• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

নৌকার প্রার্থী না থাকায় সমর্থকের আত্মহত্যা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০১৮  

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় আত্মহনন করেছেন দিনমজুর ঘুনুরাম রায় নামে এক সমর্থক। বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে ঘরের চালের বাঁশের তীরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রামের মৃত প্রহল্লাদ চন্দ্র রায়ের ছেলে ঘুনুরাম রায়। তিনি নৌকা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার অন্ধ সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন।

ঘুনুরামের স্ত্রী মেনকা রাণী রায় জানান, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তাদের। এরমধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। পরিবারের সংকটে ছেলে কমল চন্দ্র রায় কুমিল্লায় গেছে দিনমজুরির কাজে। বুধবার সকালে স্বামী ঘুনুরামকে বাড়িতে রেখে সাত বছর বয়সের অপর মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দিনমজুরির কাজে যায় মেনকা। সেখান থেকে দুপুরে বাড়িতে ফিরে দেখেন ঘরের মধ্যে গলায় দড়ি দিয়ে তার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন।

মেনকা বলেন, ‘মোর স্বামী এমপি মোস্তফাকে ভালোবাসেন। এইবার ভোটে তো এমপি নৌকা মার্কা পায় নাই, শুনিয়া কয়দিন থাকি কয়া বেড়াছে এলা ভোট কোঠে দিম।’

এলাকাবাসী জানায়, ঘুনুরাম রায় একজন দিনমজুর হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ও আওয়ামী লীগের একজন অন্ধভক্ত ছিলেন। পরিবারের অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও দলীয় সভা-সমাবেশে তার সরব উপস্থিতি ছিল। সাথে সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাকেও তিনি অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। এবারের নির্বাচনে আসনটি থেকে নৌকা মার্কার কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয়ায় কয়েকদিন ধরে তার মানসিক বির্পয় দেখা গেছে। তার ওই বিপর্যয় থেকে বুধবার আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছেন তারা।

ঘুনু রামের প্রতিবেশী মশিউর রহমান বলেন, ‘ঘুনুরাম দলের কোনো পদে নেই। কিন্তু সব সময় তার মুখে নৌকা মার্কার কথা শোনা যেত। তিনি নৌকার একজন অন্ধ ভক্ত ছিলেন। এই আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী থাকছে না খবর শোনার পর থেকে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। আজকে সকালেও এলাকার একটি দোকানের সামনে বলতে শুনেছি, ‘নৌকা নাই ভোট কোনঠে দিম! হামার এমপি যদি মনোনয়ন না পায়, তাহলে মোর মরা ছাড়া আর উপায় নাই’।

এলাকার কৃষক সুশেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা তাকে (ঘুনুরাম) নৌকা মার্কার এমপি মোস্তফার ভক্ত হিসেবে চিনি। এলাকায় নৌকা মার্কার সভা-সমাবেশেও তার উপস্থিতি দেখেছি। এবারের ভোটে এমপি মোস্তফা নৌকা মার্কার মনোনয়ন পাননি, আসনটিতে নৌকার কোন প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেয়া হয়নি শুনে ঘুনুরাম মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন, এরপর দুপুরে তার আত্মহত্যার কথা শুনতে পাই।’

ধর্মপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী বলেন, ‘লোকটা আওয়ামী লীগের অন্ধভক্ত ছিল, কোনো মিছিল মিটিংয়ে তাকে বলতে হতো না, নিজেই চলে আসত। মোস্তফা এমপি মনোনয়ন পায়নি এটা সে মানতে পারে নাই, সব সময় বলতো ‘তাহলে ভোট কোঠে দিমো’। এ কারণে হয়ত আজ সে আত্মহত্যা করেছে।’

ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বলেন, ‘জলঢাকা আসনে গোলাম মোস্তফা মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে অনেক মানুষ আশাহত হয়েছেন, এমপি নৌকা না পাওয়ার কারণে ঘুনুরাম আত্মহত্যা করেছে এ ব্যাপারে আমিও নিশ্চিত হয়েছি। লোকটা এমপির ভক্ত ছিলেন, আর এই এলাকার মানুষ নৌকার জন্য পাগল।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ঘুনু মারা গেছে, আরও যে কেউ মারা যাবে না এটা বলা যাবে না।’

জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মুঠোফোনে সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, লোকটি নৌকার ভক্ত ছিলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। এবারের নির্বাচনে ওই আসনে মহাজোটের কারণে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সেখানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফারুক কাদের ও মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলকে।

অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য আজিজুল ইসলাম।