• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

গ্রেনেড হামলা: বিচারকাজ যেভাবে বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে বিএনপি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯  

২১ আগস্ট, দেশের ইতিহাসে আরেকটি বিভীষিকাময় দিন। সারাদেশে জঙ্গিহামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড।

সেই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।

জামাতের শীর্ষস্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আক্রমণের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলো, এ কথা বরাবরই প্রমাণিত। তাই ক্ষমতায় থাকাকালীন ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের সঠিক তদন্ত না করার পক্ষে ছিলো বিএনপি। তারা তদন্তটি একেবারে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলো। শুধু তাই নয়, আক্রমণকারীদের বিচার থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেছিল।

ওই হামলার সব ঘটনাগুলো একদমই স্পষ্ট ছিল। সাধারণত, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ সব ধরনের সভা সমাবেশে আওয়ামী লীগের নিরাপত্তা বজায় রাখতে কাজ করতো। এমনকি নিকটবর্তী ভবনগুলোর ছাদ থেকেও তারা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করতো। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট, স্বেচ্ছাসেবকদের আশপাশের ভবনের কোন ছাদে যাওয়ার অনুমতিই দেওয়া হয়নি।

গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং যেসব নেতাকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করছিলো তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। ওই সময়ই তারা হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। হামলার পরবর্তী সময়ে সেখানে থেকে ঘটনার আলামত ও প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ওই এলাকা বন্ধ করা হলেও সেখানকার প্রমাণ ধ্বংস করতে ওই এলাকা সাবানমিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। এমনকি উদ্ধারকৃত গ্রেনেডগুলোও সংরক্ষণ না করে ধ্বংস করা হয়।

কিছুটা চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা লোক দেখানোর জন্য তখন বিএনপি-জামাত সরকার বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তি দ্বারা জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করে। তদন্তকাজ শেষে এই কমিশন জানিয়েছিল যে ‘বিদেশি ও স্থানীয় শত্রুরা’ এই হামলা চালিয়েছিল। দুই বছর পরে একই বিচারপতি জয়নাল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে উন্নীত হন, সম্ভবত তার ‘রিপোর্ট’ এর জন্যই তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।

বিএনপি-জামাত সরকারের বিচার প্রক্রিয়ার অবসান ঘটানোর মূল কৌশলগুলির মধ্যে একটি ছিল নির্দোষ ব্যক্তিদেরকে জড়িত করা। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ক্ষুদ্র অপরাধী জজ মিয়া। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মিথ্যা অভিযোগে জড়িত ছিল বলে তাকে বেশ জোরালোভাবে ফাসিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ১০ জুন ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জজ মিয়াকে তার নিজ বাড়ি গ্রেপ্তার করে। তিন বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আরেকজন জড়িত ব্যক্তির নাম জানা যায়, তিনি পার্থ। তাকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বলা হয়। ওই নির্যাতনের কারণে এখনও পোস্টট্রমাটিক বিষণ্নতায় ভুগছেন তিনি।

হামলাকারীদের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও আক্রমণকারী সন্ত্রাসী তাজউদ্দিন ছিলেন বিএনপি’র উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। তারেক রহমানের নির্দেশে খালেদা জিয়ার ভাতিজা ও তার এপিএস -১ সাইফুল ইসলাম ডিউকসহ অন্যদের বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। এরা সবাই ডিজিএফআই এর মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।

ওই হামলার অন্যতম প্রধান আক্রমণকারী হুজি প্রধান মুফতি হান্নান। ২১শে আগস্ট হামলায় জড়িত থাকলেও বিএনপি-জামাত সরকারের ক্ষমতায় থাকায় হান্নান ও তার সহযোগী বিপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল না। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা ২১শে আগস্ট হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

খালেদা জিয়ার ভূমিকা

বাংলাদেশের মাটিতে নিন্দাজনক হামলার ঘটনার পর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার পরিবর্তে নিজের সত্যিকারের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি সংসদে সংসদে হাস্যরস করে মন্তব্য করেছিলেন: ‘কে তাকে হত্যা করতে চায়?’ এবং আরও বলেছিলেন যে শেখ হাসিনা তার নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে করে জনসভায় গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলেন। এসময় বিএনপি-জামাত নেতাকর্মীদের মধ্যে মতামতের একটি পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয় ছিল। তারা বলেছিলো আওয়ামী লীগ বিদেশে সহানুভূতি অর্জনের জন্যই নিজের লোকদের উপর হামলা চালায়। 

খালেদা জিয়ার আরো একটি বিতর্কিত ভূমিকার স্পষ্ট প্রকাশ পায়, যখন ২১শে আগস্ট হামলার তদন্ত করার জন্য খালেদা জিয়াকে তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান রুমী খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিন্তু খালেদা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি যদি এটি নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না যে তিনি সরাসরি এতে জড়িত ছিলেন, অন্তত এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিলো যে খালেদা জিয়া জানতেন যে তারেক রহমান ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন। আর এ কারণেই পুত্রকে আগে বাঁচানো, তারপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের কল্যাণের কথা ভাবা।