• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

কোরআন-হাদিসের শিক্ষা:করোনায় বিপদ যত বড়ই হোক,সবার কথা ভাবতে হবে

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২০  

 

নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও যদি তা পছন্দ না করে তাহলে সে কখনও মুমিন হতে পারবে না। (সহি বুখারী)।
নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও যদি তা পছন্দ না করে তাহলে সে কখনও মুমিন হতে পারবে না। (সহি বুখারী)।

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)।
হাদিসে আরো উল্লেখ আছে, মুওয়াত্তা মালেক ও ইবন মাজাহ শরিফে হজরত ইবন উমর ও ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যাভিচার ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী দেখা দেয়।

মরণঘাতী করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে মহামারীর আকার ধারণ করেছে : 

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসটি এখন বৈশ্বিক মহামারি। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাসটি। এর বাহ্যিক কারণ হয়ত আছে কিন্তু একজন ধার্মিক মুসলিম সব সময় কোরআন-হাদিসের নির্দেশনার প্রতিও দৃষ্টি রাখে সচেতনভাবে এবং এ থেকে শিক্ষাও গ্রহন করে।

সে হিসেবে আমাদের অবশ্যই কোরআন-হাদিসে যে কারণগুলোর কথা বলা হয়েছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসব অপরাধ থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। তাওবা করতে হবে জুলুম, অশ্লীলতা এবং সব ধরনের পাপাচার থেকে।

তো চলুন আজ আমরা পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত কিছু মহামারির কারণ জেনে নিই এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। 

পবিত্র কোরআনের দু’টি সূরায় মহামারীর কথা এসেছে। প্রথমটি সূরা বাকারায়। ২৪৩ নম্বর আয়াতে। হজরত হিযকিল (আ.) এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।

বানু ইসরাইলের একটি দলের মাঝে মহামারী দেখা দিয়েছিল। আল্লাহর নির্দেশ ছিল মৃত্যু ভয়ে পলায়ন না করার। কিন্তু তারা পালিয়ে নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল।

দুই পাহাড়ের মাঝে একটি উপত্যকায় তারা সমবেতভাবে পালিয়ে এসেছিল। আল্লাহ তাদের সবাইকে একসঙ্গে মৃত্যু দেন।

কোরআনের ভাষায়, তুমি কি জান না সে সব লোকের কথা, যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে নিজেদের আবাসভূমি পরিত্যাগ করেছিল, তারপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হোক’। তারপর আল্লাহ তাদের জীবিত করেছিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

বহু দিন পর হজরত হিযকিল একবার এ পথে যাচ্ছিলেন। সেখানে এত মানুষের কংকাল দেখে আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন এদের অবস্থা।

হজরত হিযকিলের মাধ্যমে আল্লাহ এদের আবার জীবিত করেন। এরা তাদের ঘরে ফিরে গিয়ে দেখে তাদের সন্তান সন্ততি বড় হয়ে গিয়েছে। তাদেরকে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেয় তাদের বংশধররা। পরিচয় জানার পর তারা তাদের বরণ করে নেয়।

বোঝা যায়, এরা নিজেরা বাঁচার জন্য সন্তান সন্ততি এবং অন্য অসুস্থদের পরিত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তাদের এ স্বার্থপরতার শাস্তিস্বরূপ আজাবের মাধ্যমে শেষ করে দেন পলায়নপর পুরো সমষ্টিকে।

এ আয়াতে মূলত এ শিক্ষা রয়েছে, বিপদের সময় কেবল নিজেকে বাঁচাতে চাইলে আল্লাহ আরো বড় বিপদে আক্রান্ত করতে পারেন। বিপদ যত বড়ই হোক না কেন সবার কথা ভাবতে হবে আমাদের। মানুষকে মানবিক হওয়ার শিক্ষা দেয় এ ঘটনা। অন্যদের বিপদে ফেলে কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধির চিন্তার মতো মন্দ কিছু নেই আল্লাহর কাছে।

বর্তমান পরিস্হিতিতে নিম্নের হাদিস থেকে আমারা আরো শিক্ষা নিতে পারি-

‘হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে বা অঞ্চলে যদি কোনে প্রকার প্লেগ বা মহামারি জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তোমরা যারা (ওই অঞ্চলের) বাহিরে আছ তারা ওই শহরে প্রবেশ করো না। আর যে শহরে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে তোমরা যদি সে শহরে বসবাস করো তবে তোমরা সে অঞ্চল বা শহর থেকে বাহির হয়ো না।’ (বুখারি, মুসলিম)।

পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফে আছে, মিসরের কিবতিদের আল্লাহ মহামারী দিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি তাদের প্লাবণ, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। এগুলো স্পষ্ট নিদর্শন; কিন্তু তারা দাম্ভিকই রয়ে গেল, আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়। (সূরা : আরাফ, আয়াত : ১৩৩)।

বানু ইসরাইলের ওপর দীর্ঘদিনের জুলুমের কারণে আল্লাহ তাদের এ শাস্তি দিয়েছিলেন। একদিনে সত্বর হাজার কিবতি মৃত্যুবরণ করেছিল মহামারীতে। (তাফসীরে তাবারি)।

ফেরাউন বলেছিল, হে মুসা, এ শাস্তি সরিয়ে নাও, তাহলে বানু ইসরাইলকে মুক্ত করে দেব। হজরত মুসা দোয়া করলেন। মুসার দোয়ার পর মহামারী কেটে গিয়েছিল। কিন্তু ফেরাউন তার ওয়াদা রক্ষা করেনি। তারপর সাগরে ডুবে মরেছিল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়। সে ইতিহাস সবারই জানা।

সূরা আরাফের অন্য আয়াতে বালআম ইবনে বাউরের ঘটনার ইঙ্গিত রয়েছে। বালআম ইবনে বাউর হজরত মুসার বিরুদ্ধে বদ দোয়া করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার জবান থেকে নিজের সম্প্রদায়ের জন্যই বদ দোয়া বের হয়।

তখন সে তার জাতির লোকদের পরামর্শ দেয় যেন সুন্দরী নারীদের বানু ইসরাইলের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পাঠানো হয়। সুন্দরী রূপসী মেয়েরা বানু ইসরাইলিদের কাছে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যায়। বানু ইসরাইল এই নারীদের সঙ্গে ব্যাভিচারে লিপ্ত হলে আল্লাহর গজব হিসেবে মহামারী আসে।

তাতে সত্বর হাজার ইহুদি মারা যায়। (সূরা আরাফ ১৭৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে তাবারি ও ইবন কাসীর দ্রষ্টব্য)।

বিশ্বজুড়ে মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের এ সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের মানুষের সামনে আমরা পারি ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরতে। মহামারীর সময়টিকে আমরা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।

অন্য ধর্মাবলম্বি মানুষের প্রতি ঘৃণা না ছড়িয়ে আক্রান্ত মানুষের সেবা ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের আকৃষ্ট করতে পারি ইসলাম ধর্মে। রাজনৈতিক ইসলাম নয়; মানবিক ইসলামের প্রতি আমরা সুন্দরভাবে আহ্বান জানাতে পারি বিশ্বের সব ধর্ম ও জাতিকে।

ইসলামের মূল শিক্ষার কাছাকাছি যেতে না পারলে আমরা কখনওই নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করতে পারি না। মনে রাখবেন, ইসলাম সব সময় মানবিক হতে শিক্ষা দেয়। সংবেদনশীল ও সহানুভূতিসম্পন্ন হবার শিক্ষা দেয় ইসলাম।

নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও যদি তা পছন্দ না করে তাহলে সে কখনও মুমিন হতে পারবে না। (সহি বুখারী)।

আসুন, করোনাভাইরাসের এই বিপদ মুহূর্তে আমরা অসহায় খেটে খাওয়া দিনমজুর, দুস্থ ও দরিদ্রদের সহায়তায় এগিয়ে আসি। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ বাড়িয়ে দেই। নিজেদের সুরক্ষিত রেখেই অসুস্থদের সেবার চিন্তা করি।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সহমর্মিতা দেখে পুরো মানব জাতির প্রতিই সদয় দৃষ্টি দেবেন এবং দ্রুতই উঠিয়ে নেবেন মরণঘাতী করোনাভাইরাস। ইনশাআল্লাহ! আমিন।