• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ধেয়ে আসছে সেই ভয়ানক রকেট, আতঙ্কে ইতালি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২১  

মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে অভূতপূর্ব ইতালি। আড্রিয়াটিক ও ভূমধ্যসাগরের মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ দেশটি আজ ভয়াবহ শঙ্কায়। আজ অথবা আগামীকাল রবিবার, উইকেন্ডে রীতিমতো আতঙ্কে থাকবে ইতালিয় ভূখন্ডের কোটি কোটি মানুষ। 

কারণ, ভয়ানক চীনা রকেট লং মার্চ ফাইভ বি'র ধ্বংসাবশেষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছুটে আসছে ভূপৃষ্ঠে। চীনারা যদিও বলছে, যা পড়ার তা সাগরে কিংবা বনে-জঙ্গলে পড়বে। তথাপি ইতালিয়ান মহাকাশ সংস্থার দেয়া বিপদজনক তথ্যের ভিত্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ড. মারিও দ্রাঘির কার্যালয়ের অধীনস্থ জাতীয় জননিরাপত্তা সংস্থা সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্টে। ৭ মে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে তারা জরুরি বৈঠক সেরে নেয়। সরকারিভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরুরি সতর্কবার্তা।

চীনা লং মার্চের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাব্য সময়কাল ৯ মে (রোববার) ইতালির স্থানীয় সময় ভোর ২টা ২৪ মিনিট অর্থাৎ আজ ৮ মে (শনিবার) দিবাগত রাতে। তবে ধেয়ে আসা খণ্ডিত রকেটের সাথে বায়ুমন্ডলের ঘর্ষণ এবং সূর্যের প্রভাব জনিত প্রাসঙ্গিক কারণে সম্ভাব্য অঘটন ৬ ঘণ্টা আগে পরেও হতে পারে। 

ইতালির আংশিক মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সবকটি বিভাগে 'এলার্ট' জারি করে শনি ও রবিবার জনগণকে যার যার আবাসস্থলে বা অফিস ভবনে বদ্ধ জায়গায় থাকতে বলা হয়েছে সরকারি নির্দেশনায়। ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগ সমূহ হচ্ছে- উমব্রিয়া, লাৎসিও, আবরুৎসো, মোলিসে, কামপানিয়া, বাসিলিকাতা, পুলিয়া, কালাব্রিয়া, সিচিলিয়া ও সার্দেনিয়া। এসব বিভাগের জনগণকে যার যার অবস্থানে কাঁচের দরজা জানালা থেকেও নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলেছে সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট।

শুক্রবারের জরুরি সভার টেকনিক্যাল টেবিলে যোগ দেন ইতালিয়ান মহাকাশ সংস্থা (স্পেস এজেন্সি) ছাড়াও মন্ত্রী পরিষদের সামরিক উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট, বিমান বাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি এবং জাতীয় পরিবেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন সব বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা। 

সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোববার পর্যন্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রেখে। 

সভার পর সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ বড় ভবনের উপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা কম, বিধায় যে কোনও খোলা জায়গার তুলনায় ভবনই বেশি নিরাপদ এই মুহূর্তে। ঠিক কোথায় আঘাত হানবে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের জানার সুযোগ নেই, তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদি তা আবাসিক এলাকায় কোনও ভবনের উপর পড়ে, সেক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি অনিবার্য।

ইতালিয়ান সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট আরও জানিয়েছে, সম্ভাব্য বিপজ্জনক এই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার যে কোনও ভবনের নিচের তলাসমূহ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে বিবেচিত হবে। নিচতলায় কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ডে কংক্রিটের প্রশস্ত দেয়াল আছে এমন যে কোনও স্থান এবং ভবনের পিলারের আশপাশের এরিয়া যে কারও জন্য হতে পারে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। 

মহাকাশ থেকে তোলা সেই ছবি

রকেটের ধ্বংসাবশেষের ছোট ছোট অংশ ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার সময় দিনের আলোতে খালিচোখে দেখতে পাবার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানার সময় ধ্বংসাবশেষের বড় বড় অংশই টিকে থাকতে পারে। রকেটের ধ্বংসাবশেষ পতিত হবার পর কোথাও কারও দৃষ্টিগোচর হলে তা স্পর্শ না করতে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে এবং ন্যূনতম ২০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনকে দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর কক্ষপথে নিজের একটি মহাকাশ স্টেশন বানাতে চাচ্ছে চীন। প্রকল্পের নাম- ‘তিয়ানশে মহাকাশ স্টেশন’। এটি উৎক্ষেপণের জন্য কিছুদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। ওই মহাকাশ স্টেশনের একটি ‘মডিউল’ (অংশ) পরীক্ষামূলকভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠাতে গত ২৮ এপ্রিল লং মার্চ ৫বি রকেট উৎক্ষেপণ করে চীনা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। তবে সম্প্রতি ২১ টন ওজনের উপগ্রহবাহী ভারী রকেটটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।