• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের ওষুধ ৯৬ ভাগ সফল দাবি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২০  

রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনার চিকিৎসায় ফ্যাভিপিরাভির ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। জাপান, ভারতসহ অনেক দেশেই এন্টি ভাইরাল এই ওষুধটি করোনা রোগীদের খুব দ্রুত সুস্থ হবার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশে এই ঔষধটি তৈরি করছে ক্যান্সারের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিকন ফার্মা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করে কার্যকর ফল পেয়েছে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি (বিএসএম)। ঢাকায় পরিচালিত এই ট্রায়ালে করোনা আক্রান্তদের ৯৬ শতাংশ রোগী সেরে উঠেছেন।

গত ৮ জুলাই রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সেমিনারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফলাফল জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা।

সেমিনারে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশের চারটি হাসপাতালে ৫০ জন রোগীর ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। হাসপাতালগুলো হলো- কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।’

সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের চার দিনের মাথায় ৪৮ শতাংশ এবং ১০ দিনের মাথায় ৯৬ শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছেন বা সেরে উঠেছেন। পরীক্ষার সময় প্লাসেবা গ্রুপের (যাদের বিকল্প ওষুধ দেওয়া হয়, বাস্তবে তা ওষুধ নয়) ক্ষেত্রে এই হার ছিল চারদিনের মধ্যে শূন্য শতাংশ এবং ১০ দিনের মধ্যে ৫২ শতাংশ। বিকল্প ওষুধ গ্রহণকারীদের চেয়ে এই ওষুধে রোগীর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা তিনগুণ উন্নতি হয়েছে। তবে জটিল রোগী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই ওষুধ দেওয়া হয়নি।

সেমিনারে বলা হয়, সবচেয়ে ভালো দিক হল, এ ওষুধ গ্রহণে রোগীর লিভার, কিডনি ও রক্তে শর্করার কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ফ্যাভিপিরা ও বিকল্প ওষুধ গ্রহণকারী- এই দুই গ্রুপের রোগীদের উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না।

যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ নন বা কোনও লক্ষণ নেই- তাদের এই ওষুধ গ্রহণে নিষেধ করেন অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা। তিনি বলেন, এই ওষুধটি শুধু তারাই খাবেন, যারা আরটি পিসিআর পজিটিভ।

বিকন ফার্মার প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৪০০ টাকা। একজন রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে রোগের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সাত থেকে দশ দিনের কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।

এদিকে, মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন প্রাথমিক হিউম্যান ট্রায়ালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো সফল হওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা স্পুটনিক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশটির সেশনভ ফার্স্ট মস্কো স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ সাফল্য দেখিয়েছেন।

গত ১৮ জুন রাশিয়ার গামালেই ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির তৈরি এই করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে ভ্যাকসিনটি উত্তীর্ণ হয়েছে।

ইনস্টিটিউট ফর ট্রানস্লেশনাল মেডিসিন অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির পরিচালক ভাদিম তারাসোভ বলেন, করোনার বিরুদ্ধে বিশ্বে প্রথমবার স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে সেশনভ ইউভিার্সিটি। ট্রায়ালে অংশ নেয়া স্বেচ্ছাসেবকদের প্রথম দলটিকে আগামী বুধবার (১৫ জুলাই) ছেড়ে দেয়া হবে। দ্বিতীয় দলটি আগামী ২০ জুলাই ছাড়া পাচ্ছে।

সেশনভ ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব মেডিকাল প্যারাসাইটোলজির পরিচালক আলেক্সান্দার লুকাশেভ বলেন, তাদের গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করা; যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ তা নিশ্চিত হয়েছে। এটি বাজারের অন্য ভ্যাকসিনগুলোর মতোই নিরাপদ।

এর আগে বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে চীন। গত ২৯ জুন এ খবর দিয়েছিল ইয়াহু নিউজ। খবরে বলা হয়েছিল, দেশটির সেনাবাহিনীর গবেষণা শাখা এবং স্যানসিনো বায়োলজিকসের (৬১৮৫.এইচকে) তৈরি একটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মানব শরীরে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে।

তবে আপাতত ভ্যাকসিন শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যবহার করা হবে। স্যানসিনো বলেছে, চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন গত ২৫ জুন এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটি সৈন্যদের দেহে এক বছরের জন্য প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। স্যানসিনো বায়োলজিকস এবং একাডেমি অব মিলিটারির একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্যানসিনো বায়োলজিকস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটি চীনের বাইরেও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কানাডায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদনে দেয়া হয়েছে। তবে চীনের লজিস্টিক সাপোর্ট বিভাগের অনুমোদনের আগে এটি ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে না।

খবরে বলা হয়, বাণিজ্যিক কারণে ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করা হবে না। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যদের এই ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক কিনা তাও প্রকাশ করা হয়নি।

কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দারুণভাবে সফল হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে কিনা তা নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।