• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

কখন কোন খাবার কতটুকু খাবেন?

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

সঠিক ও পরিমিত আহার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে পারি। আর মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা সহজেই মানসিক চাপ বা টেনশন দূর করতে পারি। অর্থাৎ সঠিক ও পরিমিত আহার, ব্যায়াম এবং টেনশন কমানো কৌশলের মাধ্যমে জীবনধারা পরিবর্তন করে আমরা ‘সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে পারি।

এভাবে জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘সামগ্রিক স্বাস্থ্য’ উন্নয়ন শুধু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধই করে না, স্বাস্থ্যের এ উন্নয়ন মানুষকে দক্ষ মানবসম্পদ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে এবং মানবজীবন ও সমাজকে সফল করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই ইউরোপে স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ও মানবসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম করে যাচ্ছে। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ভালোলাগা, মানসিক প্রশান্তি, সামাজিক সুসম্পর্ক ও নৈতিক বা আত্মিক উন্নয়নের একটা সামগ্রিক অবস্থা তথা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে বোঝায়। এরূপ একটি সামগ্রিক স্বাস্থ্য গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, যৌন অক্ষমতা ইত্যাদি প্রতিরোধে ও নিরাময়ে আমরা সঠিক ও পরিমিত আহার, ওষুধি গুণসম্পন্ন খাবার, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কমানো কৌশলের পরামর্শ দিয়ে থাকি। শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে আজ আমরা সঠিক ও পরিমিত আহার এবং ব্যায়াম নিয়ে আলোচনা করব।
সঠিক ও পরিমিত আহার : সঠিক ও পরিমিত আহার বলতে সুপরিকল্পিতভাবে এমন খাদ্য গ্রহণ করাকে বুঝায়, যেখানে ক্ষতিকর খাদ্য বাদ দেয়া হয় এবং অন্যান্য খাদ্য কোনোটি পর্যাপ্ত পরিমাণে, কোনোটি পরিমিত পরিমাণে আহার করে ক্ষুধা মেটাতে হয়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে : শাক - যেকোনো ধরনের শাক, যেমন- পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, কলমি শাক, পালং শাক, লাল শাক, কচু শাক ইত্যাদি।
তরকারি : শসা, খিরাই, টমেটো, কাঁচা পেঁপে, লাউ, পটোল, করলা, উচ্ছে, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ডাঁটা, ফুলকপি, পাতাকফি, মুলা, চালকুমড়া, ধুন্দুল, সজনে, বেগুন প্রভৃতি।
অন্যান্য খাদ্য : মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ধনে, জিরা ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে। প্রচুর পানি পান করুন।

প্রতিদিন খাবারের সাথে ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত। এটা রোগপ্রতিরোধে অনেক উপকার করে। লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমলকী, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, আমড়া ও তাজা শাক-তরকারিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি থাকে।
পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে ফল
পাকা কলা, আম, পাকা পেয়ারা, লিচু, কাঁঠাল, কমলা, আপেল, পাকা পেঁপে, তরমুজ, নাসপতি, আঙ্গুর, আনারস, তাল, পাকা বেল, বেদানা, মিষ্টি বরই, আতা ফল প্রভৃতি।
শস্য জাতীয় খাদ্য - ভাত, রুটি, মুড়ি, চিঁড়া, খৈ, নোডুলস, সুজি, সেমাই, বার্লি, সাগু, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি।

প্রোটিন ও তেলসমৃদ্ধ খাদ্য
প্রাণী থেকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য- কম চর্বিযুক্ত গোশত, মাছ ও কুসুমছাড়া ডিম প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম খাওয়া যাবে।
উদ্ভিদ থেকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য
সব ধরনের ডাল, ছোলা, শিমের বিচি ও মটরশুঁটি এসব খাবার প্রতিবার খাবারের সময় ৩০ গ্রাম খাওয়া যাবে। মাছ, গোশত, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যের পরিবর্তেও এগুলো খাওয়া যাবে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য
ননফ্যাট দুধ বা মাখন তুলে নেয়া দুধ অথবা এ দুধ থেকে তৈরি ননফ্যাট দধি ১০০ গ্রাম, ননফ্যাট গুঁড়াদুধ ১৫ গ্রাম অথবা ফ্যাটমুক্ত পনির ৩০ গ্রাম গ্রহণ করা যাবে।
উদ্ভিদ তেল ও তেলসমৃদ্ধ খাদ্য
এসব খাদ্য পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। ক) বিভিন্ন ধরনের বাদাম-চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম খ) বিভিন্ন উদ্ভিদ তেল- সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, অলিভ অয়েল প্রভৃতি।

নিষিদ্ধ খাবার-
অধিক ফ্যাট ও কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাদ্য
ঘি, মাখন, মগজ, কলিজা, চামড়া, বেশি চর্বিযুক্ত গোশত, যেমন- গরু, খাশি, শূকরের গোশত, ফুলক্রিম দুধ ও ফুলক্রিম দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। এ খাবারগুলো রক্তের ফ্যাট ও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে চিনি, মিসরি, গুড়, গ্লুকোজ, রস, মধু, কোল্ডড্রিংকস বাদ দিতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলে সামান্য খাওয়া যাবে।
* এক সঙ্গে অতিরিক্ত আহার করলে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই বারবার অল্প আহার করুন। পেটের কিছু অংশ খাবার ও কিছু অংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করুন এবং কিছু অংশ ফাঁকা রেখে আহার শেষ করুন।
ব্যায়াম : বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম আছে; যেমন- অ্যারোবিক ব্যায়াম, অ্যানএরোবিক ব্যায়াম, স্ট্রেচিং ব্যায়াম ইত্যাদি। এক-একটির কার্যকারিতা এক এক রকমের।

অ্যারোবিক ব্যায়াম: হাঁটা, জগিং, দড়ি লাফানো, সাইকেল চালনা, সাঁতার কাটা, নাচা ইত্যাদি। এ ব্যায়ামকে ব্যায়ামের রাজা বলে। এ ব্যায়ামের ফলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যের সারাংশ, অক্সিজেন, হরমোন, অ্যান্টিবডি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পদার্থ আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ও জীবকোষে ভালোভাবে পৌঁছে যায় এবং আমাদের সবল, কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত করে। তবে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক চিকিৎসায় হার্ট বা শরীরের সামর্থ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করা উচিত।
অ্যানঅ্যারোবিক ব্যায়াম: এ ব্যায়াম মূলত মাংসপেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করে এবং দেহের আকার সুন্দর করে। যেমন: ভারোত্তোলন, স্প্রিং এবং অন্যান্য আধুনিক জিম-যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যায়াম ইত্যাদি। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক চিকিৎসায় এ ব্যায়ামের কোনো ভূমিকা নেই।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম : ভিন্ন ভিন্ন মাংসপেশির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আসনের এর মাধ্যমে এ ব্যায়াম করা হয়। এ ব্যায়াম মাংসপেশিকে নমনীয় করে, পেশির টেনশন কমায়, শরীরকে শিথিল, রক্ত চলাচলে সহযোগিতা করে।
এভাবে সঠিক ও পরিমিত আহার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।