• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

নিজস্ব আয় থেকেই মেয়রগণ পৌরসভা পরিচালনা করবে-এলজিআরডি মন্ত্রী

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

সঠিক সেবা দিয়ে নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায় করে নিজস্ব আয় থেকেই মেয়রদের পৌরসভাকে পরিচালনার নির্দেশ দিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি। একইসাথে পৌর মেয়রদের চলমান সকল সমস্যা ক্রমান্বয়ে সমাধানকল্পে সরকার একটি কৌশলপত্র প্রনয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। রবিবার রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মিলনায়তনে প্রথমবারের মতো সারাদেশের পৌরসভার মেয়রদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অপরদিকে পৌর মেয়রগণ ব্যাক্তি মালিকানাধীন যানবাহনকে কর প্রদানে আইন প্রনয়ন করা, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স পৌর মেয়রদেরকে ক্ষমতা প্রদান করা, পৌরসভার দখল ও উচ্ছেদ কাজ করতে নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন কর্মকর্তা নিয়োগ বা মেয়রদেরকে উচ্ছেদে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের জন্য ভ্যাকুয়অম ক্লিনার ও এস্কভেটর প্রদান, অবৈধ ভবন নির্মাণে বাধা দিতে ক্ষমতা প্রদান, আইন না নামলে তা বাধ্য করতে মেয়রদেরকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা সহ নানা দাবী তুলে দরেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলামসহ দেশের ৩২৮টি পৌরসভার মেয়র এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ২০০ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারে আনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে নাগরিকগণ টেক্স দেন না বা আদায় করা যায় না তা কি মানা যায় ? জনগণকে যথাযথ সেবা দিতে পারলে মানুষ কর দিতে উৎসাহিত হবে। তার মাধ্যমেই দেশ উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। তাই সেবার মান বৃদ্ধিতে পৌরসভার মেয়রদের বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। ভোট চাওয়ার সময়ই আপনাদেরকে বলতে হবে যে, এলঅকার উন্নয়ন চাইলে আপনাদেরকে নিয়মিত কর প্রদান করতে হবে। তবেই নাগরিকগণ উৎসাহিত হবে। জনগণকে বুঝিয়েই সকল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মেয়রগণই পারেন সঠিক সেবা দিয়ে নাগরিকদের খুশি করে রাজস্ব আদায় করে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে।

তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাবলম্বী। তারা নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় প্যেরসভার সকল ব্যয় নির্বাহ করে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তাদের খুব কম ভর্তুকি দেয়া লাগে। কিন্তু বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ এখনও সে পর্যায়ে যেতে পারেনি। কাজেই মানুষকে ট্যাক্স ও ভ্যাটের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা আছে। এ সকল প্রতিকূলতা দূর করতে চাই বলেই আমরা জনপ্রতিনিধি হয়েছি। কাজেই সাহসের সঙ্গে ধৈর্য ধরে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তবে যেসব পৌরসভার আয় অনেক বেশী তাদেরকে কিভাবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া যায় তা নিয়ে আমরা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মন্ত্রী বলেন, এই প্রথমবারের মতো পৌরসভার মেয়রদের সাথে সমন্বয় করে ও সমস্যা চিহ্নিত করে কিভাবে কাজ করা যায় তার জন্য বিশেষ ভুমিকা রাখতে মেয়রদের নিয়ে অঅমরা সভা করেছি। এখন থেকে আপনাদের সাথে মন্ত্রনালয়ের আলোচনার দ্বার উন্মাচন হলো। কোন সমস্যা হলে আমাদেরকে লিখিত আকারে জানাবেন। আমরা চাই সকল প্রকার পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে মেয়রগণ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করুক। যাতে করে নাগরিকগণ বেশী সেবা পেতে পারেন। আমাদের বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে যা চলমান রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বেশ কিছু পৌরসভা রয়েছে যারা নিজস্ব আয় করতে তেমন কোন উদ্যোগই নিতে চান না তারা শুধু থোক বরাদ্দ পেতে অধীর আগ্রহে বসে থাকেন। এটি ঠিক নয় আপনারা মেয়রগণ হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি। আপনারাই কেবল পারেন কিভাবে জনগণকে বেশী সেবা দেয়া যায় তার পথ খুজেঁ বের করা। একইসাথে যেসব পৌরসভা নিজেদের কোন প্রকার আয়ই করতে পারেন না তাদেরকে সরকার পৌরসভঅ রাখবে নাকি পূর্বের ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তভুক্ত করবে নাকি সিটি কর্পোরেশনে পরিণথ করবে সে বিষয়ে অঅমরা ভাবছি। মূলত কোন আয়ই না থাকলে নামে পৌরসভা থেকে লঅভ কি ? তাই এমন পৌর মেয়রদেরকে অঅরো সক্রিয় হওয়ার অঅহ্বান জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে চলমান মশক নিধন অভিযানে আপনাদের পাশে চাই। সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এ কাজে সফলতা পেতে হলে আপনাদেরকে বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে। মশা যেনো কোনক্রমেই না বাড়তে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রী বলেন,ম পৌরসভার উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ও নিচ্ছে। এসব প্রকল্পে সরকারের সাথে বিদেশী দাতাদের সহায়তাও থাকবে। তাই সকল পৌরসভার কিভাবে উন্নতি করা যায় ও সকল মেয়রদের কিভঅবে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে সরকারের কাজ ও নির্দেশ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে একটি পৌরসভাকে বেশী সুযোগ দিতে গিয়ে যেনো অন্য কোন পৌরসভা বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে মন্ত্রী সচিব ও কর্মকর্তাদের উপর বিশেষ নজর রাখতে নির্দেশ দেন।

মতবিনিময় সভায় মেয়ররা তাদের পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যা ও দাবির কথা মেখিকভাবে মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এরপর মেয়রদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও দাবি-দাওয়া মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, একদিনে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে এগুলো সমাধান করা হবে। আমরা সকল সমস্যার সঠিকভাবে ক্রমান্বয়ে সমাধান করতে একটি কৌশলপত্র তৈরীর চেষ্ঠা করছি।

সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিকদের অধিক সেবা দিন ও একইসাথে পৌরকর অঅদায় করে বেতন ভাতা দিয়ে পৌরসভার নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে আপনারা আন্দোলন করতে পারেন। অন্যথায় নাগরিকগণ সেবা বঞ্চিত হতে পারেন। যার প্রভাব সবার উপরেই পরে। এছাড়া শহরকে সোলঅর প্যানেল স্থাপন করে বাতি দিয়ে আলোকিত করার উদ্যোগ নিন আমরা আপনাদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবো। তিনি বলেন, সরকারের বাইরে এমন অনেক দেশী বিদেশী নাগরিকগণ বা দাতা রয়েছেন যারা এলাকার উন্নয়ন করতে আগ্রহী। তাদের সহায়তা নিন। আমরা আপনাদেরকে এসব কাজে সাথে সাথেই অনুমতি দেবো। কারণ সবাই চান থোক বরাদ্দ। ভাবতে হবে প্রকল্প ছাড়া বিশেষ সমস্যা না হলে থোক বরাদ্দ দেয়ার তেমন সুযোগ থাকে না। তাই নিজেদের উন্নয়ন নিজেদের কর দিয়েই করার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।