• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ভাষাসংগ্রামী : আরেফিন সিদ্দিক

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচায অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষাসংগ্রামী ছিলেন। তিনি সর্ব প্রথম ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ধর্মঘটে নেতৃত্বদেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি সেই সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে থাকা সম্ভব হবে না। কারণ দেশটি অপসংস্কৃতি চর্চা করে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৫৬% মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলতো।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব জহুর হোসেন চৌধুরী হল, ঢাকায় 'ভাষাই আমাদের জাতিসত্তার মূল উৎস' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য লেখক ও কলামিস্ট ডা. এস এ মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।  
 
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাঙালি জনসংখ্যার সংখ্যা গরিষ্ঠতা হওয়ার সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকবর্গ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে বাংলার ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে পরে এবং আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি চিরকুটের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের দিক নির্দেশনা দিতেন। তাছাড়া জনসভা, মিছিল, মিটিং, পথসভার মাধ্যমেও তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। ভাষার জন্য তিনি অনশন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলেন। ভাষার প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। ১৯৫৩ সালের প্রথম প্রভাতফেরীতে শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। সুতরাং বাংলা ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জীবনে চির প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ভাষাই আমাদের জাতিসত্তার মূল উৎস। এতা ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং গবেষণালগ্ন সত্য ঘটনা। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা এসেছে। বাঙালির স্বায়ত্ব শাসন, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, সার্বভৌমত্ব, আত্মপরিচয় এবং স্বাধীনতা অর্জন সব কিছুই ৫২’র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত হয়েছে। তাই ভাষাই আমাদের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি কাজ করেছে। বাঙালির জাতীয় জীবনে তাই ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব চির স্মরণীয় ও দিক নির্দেশনামূলক। 

ড. মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এমপি বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বাঙালির জীবনে এক গৌরবময় দিন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য নয়। আমাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী ড, সানজিদা খাতুনকে বলেছিলেন আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় এই রবীন্দ্র সঙ্গীত পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। তিনি তখন থেকেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজ এই গানটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তিনি বাঙালি অন্তপ্রাণ ছিলেন। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই জীবনের ১৪টি বছর জেল খেটেছেন এবং পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির চির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। 

ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ভাষাই আমাদের জাতিসত্তার মূল উৎস। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাঙালি, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অনেক বেশি। তিনি বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষন দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদাকে সমৃদ্ধ করেছেন। 

ড. মশিউর রহমান বলেন, আজও শিক্ষা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। জাতি হিসেবে আমাদের চরম ব্যর্থতা। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বাংলা ভাষার প্রচলন করা দরকার। ড. লিয়াকত হোসেন মোড়ল বলেন, ইংরেজী ভাষা  যেমন আমাদের শিক্ষণীয়, তেমনই মাতৃভাষা বাংলাকে শুদ্ধভাবে চর্চা করতে হবে। আজ আমরা গর্বিত একুশের শহীদ দিবস আজ পৃথিবীর ১৯৫টি দেশে পালিত হচ্ছে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডা. এস এ মালেক বলেন, ভাষা আন্দোলন মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ লাভ করেন। আমাদের স্বাধীনতার বীজ ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই লুকায়িত ছিল। তাই বাঙালি জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরীসিম। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা লাভ এই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে ভাষা আন্দোলন শক্তি যুগিয়েছে, পথ দেখিয়েছে এবং আন্দোলনের পরিপূর্ণতা দিয়েছে। এ কথা সত্য ভাষাই আমাদের জাতিসত্তার মূল উৎস। ভাষা শহীদরা যে লক্ষ্যকে সামনে নিনে জীবন উৎসর্গ করেছিল, সেই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, আব্দুল মতিন ভূইয়া, আজিজুল হক, ডাঃ সাখাওয়াত ইসলাম খোকন, আবুল হোসেন, আলাউদ্দিন, মোঃ আজিজুল হক, হায়দার, আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জেদ্দা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, এইচ এম মেহেদী হাসান, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ড. জাহাঙ্গীর আলম, রতন কুমার কুণ্ডু প্রমুখ।