• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

চিকিৎসায় যক্ষা ভালো হয়

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯  

যক্ষ্মা বা যক্ষা (Tuberculosis বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) নামক একটি জীবাণু এই রোগের জন্য দায়ী। ‘যক্ষ্মা’ শব্দটা বাংলা ‘রাজক্ষয়’ শব্দ থেকে এসেছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীরা খুব রোগা হয়ে পড়েন। যক্ষ্মা রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় ফুসফুস, যদিও হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়া শরীরের প্রায় যেকোনও অঙ্গেই যক্ষ্মা রোগ হতে পারে এমনকি কিডনি, মেরুদন্ড অথবা মস্তিষ্ক পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই কিন্তু যক্ষ্মা হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।এটি একমাত্র জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট প্রদাহজনিত রোগ যা সারা বিশ্বে মৃত্যুর কারন হিসেবে দ্বিতীয়অবস্থানে আছে।

১৮৮২ সালে  জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কোঁখের এইরোগের কারন আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত ১৮ ও ১৯শতকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাতে মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

রবার্ট কোঁখের এই আবিষ্কারের পরে এই রোগনির্মূলে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়, ও পরবর্তিতে বিভিন্ন ওষুধ আবিস্কারের কারণে বিশ্বব্যাপী এইরোগের প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে আসছে, এমনকি জাতিসংঘ আশা প্রকাশ করছে যে, ২০২৫ সাল নাগাদ এ রোগটি সারা বিশ্ব থেকে পুরোপুরি নির্মুল হবে।

**বিভিন্ন ধরণের যক্ষাঃ
চিকিৎসকগণ সাধারণত দু ধরনের যক্ষার কথাবলে থাকেন;

#সুপ্ত যক্ষাঃ
যক্ষা সৃষ্টিকারী জীবাণু সুপ্তাবস্থায় থাকে ওশারীরিক কোন লক্ষণ প্রকাশ করেনা বা ছড়ায় না।কিন্তু যে কোন সময় এটি সক্রিয় হতে পারে।

#সক্রিয় যক্ষাঃ
লক্ষণ প্রকাশকারি যক্ষা ও সংক্রামক।

**যক্ষার লক্ষণঃ
#ফুসফুসের যক্ষার লক্ষনঃ
-সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খুশখুশে কাশি থাকে।
-জ্বর বিশেষ করে বিকালে বা সন্ধ্যায়
-কফের সাথে রক্ত যেতে পারে অনেক ক্ষেত্রে নাও যেতে পারে
-শ্বাস নেয়ার সময় বা হাচি-কাশি দেয়ার সময় বুকে ব্যাথা হতে পারে।
-ওজন কমে যায়
-শারীরিক দূর্বলতা, অবসাদ দেখা দেয়
-খাদ্যে অরুচি বা ক্ষুধামন্দা দেখা যায়।

#ফুসফুস বহির্ভুত যক্ষার লক্ষণঃ

-ত্বকের যক্ষাঃচামড়া ফুলে যায়,লাল হয়ে ওঠে, ঘা হয়, কালো কালো দাগ দেখা যায় চামড়ায়।

-অন্ত্র ও খাদ্য নালীর যক্ষাঃবদহজম হয়,পেটফুলে যায়,ক্ষুধামন্দা,পাতলাপায়খানা হয়।

-গ্রন্থিতে যক্ষাঃশরীরের বিভিন্ন গ্রন্থিগুলোর মধ্যে ঘাড়ের গ্রন্থিতে যক্ষা বেশি হয়।যক্ষা হলে গ্রন্থি ফুলে যায় এবং হরমোন তৈরি এবং এর প্রবাহে সমস্যা তৈরি হয়।

-কিডনির যক্ষাঃপেটের পাশে কোমড়ের উপরে ব্যাথা হয়,প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে তবে তা খালি চোখে দেখা যায় না,তাছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়।

**যক্ষার ঝুকিঃ
যক্ষার সময় মত চিকিৎসা না করাতে পারলে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে চলে যায় রোগী।যক্ষা বাতাসের মাধ্যমে ফুসফুস আক্রান্ত করে তবে রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে অন্যান্য অঙ্গেও প্রভাব ফেলে, যেমনাঃ

-মেনিনজাইটিস
-স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাথা
-অস্থিসন্ধির ক্ষয় ও তীব্র ব্যাথা
-যকৃত ও কিডনি বিকল
-হৃদরোগ। ইত্যাদি

**যক্ষার প্রভাবকঃ
যক্ষার জীবানু বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।তাই আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যারা থাকেন তাদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তবে জীবাণু প্রবেশ করলেই যক্ষা হয় না, যদি রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকে তবে হয়। এমন কিছু প্রভাবক আছে যা যক্ষাকে তরান্বিত করে যেমনঃ

-এইডস
-ধূমপান
-ডায়াবেটিস
-কয়েক টাইপের ক্যান্সার
-অপুষ্টি
-মাদকসেবনের অভ্যাস
-পরিযায়ী বা ঘন ঘন প্রবাস গমনকারী।

**যক্ষা শণাক্ত করনঃ
যক্ষা শণাক্ত করন করার জন্য রক্ত ও কফ পরীক্ষা করা হয়।এছাড়া বুকের এক্স-রে পরীক্ষা অথবা সিটি স্ক্যান কালচার টেস্ট ও করানো হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে।

পরীক্ষার ফল নেতিবাচক না হলেও অনেক সময় যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যেমনঃ  যক্ষার সংক্রমণের ৮-১০ সপ্তাহ পরে তা ত্বকের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তার আগে পরীক্ষা করলে ধরা নাও পড়তে পারে এইডস এর মতো কোন রোগের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অনেকসময় পরীক্ষায় যক্ষা রোগ ধরা পড়ে না। এছাড়া এইডস এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো প্রায় এক রকম হওয়ায় এইডস রোগীদের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি জটিল হয়ে থাকে। হামের টিকা নিলে এগুলোতে অনেক সময় জীবন্ত জীবাণু (Live virus) থাকে, এর জন্য ত্বক পরীক্ষায় যক্ষা ধরা নাও পড়তে পারে। শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু বেশী মাত্রায় ছেয়ে গেলে (Overwheliming TB disease) ত্বকের পরীক্ষায় রোগের জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে অনেক সময় সঠিকভাবে পরীক্ষা না করলেও এতে যক্ষা রোগের জীবাণু ধরা পড়ে না।এক্সরে করানোর জন্য ও বলা হয়।

**যক্ষার চিকিৎসাঃ
ডট পদ্ধতিতে(DOT)অর্থাৎ ডিরেক্টলি অবজার্বড থেরাপি র মাধ্যমে যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয়। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়স অনুসারে ঔষধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে। যক্ষার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে: এন্টিবায়োটিক সেবন। সাধারণত ৬-৯ মাস ব্যাপী এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে বলা হয়।কোর্স অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন না করলে এম ডি আর(মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট)  টিবি র সৃষ্টি হয়। এর চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক ছাড়াও আরও কিছু ওষুধ ব্যাবহার হয়।

**কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবেঃ
বাংলাদেশের সকল- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জেলা সদর হাসপাতাল বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষার চিকিৎসা করা হয় ও ঔষধ দেয়া হয়।মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে DOTS সেন্টার থাকে সেখান থেকে পরীক্ষা করানো যায় এবং চিকিৎসা পাওয়া যায়।

**প্রতিকারঃ
- জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেয়া
-হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা
-যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা
-রোগীর কফ থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা

সারা পৃথিবী তে যত যক্ষা রোগী আছে তার প্রায়  অর্ধেক আছে এই ভারতীয় উপমহাদেশে।এ অবস্থার জন্য দায়ী যক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সঠিক সময়ে টিকা না দেয়া।এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যক্ষার টিকাকে ইপিআই অন্তর্ভূক্ত করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।আর একটি ববদ্ধমূল ধারণা যক্ষায় মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে তা হলো যক্ষা হলেই মৃত্যু। যক্ষা উপযুক্ত চিকিৎসায় ভালো হয়।চিকিৎসা নিন সুস্থ থাকুন।