• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

পঙ্গপালের আশঙ্কা নেই তবুও সতর্ক বাংলাদেশ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০  


কৃষির ভয়ঙ্কর পতঙ্গ পঙ্গপাল নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ। আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পর পাকিস্তান ও সর্বশেষ ভারতে আক্রমণ চালানোর পর বাংলাদেশেও পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে একই ঝুঁকি এ বছরের চেয়ে আগামী বছর বেশি। সে লক্ষ্যেই আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করছে কৃষি দফতর।

জাতিসংঘের ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) পক্ষ থেকেও কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে পঙ্গপালের আক্রমণ সস্পর্কে সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের আশঙ্কা ৩০টি দেশে এই পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়তে পারে। জাতিসংঘের তরফ থেকে এই সতর্কতামূলক চিঠি পাওয়ার পর কৃষি মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য দেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারের নির্দেশনা পেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তারা পঙ্গপালের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। সেই সঙ্গে এই পতঙ্গটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে দেশব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে বিধায় এখনই মাঠ পর্যায়ে কোন সতর্কতা জারি করেনি। বরং পঙ্গপালের অবস্থান ও গতির প্রতি নজর রাখছে।

অন্যদিকে, পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য জাতিসংঘের ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেহেতু এই পতঙ্গের ঝাঁক মরু এলাকা থেকে এসেছে, কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করেন, বাংলাদেশে আক্রমণ হলে দেশের শুষ্ক ও খরাপ্রবণ এলাকায় সে ঝুঁকি বেশি থাকবে। সেটি মাথায় রেখেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

গত বছরের শেষ দিক থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে পঙ্গপাল। এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়। পঙ্গপালের হানায় এরইমধ্যে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। সাত শ’ ত্রিশ কোটি রুপী বা ৪০০ কোটি টাকার একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইমরান খানের সরকার। এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসেও পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়েছিল। সে সময় সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়াতে ৯০ লাখ হেক্টর জমিতে পঙ্গপালের আক্রমণ ছাড়িয়ে পড়েছিল। এতে কোটি কোটি টাকার সফল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সর্বশেষ ভারতের পাঞ্জাবেও ঢুকে পড়েছে পতঙ্গরা। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মধ্যদিয়েই ভারতের পাঞ্জাবেও ঢুকে পড়েছে পঙ্গপাল। যার ব্যাপ্তি ছিল তিন কিলোমিটার। এমন খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। পাঞ্জাব থেকে পঙ্গপাল এখন উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্য পর্যন্ত চলে এসেছে। সে প্রেক্ষাপটে পাঞ্জাবের আশপাশের কয়েকটি রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংস্থা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্লান্ট প্রোটেকশন ইউংয়ের পরিচালক ছাব্বির ইবনে জাহান বলেন, পঙ্গপাল এখন আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে আছে। আর আমাদের আবহাওয়াও পঙ্গপালের বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী নয়। ফলে এই পতঙ্গ নিয়ে আমাদের ভয়ের কিছু নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গে চলে এলে আমাদের চিন্তার কারণ আছে। এখনও এটি ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে আছে। তাই এটি নিয়ে এখনই আমরা দুশ্চিন্তা করছি না। তবে আমরা এটি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যদিও এই পতঙ্গ দমনে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গত ৫৫ বছরে পঙ্গপালের কোন আক্রমণ হয়নি। ফলে পঙ্গপাল সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম। বিভিন্ন সময়ে আমাদের কৃষিতে নতুন নতুন কীট-পতঙ্গের আক্রমণ হয়, সেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি। এমনকি সর্বশেষ ভুট্টায় যে ফল আর্মি ওয়ার্ম নামে একটি পোকা আক্রমণ করে, সেটিও এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। কিন্তু পঙ্গপাল সম্পর্কে আমাদের বাস্তব কোন ধারণা নেই। তাই আমরা এ পতঙ্গটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি এবং এটি দমনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পঙ্গপালের আক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা এবং প্রস্তুতি রাখার জন্য আমাদের জানানো হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা পাকিস্তান ও ভারতের পর বাংলাদেশেও আসতে পারে এই পঙ্গপাল। তবে আমরা যতটা বুঝতে পারি এ বছরে তেমন ঝুঁকি নাই, কিন্তু আগামী বছরের জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে।

এর কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করছেন, যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করে তারা, সে কারণে কৃষি অধিদফতরের আশঙ্কা বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে পঙ্গপালের। তাই পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য জাতিসংঘের ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাওয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা।

যেহেতু এই পতঙ্গের ঝাঁক মরু এলাকা থেকে এসেছে, কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করেন বাংলাদেশে আক্রমণ হলে দেশের শুষ্ক ও খরাপ্রবণ এলাকায় সে ঝুঁকি বেশি থাকবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে পঙ্গপালের আক্রমণের কোন সম্ভাবনা নেই। এই পতঙ্গ শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। আমাদের আবহাওয়া আর্দ্র ও শুল্ক। এই শুল্ক ও আর্দ্র আবহাওয়া কখনই পঙ্গপাল পছন্দ করে না। ফলে আমাদের দেশে এই পতঙ্গ আসার কোন সম্ভাবনা নেই।’

তিনি বলেন, ‘তারপরও আমরা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি রাখছি। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে সতর্ক থাকতে বলেছি। তবে আমাদের জন্য এই পতঙ্গ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই।’

মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, এই পতঙ্গ একদিকে খায় অন্যদিকে বংশবিস্তার করে। আর বংশবিস্তারের জন্য বালুময় আবহাওয়া দরকার। সেই আবহাওয়া বাংলাদেশে নেই। তাই আমাদের ভয়ের কিছু নেই।