• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

পুলিশ-বিজিবির টহল টিমে হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২১  

পুলিশ ও বিজিবির টহল টিমে হামলার পরিকল্পনা করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের একটি চক্র। এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এছাড়া চক্রটির পরিকল্পনা ছিল টেলিগ্রাম অ্যাপসে সায়েন্স প্রজেক্ট নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে বিস্ফোরক প্রস্তুত করা।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. জসিমুল ইসলাম ওরফে জ্যাক, মো. আব্দুল মুকিত, মো. আমিনুল হক ও সজীব ইখতিয়ার। শনিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি ব্যাগ, একটা চাপাতি ও পাঁচটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়।

রোববার (৯ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের গ্রেফতার সদস্যরা ঢাকা ও সিলেটে পুলিশ ও বিজিবির টহল টিমে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এ চক্রের বাকি দুই সদস্য হিজরতের উদ্দেশে আফগানিস্তান গমন করে। গ্রেফতার এই চারজনেরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে কথিত হিজরতের মাধ্যমে আফগানিস্তান পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তারা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলার উদ্দেশে রেকি করে।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলামের গ্রেফতার সদস্যরা নিষিদ্ধ সংগঠনের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনলাইনে টেলিগ্রাম অ্যাপসে সায়েন্স প্রজেক্ট নামে তৈরি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে বিস্ফোরক প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিল। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিভাইস পর্যালোচনা করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা সংগঠনের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মোহাম্মদপুরে এসে এক হয়। আনসার আল ইসলামের দায়িত্বশীল বা মাসুদ ফরিদ ওরফে তারিক আব্দুল্লাহর সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপস গ্রুপ ও অনলাইনে গোপনীয় টেক্সট নামের সিক্রেট চ্যাটিং অ্যাপস ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত।

ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সম্প্রতি গ্রেফতারকৃতরা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নির্দেশে সিলেটের কোতওয়ালী থানা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে হোটেল ম্যানেজারকে আহত করে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মো. জসিমুল হক অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। মো. আব্দুল মুকিত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষকতা করতেন। মো. আমিনুল হক সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং মো. সজীব ইখতিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এখন পর্যন্ত কয়জন জঙ্গি দেশ থেকে আফগানিস্তানে হিজরত করতে গেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার চার জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি তাদের সংগঠনের দুইজন সদস্য আফগানিস্তানে হিজরত করতে গেছেন। গ্রেফতারদেরও পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশে বড় ধরনের নাশকতা করে আফগানিস্তানে হিজরত করতে যাওয়া।

পুলিশের ওপর জঙ্গিদের টার্গেট বহুদিন ধরেই, কিন্তু হঠাৎ করে বিজিবির ওপর তাদের টার্গেট কেন হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা তাগুতের ক্যাটাগরিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেখেছে।

আফগানিস্তানের যেসব জঙ্গি হিজরত করতে গেছেন তাদের উদ্দেশ্য কি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করার তথ্য পেয়েছে কিনা পুলিশ- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আপনারা জানেন আমাদের দেশে যে কয়টি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় তাদের অধিকাংশেরই আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন দাবি করে। আনসার আল ইসলাম উপমহাদেশের আল-কায়দার শাখা বলে নিজেদের দাবি করে। সেই সূত্র ধরেই তারা হয়তো বা আফগানিস্তানে হিজরতে গিয়ে থাকতে পারে। তবে এটা তাদের ভাষ্য এ বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। অধিকতর তদন্তে বিষয়টি জানা যাবে।

জঙ্গিদের সায়েন্স প্রজেক্টের কতজন যুক্ত হয়েছে এবং এদের হামলার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ছিল কিনা- এ রকম প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানো। এই বিষয়টি তাদের পরিকল্পনা পর্যায়ে ছিল। এই সায়েন্স প্রজেক্ট বা গ্রুপের সদস্য এখন পর্যন্ত ১০ জন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এই গ্রুপের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভেতর অনেক গোপন আলাপ-আলোচনায় হতো।

গ্রেফতার জঙ্গিরা কতদিন ধরে তাদের পরিবার থেকে নিখোঁজ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখন আমরা নিতে পারিনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর আমরা রাখছি।

জঙ্গি দমনের কার্যক্রম ভালোভাবে সফল হওয়ার না কারণে কি আবারও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছে না বা আমরা সফল হচ্ছি না এ কথা আমরা কখনোই বলব না। জঙ্গি সংগঠনগুলো অনলাইনে অনেক সক্রিয়। তারা অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সদস্য রিক্রুটমেন্ট করছে ট্রেনিং দিচ্ছে এবং নির্দেশনা দিচ্ছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে তারা সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আমাদের তৎপরতার কারণে কেউ উগ্রবাদের মতাদর্শে আদর্শিত হওয়ার আগে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে পারছি।

গ্রেফতার হওয়া আনসার আল ইসলামের জঙ্গিদের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা- এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এমন তথ্য এখনও পাইনি। তবে আমরা তাদের রিমান্ডে পেলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

হঠাৎ করে জঙ্গিদের আফগানিস্তানের যাওয়ার বিষয়টি কেন উঠে এলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা নব্য জেএমবির বা অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য তারা বরাবরই আইএস, আল-কায়েদার সাথে সম্পর্কের একটি বিষয় বলে থাকে। সেই প্রবণতা থেকেই কেউ আফগানিস্তানে গিয়ে থাকতে পারে।

মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় জঙ্গিদের আনাগোনা বেশি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শহরতলী এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে এবং ঘনবসতি। আর এসব জায়গা জঙ্গিরা তাদের আস্তানা হিসেবে বেছে নেয়।

বসিলা এলাকায় সাবেক হেফাজত ইসলাম নেতা মামুনুল হকের আধিপত্য ছিল। বসিলা এলাকায় শেল্টার নেয়া জঙ্গিদের সাথে মামুনুল হকের কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামুনুল হকের বিষয়ে আমাদের অফিসাররা বিভিন্ন সময় সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন। মামুনুল হকের সঙ্গে জঙ্গির বিষয়ে কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মামুনুল হকের জিজ্ঞাসাবাদ করব।