• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

পিন্ডিতে ডেকে নিয়ে মানিক মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে: বঙ্গবন্ধু

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২০  

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী শ্রদ্ধা ভরে পালন করে আওয়ামী লীগসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তিকে ঢাকা থেকে পিন্ডিতে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘একইসময় আমাকেও ডাকা হয়েছিল এবং আমি গেলে সম্ভবত আমাকেও মৃত্যুবরণ করতে হতো।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, যারা সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে হত্যা করেছিল তারাই মানিক মিয়াকে হত্যা করেছে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ১ জুন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় ভাষণ দানকালে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু। এসময় দুজনের গভীর সম্পর্কের স্মৃতিচারণও করেন তিনি।

ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, রাওয়ালপিন্ডি থেকে একজন বাঙালি অফিসার তাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেছিলেন। অত্যন্ত কাকুতি-মিনতি করে রাওয়ালপিন্ডি না যাওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কারণ সেখানে আমাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে ওই বাঙালি অফিসার জানতে পেরেছিলেন।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া

১৯৭২ সালের ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ওই বক্তৃতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশিত হয় দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়।

পূর্বদেশের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু বলেন, মানিক মিয়া সে সাবধানবাণী উপেক্ষা করে রাওয়ালপিন্ডি গেলেন এবং মৃতাবস্থায় ফিরে এলেন। বঙ্গবন্ধু মানিক মিয়াকে চিন্তাশীল ও দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করেন। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী এই দিনে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। এই উপলক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মানিক মিয়ার কর্মবহুল জীবনের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করে।’

উদারতা সরকারের দুর্বলতা নয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মজুতদার, মুনাফাখোর ও দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে তাদের কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, যারা ইয়াহিয়া খানের সশস্ত্র সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করতে পেরেছে তারা এদেরও শায়েস্তা করতে পারবে। তবে আপাতত সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি যে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে তা সরকারের দুর্বলতা নয়, উদারতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বানচালের জন্য যারা চক্রান্ত করছে তাদের হুঁশিয়ার করে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, স্বাধীনতা খর্ব করতে দেওয়া হবে না এবং এই চক্রান্তকারীদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।

ভুয়া রেশন কার্ড 

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেও ঢাকা নগরীতে এক বিপুল সংখ্যক ভুয়া রেশন কার্ডধারী ছিল এবং তাদের মোকাবিলা করতে বঙ্গবন্ধুর সরকারকেও বেগ পেতে হয়েছে। একইদিনে পূর্বদেশ পত্রিকায় আরেক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে আলোকপাত করে বলা হয়, সমাজবিরোধী লোকজন এসব রেশন কার্ডের সামগ্রী তুলে কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে বলে সরকারের মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা একটি গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধে অপরাধীকে নির্দিষ্ট অপরাধ আদেশ ১৯৭২ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) এর অধীনে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা করা যেতে পারে। সরকার এসব ভুয়া রেশন কার্ড খুঁজে বের করে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় বলে ঘোষণার কথাও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো হয়, ভুয়া রেশন কার্ড খুঁজে বের করে অপরাধীদের ধরার জন্য গত ২৯ মে থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব অপরাধীকে খুঁজে বের করতে শেখ মুজিবের সরকারকে সহায়তা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানোর কথাও উল্লেখ রয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

এদিকে, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) আরেকটি প্রতিবেদন স্পষ্ট করে তোলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু সংখ্যক সুবিধাবাদী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চালের দাম অত্যধিক বাড়ার বিষয়ে গুজব রটিয়ে সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে থাকে। বাসসের ওই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘কিছুসংখ্যক স্বার্থপর লোক গুজব ছড়াচ্ছে যে সরকার স্বীকৃত চালের দাম বাড়িয়ে প্রতি সেরের দাম ৪৫ টাকা ধার্য করবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে চালের মূল্য বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। চালের দাম সংক্রান্ত গুজব ভিত্তিহীন।’

বাসস আরও জানায়, সরকারের অগ্রাধিকার খয়রাতি সাহায্য (ত্রাণ) ও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে ১৯৭২ সালের জুন মাসের জন্য ৬৮ লাখ মণ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ লাখ ৬১ হাজার একশ’ মণ খয়রাতি সাহায্য এবং ৪০ লাখ ৮২ হাজার ৩শ’ মণ সংশোধিত রেশনিং হিসেবে বণ্টন করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার আশা করে যে খয়রাতি সাহায্য ও সংশোধিত রেশনিং ব্যবস্থার অধীনে এ বিপুল বরাদ্দ এবং বাজারে বড় আমদানির ফলে চালের দাম কমে যাবে। সরকার প্রয়োজনবোধে জুন মাসের জন্য আরও অতিরিক্ত বরাদ্দ করবে। সরকার আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এখন থেকে জেলাভিত্তিকের পরিবর্তে মহকুমা ভিত্তিতে খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হবে।