• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

‘নিজের মন্দকাজ যদি তোমাকে পীড়া দেয়, তবেই তুমি মুমিন’

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০১৯  


আল্লাহর নেয়ামতরাজি অসংখ্য-অগণিত। প্রত্যেক মানুষের জীবন তার অনুগ্রহ-অনুকম্পায় স্নাত। নেয়ামত পেয়ে মানুষ আনন্দিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এটি আল্লাহরও ভীষণ পছন্দনীয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তার বান্দার কাছে তার দেওয়া নেয়ামতের চিহ্ন দেখতে ভালোবাসেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৮১৯)
নেয়ামতকে যদি কেউ নিজের অর্জন মনে করে, নিজের যোগ্যতার স্মারক মনে করে কিংবা নিজের অধিকার মনে করে পুলক অনুভব করে, তাহলে এটাই হবে আত্মমুগ্ধতা। আত্মমুগ্ধতায় বিনয় ও কৃতজ্ঞতাবোধের ছোঁয়া থাকে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন মুগ্ধতা থেকে বারণ করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘...তুমি উল্লসিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ উল্লসিতদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৬)
তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো, আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের কথা মাথায় রেখে কৃতজ্ঞতার সিজদায় লুটিয়ে পড়া। হাদিসে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কী জিনিস? তিনি জবাবে বলেন, তোমার ভালো কাজ যখন তোমাকে আনন্দিত করবে আর তোমার মন্দ কাজ যখন তোমাকে পীড়া দেবে তখনই তুমি মুমিন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২২১৬৬)
আত্মমুগ্ধতা সম্পর্কে মহানবী (সা.) আমাদের এভাবে সতর্ক করেছেন, ‘তিনটি বিষয় মারাত্মক ধ্বংসাত্মক : এক. অত্যধিক কৃপণতা, দুই. প্রবৃত্তির অনুসরণ, তিন. নিজেকে নিয়ে মুগ্ধতা।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস ৭৩১; তাবারানি, হাদিস: ৫৪৫২)
এই মুগ্ধতা যে কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে, তার একটি নমুনা স্বরূপ চৌদ্দ শ বছর আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। তবু পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হওয়ার কারণে যেন আমাদের কাছে তা চিরনতুন।
‘মক্কা বিজয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরবের দূর-দূরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা এসে ইসলাম কবুল করতে থাকে। যাদের অন্তরে ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ বর্তমান ছিল, তারা এ দৃশ্য দেখে যারপরনাই অস্থির হয়ে ওঠে। তাদের ভেতরে বিদ্বেষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।
হুনাইনের অধিবাসী হাওয়াজিন ও সাকিফ নামক দুইটি গোত্র এদিকে খুবই অগ্রগামী ছিল। তারা এমনিতেই ছিল যুদ্ধবাজ জাতি; তদুপরি ইসলামের অগ্রগতি দেখে তারা আরো অস্থির হয়ে পড়ে। তারা মালিক ইবনে আওফ নামক ব্যক্তিকে সর্দার মনোনীত করে এবং মুসলমানদের মোকাবেলা করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। তারা আরো বহু গোত্রকে নিজেদের সঙ্গী বানিয়ে নেয়।
যুদ্ধক্ষেত্র হুনাইন উপত্যকা শত্রুদের আগে থেকেই পরিচিত ছিল। এই সুযোগ তারা ভালোভাবেই লুফে নেয়। দেশটি পর্বতময়। পূর্ব পরিচিত থাকার দরুন শত্রু সেনারা পাহাড়ের আড়ালে উপযুক্ত জায়গায় লুকিয়ে থাকে। পাহাড়ে অবস্থানের দরুন তাদের এই লুকিয়ে থাকার কাজটি অত্যন্ত কার্যকর হয়েছিল।
মুসলিম সেনাবাহিনীর পুরোভাগ হুনাইন উপত্যকায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে  শত্রু সেনারা তাদের লুকিয়ে থেকে তীর-ধনুকের সাহায্যে মুসলিম সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণ করে বিপর্যস্ত করে ফেলে। মুসলমানরা সামনে আসামাত্র দুশমনরা আশপাশের পাহাড় থেকে এলোপাতাড়ি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এ পরিস্থিতির জন্য মুসলমানরা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এর ফলে মুসলমানদের সৈন্যদলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
এই যুদ্ধে হাওয়াজিন ও বনু সাকিফ ছাড়াও বনু জুশাম, বনু সাদ, হিলাল গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। এ যুদ্ধে তারা পরিবার-পরিজনকেও সঙ্গে নিয়ে আসে। তাদের মোট সংখ্যা ছিল ২৪ থেকে ২৮ হাজার। এদের সেনাসংখ্যা ছিল চার হাজার।
হাওয়াজিনের এই যুদ্ধাভিযান প্রতিহত করার জন্য নবী (সা.) ১২ থেকে ১৪ হাজার সাহাবির এক বাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে হুনাইন উপত্যকায় উপস্থিত হন। এর আগে কোনো যুদ্ধে মুসলমানদের সেনাসংখ্যা এত বেশি ছিল না। এবার সেনাদলের কলেবর নিয়ে তাদের অনেকের মধ্যে কিছুটা অহংবোধ ও আত্মমুগ্ধ-মনোভাব জাগ্রত হয়। কেউ কেউ জয়ের ব্যাপারে অতি আশাবাদী হয়ে যান।
আল্লাহর ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর এতটা নির্ভরশীল হওয়া ঈমানি শক্তির দুর্বলতারই প্রকাশ। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হলো, মক্কা বিজয়ের পর সদ্য মুসলমান হওয়া কয়েক শ সাহাবিও ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উৎসাহ-উদ্দীপনার মাত্রা তাদের মধ্যে একটু বেশিই ছিল।
সুতরাং এ যুদ্ধে মুসলমানরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, সে জন্য আল্লাহর ইচ্ছায় তারা যুদ্ধের শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। মুসলমান বাহিনী যখন এক সংকীর্ণ গিরিপথ অতিক্রম করছিল, তখন হাওয়াজিনের তীরন্দাজ বাহিনী অকস্মাৎ তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে মুসলমানরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পরে আল্লাহর বিশেষ রহমতে আবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। আত্মমুগ্ধতা কত ভয়াবহ বিপদ ঢেকে আনতে পারে, হুনাইনের যুদ্ধ তার জ্বলন্ত প্রমাণ।