• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ডায়রিয়া সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯  

-স্যার আমার ডাইরিয়া হইছে, ভালো হইতেছে না।
-ঔষধ খেয়েছেন কোনো?
-জ্বি স্যার, ফিলমেট খাইছি..
-আর?
-এমোডিস ও খাইছি..
-আর?
-জিম্যাক্স খাইছি..
-আর?
-জক্স ও খাইসিলাম একটা..
-আর?
-ইমোটিল নিয়া আসছি, এখনো খাই নাই, তবে কাল রাইতে রস্টিল ট্যাবলেট খাইসিলাম একটা..
- মাশাল্লাহ.. আর কিছু?
- না স্যার আর কিছু না। তয় শরীরডা দুর্বল হয়ে গেছে। একটু ভিটামিন খাওয়া লাগতে পারে মনে হইতেছে..
-বাহ, ভেরী গুড আইডিয়া। তা কয়দিন হইলো ডাইরিয়া???
-গতকাল দুপুর থেকে শুরু হইসে, আজ সন্ধ্যা পার হইয়ে যাইতেসে। এখনো কমতেসে না। ৮-৯ বার টয়লেটে ঢুকে গেছি। স্যার এখন কি করব?

এটা হচ্ছে অধিকাংশ ডায়রিয়া রোগীর সাধারণ চিত্র।প্রথমে এই রোগীরা যায় ফার্মেসীতে, ফার্মেসীওয়ালা তাকে ফিলমেট, ফ্লাজিল, এমোডিস, মেট্রো, জক্স, ইমোটিল এগুলো সাজেস্ট করেন।সাথে আবার অনেকে এক কাঠি সরেস সোজাসুজি এন্টিবায়োটিক খেয়ে নেন গোটা চারেক ভেবে বসেন মেরে ফেলা গেছে পেটের সব কীট গুলাকে আর জ্বালাবে না। এতে উল্টো হয় ক্ষতি।পরে আসেন হাসপাতাল এ খুব ই আশংকাজনক অবস্থায়, ডিহাইড্রেটেড অবস্থায়

ডায়রিয়াল ডিজিজ এর জন্য পৃথিবীর সেরা হাসপাতাল, যেখানে ডাইরিয়ার চিকিৎসা খুব ভালো হয়? যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিদেশী চিকিৎসক রা এসে এসে চিকিৎসা শিখেন? রিসার্চ করেন?তা বাংলাদেশেই অবস্থিত।গর্ব সহকারেই উত্তরটা দিয়ে দেই,সেই সেরা যায়গাটা আমাদের দেশে। জায়গার নাম ICDDR'B (International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh)..
অর্থাৎ আমাদের বিখ্যাত "মহাখালী কলেরা হাসপাতাল।
৫৮ বছর পুরানো সেই প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন শত শত ডাইরিয়ার রোগী যায়।

তারা তাদের এত এত রোগীদের সাধারনত ঐসব ফিলমেট, মেট্রো, এমোডিস, ইমোটিল ইত্যাদির কোনটাই দেয় না।শুধু তাই ই না, সচরাচর তারা এন্টিবায়োটিক-ই দেয় না। এন্টিবায়োটিক ছাড়াই হাজার হাজার ডাইরিয়ার রোগী তারা ভালো করছে এবং সুনামের সাথেই করছে।

যেখানে আপনার বাসার সামনে ফার্মেসী তে গিয়ে ডাইরিয়া হয়েছে বলার আগেই একটা ফিলমেট/ফ্লাজিল বা ইমোটিল গিলায় দেয়, সেখানে এতবড় প্রতিষ্ঠান, দেশ বিদেশের সবাই এক নাম এ চিনে, সেখানে ওরা সেই সব ঔষধ পারতপক্ষে দেয়ই না কেন??
নিশ্চই যুক্তি আছে।

সেই যুক্তি নিয়েই কথা বলতে চাই আজকে সাথে আরও বলতে চাই কীভাবে বাচবেন ডায়রিয়া থেকে

সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ আপনি।
একদিন মনের অজান্তে বাইরের খাবার বা জীবানুযুক্ত খাবার বা পানি খেয়েছেন,
আপনার পেটে ভুটভাট শুরু হয়েছে।
কিছুক্ষন পর শুরু হলো ডাইরিয়া, পানির মত পায়খানা।সাথে বমি,সাথে জ্বর জ্বর ভাব।

এই রোগটিকে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ভাষায় বলি "গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস"। 

এই ডাইরিয়াটাই আমাদের দেশে বেশী হয় এবং আপনারা অস্থির হয়ে যান বস্তা বস্তা এন্টিবায়োটিক খেয়ে ডাইরিয়া কে "যায়গামত ব্রেক কষাতে"।আসলে যেটা আপনাদের বুঝতে হবে, এটাকে ব্রেক কষানো টা মূল চিকিৎসা না।
এ সময়ে মূল চিকিৎসা হলো শরীরের পানি ঠিক রাখা।

আবার বলি,
এ সময় মূল চিকিৎসা হলো শরীরের পানি ঠিক রাখা।

ডাইরিয়ার তীব্রতা ১-৫ দিনের মাঝে সাধারনত নিজে থেকেই কমে যাবে। আপনি শুধু শরীরে পানি ঠিক রাখেন।

আপনার যা যা করতে হবে তা হলোঃ

১.ওরাল স্যালাইন খাবেন, প্রতিবার পায়খানা হবার পর ১ গ্লাস করে।
২. ঘরের বাইরে বানানো কিছু খাবেন না
৩.দুধ এবং দুধের তৈরী কিছু খাবেন না।
৪.ফল ও ফলের রস খাবেন না।
৫.যদি কোন ধরনের ভিটামিন জাতীয় ঔষধ খেতে থাকেন, সেটা বন্ধ করে দিবেন।
৬. ডাইরিয়া ব্রেক কষানোর জন্য কখনোই ইমোটিল জাতীয় ঔষধ (গ্রুপ - লোপেরামাইড) খাবেন না। সাবধান।
৭. ভাত মাছ রেগুলার সব খাবার স্বাভাবিক যেমন খেতেন তেমনই খাবেন।

উপরে যেই ৭ টা কথা বললাম, ডাইরিয়ার চিকিৎসার মূল অংশ ঐটাই।
বাকি থাকে এন্টিবায়োটিক এর প্রসংগ।
সে ক্ষেত্রে সুযোগ করে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তিনি কোন এন্টিবায়োটিক যদি সাজেস্ট করে থাকেন, তাহলে সেটি ই খাবেন।

#কখন ইমার্জেন্সী হাসপাতালে ভর্তি লাগবে?খুবই জরুরী ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে।

-যদি পর্যাপ্ত স্যলাইন খেতে না পারেন, বমি বেশী হয়
-যদি আলাদা করে প্রস্রাব হওয়া বন্ধ হয়ে যায় (পায়খানার সময় তো প্রস্রাব হয় ই, আলাদা করে শুধু প্রস্রাব এর কথা বলেছি)
-যদি হাত পা ব্যথা বা কামড়ানো টাইপ কষ্ট শুরু হয়
-প্রচন্ড নিস্তেজ হয়ে যায়।

উপরের বর্নিত জিনিসগুলো হলে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি  লাগতে পারে 

আর হ্যা, আপনি হয়তো জোয়ান তাগড়া মানুষ। ডাইরিয়া হলে স্যালাইন খেয়ে টেয়ে ম্যানেজ করে ২-৩ দিনের মাঝে হয়তো সুস্থ্য হলেন। ডাক্তার হয়তো দেখানোর প্রয়োজন হলো না।কিন্তু যদি বাসার  বৃদ্ধ এবং একেবারে শিশুদের যদি সামান্য ডাইরিয়াও হয়, সেটার জন্যেও একবার অন্তত ডাক্তার দেখাবেন।

**প্রতিরোধঃ 
ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতাই প্রধান। ডায়রিয়া রোগের সঙ্গে ঘনবসতি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়। মাছি ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়াতে সাহায্য করে। তাই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকলে এবং কঠিনভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

পরিশেষে,
এতবড় লেখায় আমার আসল মেসেজ টা
ছোট করে আবার বলি,

আপনার এবং আপনার আপনজনকে ডাইরিয়া হলে প্রথমে ঔষধের চাইতে স্যালাইন খেতে উৎসাহী করুন।
ডাইরিয়া হলে বস্তা বস্তা ঔষধ খেয়ে ওটাকে ব্রেক কষানোর জন্য অস্থির হবার দরকার নেই।ভেতরের তৈরী দুষিত জিনিস বেরিয়ে যেতে দিন।
আপনি স্যালাইন খেয়ে শরীরে পানির পরিমান ঠিক রাখেন।
খাবারের নিয়মগুলো মানেন।
এইটুকু তেই আপনি ৮০% নিরাপদ।
এরপর ডাক্তার যদি মনে করেন যে এন্টিবায়োটিক লাগবে, সেটা যদি দেয়, তাহলে খাবেন।



মোঃশাকিল আহমেদ 
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ 
বরিশাল