউনিটিতে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এখন থেকে তাই মা-বাবাকেও নিজেদের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে মা-বাবাকে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। ঘরে খেলা যায় এবং একা একা খেলা যায় এমন খেলাগুলো খেলতে দিতে হবে। তাদের করোনা ভাইরাসের বিষয়টিকে সহজ করে বুঝিয়ে দিতে হবে। 

মনে রাখবেন, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা মানে এখন সমাজবিরোধী কিছু নয়। বাইরে গিয়ে মেলামেশার চেয়ে অনলাইনে বন্ধু ও পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাই এখন নিরাপদ।