• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

কীভাবে জান্নাতে প্রাসাদ গড়বেন?

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০১৯  

 

কখনো কি এমন হয়েছে যে, টিভিতে বা পেপারে অথবা কোথাও বেড়াতে গিয়ে এমন কোনো প্রাসাদ দেখলেন যা আপনার মন ভরিয়ে দিল? আপনার মনে হলো, আপনার নিজের বাড়ি তো এই প্রাসাদের তুলনায় কিছুই না! এমনকি যদি আপনি আলিশান বাড়িতেও থাকেন, তবেও তো এমন হয়, আরো সুন্দর বাড়ি দেখে তার প্রতি মনে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। মনে হয়, “ইশ! আমার যদি এরকম একটি বাড়ি থাকত!” এটিই দুনিয়ার জীবনের সীমাবদ্ধতা। দুনিয়ার সুখগুলো ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতেই। আখিরাতের তো হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

لَقَابُ قَوْسٍ في الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِمَّا تَطْلُعُ عَلَيْهِ الشَّمْسُ وَتَغْرُبُ

‘জান্নাতের ধনুক পরিমাণ স্থান দুনিয়ার সমস্ত কিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ২৭৯৩] 

দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য তো জান্নাতের একটি ইটের দামেরও সমান হবে না। জান্নাতে রোগ-শোক নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই। আমরা দুনিয়া সাজাতে কত পরিশ্রম করি, অথচ জান্নাতের বাড়ি তো কত সহজেই বানানো যায়। শুধু ইচ্ছা আর জ্ঞানের অভাবে আমরা নিজেদের বঞ্চিত করছি। এই সিরিজে আমরা আলোচনা করব খুব সহজে জান্নাতে বাড়ি বানানোর খুব সহজ কিছু উপায় নিয়ে। সঙ্গেই থাকুন আমাদের। 

১. সুরা ইখলাস দশবার পাঠ করা

মুয়ায ইবনু আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

مَنْ قَرَأَ قُلْ هُوَ الله أَحَدٌ عَشَرَ مَرَّاتٍ بَنَى الله لَهُ بَيْتاً في الجَنَّةِ

‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিবেন।’ [তাবারানি, মু’জামুল কাবির: ৩৯৭] 

২. আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ

উসমান ইবনু আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

مَنْ بَنَى مَسْجدا لِلَّهِ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ مِثْلَهُ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটি প্রাসাদ বানিয়ে দিবেন।’ [আহমাদ, আলমুসনাদ: ৫০৬] 

৩. বারো রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়া

উম্মু হাবিবাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

 مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلاَّ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ

‘যে মুসলিম প্রতিদিন ফরয নামায ছাড়াও বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নাত (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) সালাত পড়ে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন। [মুসলিম, আসসাহিহ: ১৭২৯] 

ফজরের ফরয সালাতের আগে ২ রাকাত, যুহরের ফরয সালাতের আগে ৪ আর পরে ২, মাগরিবের ফরযের পরে ২ আর ইশার ফরযের পরে ২ রাকাত। এই হলো ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। 

৪. জামাতে সালাতের সময় খালি কাতার ভরাট করা

জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি বা সারির মাঝে ফাঁক দেখি। কিন্তু আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, আমরা অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে ভরাট করবে। অথচ উরওয়া ইবনু যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

مَنْ سَدَّ فُرْجَةً فِي صَفٍّ رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً ، أَوْ بَنَى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ

‘যে ব্যক্তি (জামাতে সালাতের) খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং জান্নাতে তার জন্যে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিবেন। [ইবনু আবি শাইবাহ, আলমুসান্নাফ: ৩৮৪৪] 

৫. নিজে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও তর্ক পরিহার করা

৬. মজা করেও মিথ্যা কথা না বলা 

৭. উত্তম আখলাক বজায় রাখা 
আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

 أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِى وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِى أَعلي الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ

‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ [আবু দাউদ, আসসুনান: ৪৮০২] 

৮. বাজারে প্রবেশের দুয়া পড়া
বাজারকে দুনিয়ার নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার বাজারে প্রবেশের দুয়ায় রয়েছে অনেক ফযিলত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে এই দু’আটি পড়বে—

 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গুনাহ মাফ করে দেন। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। [তিরমিযি, আসসুনান: ৩৪২৮] 

৯. সন্তান মারা গেলে সবর করা
নিঃসন্দেহে সন্তানের মৃত্যু আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা। যেই বাবা-মা এই কঠিন পরীক্ষা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করবেন, তাঁদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল প্রতিদান রয়েছে। আবু মুসা আল-আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কারও সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবয করে ফেলেছ?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তার কলিজার টুকরার জান কবয করে ফেলেছ?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা কী বলেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য ধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে।’ তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ

‘তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করো এবং তার নামকরণ করো ‘বাইতুল হামদ’ অর্থাৎ প্রশংসার ঘর।’ [তিরমিযি, আসসুনান: ১০২১] 

১০. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

أَنَا زَعِيمٌ وَالزَّعِيمُ الْحَمِيلُ لِمَنْ آمَنَ بِى وَأَسْلَمَ وَجَاهَدَ فِى سَبِيلِ اللَّهِ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ وَبِبَيْتٍ فِى وَسَطِ الْجَنَّةِ وَأَنَا زَعِيمٌ لِمَنْ آمَنَ بِى وَأَسْلَمَ وَهَاجَرَ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ وَبِبَيْتٍ فِى وَسَطِ الْجَنَّةِ وَبِبَيْتٍ فِى أَعْلَى غُرَفِ الْجَنَّةِ... 

আমি হচ্ছি একজন যাইম। আর যাইম হচ্ছে জামিনদার তার জন্যে, যে আমার উপর ঈমান আনবে এবং ইসলাম কবুল করবে এবং হিজরত করবে; তার জন্যে জান্নাতের প্রান্তদেশে একটি বাড়ি আর জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি। আর আমি হচ্ছি জামিনদার তার জন্যে, যে আমার উপর ঈমান আনবে এবং ইসলাম কবুল করবে ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে; তার জন্যে জান্নাতের প্রান্তদেশে একটি বাড়ি, জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি এবং জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি…। [ইবনু হিব্বান, আসসাহিহ: ৪৬১৯]