• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

একনজরে জুমার দিনের বিশেষ আমলসমূহ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০১৯  

 

জুমার দিন হলো মুসলিমদের সাপ্তাহিক মিলনমেলা ও সমাবেশের দিন। তাই এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুময়া’ বা জুমার দিন বলা হয়। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত, মর্যাদা ও মহিমান্বিতপূর্ণ দিন হলো জুমআর দিন। এই দিনকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য অলৌকিক ও ঐতিহাসিক ঘটনা। মহামহিম স্রষ্টা আল-কুরআনে ‘আল-জুময়া’ নামে স্বতন্ত্র্য একটি সুরা নাজিল করে দিবসটিকে আরও মহিমান্বিত করেছেন। মহিমান্বিত ও পূণ্যময় এই দিনটি মুমিনের জন্য সওয়াব বৃদ্ধি, গুনাহ মোচন, দয়াময় স্রষ্টার নৈকট্য লাভের বিশেষ অফার ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে আমাদের মাঝে ফিরে আসে। তাই এ দিনটিকে অবহেলায় না কাটিয়ে আসুন আমরা দিনটিকে কাজে লাগাই। চলুন জেনে নেওয়া যাক এ দিনের বিশেষ আমলগুলো :  

১. গোসল করা : যাদের ওপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সা.) ওয়াজিব করেছেন। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ। [বুখারি : ৮৯৮]

২. জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। [বুখারি : ৮৮০]

৩. মিসওয়াক করা। [ইবনু মাজাহ : ১০৯৮, বুখারি : ৮৮৭]

৪. শরীরে তেল ব্যবহার করা। [বুখারি : ৮৮৩]

৫. উত্তম পোশাক পরিধান করা। [ইবনু মাজাহ : ১০৯৭]

৬. মুসুল্লিদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। [তিরমিজি : ৫০৯, ইবনু মাজাহ : ১১৩৬]

৭. মনযোগসহ খুৎবাহ শোনা ও চুপ থাকা। অবশ্য এটা ওয়াজিব। [বুখারি : ৯৩৪, মুসলিম : ৮৫৭, আবু দাউদ : ১১১৩]

৮. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। [বুখারী : ৮৮১, মুসলিম : ৮৫০]

৯. পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা। [আবু দাউদ : ৩৪৫]

১০. জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাকাতে সুরা সাজদা (সুরা নং ৩২) আর ২য় রাকাতে সুরা ইনসান বা দাহর (সুরা নং ৭৬) পাঠ করা। [বুখারি : ৮৯১, মুসলিম : ৮৭৯]

১১. সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত আদায় করা। অথবা সুরা আলা ও সুরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। [মুসলিম : ৮৭৭, ৮৭৮]

১২. জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা। [আবু দাউদ : ১০৪৭]

১৩. এ দিন বেশি বেশি দুয়া করা। [বুখারি : ৯৩৫]

১৪. মুসল্লিদের ডিঙিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। [বুখারি : ৯১০, ৮৮৩]

১৫. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। [বুখারি : ৯১১, মুসলিম : ২১৭৭, ২১৭৮]

১৬. খুৎবা চলাকালীন মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। [বুখারি : ৯৩০]

১৭. জুমার দিন জুমার পূর্বে মসজিদে জিকির বা কোনো শিক্ষামূলক হালাকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। [আবু দাউদ : ১০৮৯]

১৮. কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। [নাসায়ি : ৭১৪, বুখারি : ৯৩৪]

১৯. মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। [বুখারি : ৮৫৩]

২০. ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। [আবু দাউদ : ১১১৯]

২১. ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। [আবু দাউদ : ১১১০, ইবনু মাজাহ : ১১৩৪]

২২. খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [আবু দাউদ : ১১০৮]

২৩. জুমার দিন সুরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। [হাকেম : ২/৩৬৮, বায়হাকি : ৩/২৪৯]

২৪. জুমার আজান দেওয়া। [বুখারি : ৯১২]

২৫. জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকাত সুন্নাত সালাত আদায় করা। [বুখারি : ১৮২, মুসলিম: ৮৮১, আবু দাউদ : ১১৩০]

২৬. উজর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমা চালু না করা। আর উজর হলো এলাকাটি খুব বড় হওয়া বা প্রচুর জনবসতি থাকা বা মসজিদ দূরে হওয়া বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া বা কোনো ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। [ইবনু কুদামা, আলমুগনি, ৩/২১২]

২৭. ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। [আবু দাউদ : ১১১৪]

২৮. একান্ত উজর না থাকলে দুই পিলারের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। [হাকেম : ১/১২৮]

২৯. সালাতের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে। [আবু দাউদ : ৬২]

৩০. কোনো নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে না হাঁটা। অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। [বুখারি : ৫১০]

৩১. এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। [আবু দাউদ : ১৩৩২]

৩২. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত অন্তরে জাগরূক রাখা।

৩৩. হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।

৩৪. খুৎবার সময় খতিবের কোনো কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরিক হওয়া। [বুখারি : ১০২৯, মুসলিম : ৮৯৭]

৩৫. যেখানে জুমার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হলো ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোনো কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। [মুসলিম : ৭১০, বুখারি : ৮৪৮]

৩৬. ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।

লেখক, আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
শিক্ষক, ইনসাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা।