• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বঙ্গবন্ধু ১৯৫৬ সালে পিরোজপুরে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়েছিলেন

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২০  

 

বঙ্গবন্ধু পিরোজপুরের সোহাগদলে ১৯৫৬ সালে এসে ১৪ দিন নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়েছিলেন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিরোজপুর জেলায় কতবার এসেছিলেন তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় একটি উপ-নির্বাচনে প্রচার-প্রচারনা চালাতে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার সোহাগদল গ্রামের বড়বাড়িতে একটানা দুই সপ্তাহ (১৪ দিন) অবস্থান করেছিলেন বলে প্রত্যক্ষ দর্শীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
  তবে, ওই উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর ১৭ দিন পিরোজপুরে অবস্থানের খবর ছিল এতদিন প্রায় অনেকেরই অজানা। উপজেলার সোহাগদল গনমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ এ প্রজন্মের উদ্দেশে এ অজানা তথ্য জানান ওই সময়কার প্রত্যক্ষদর্শী এবং উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ছোট ভাই বড়বাড়ির বাসিন্দা শতবর্ষী আব্দুর রহমান তালুকদার (১০৪)। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারন করে বলেন, ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গভর্নর হলে তার আসনটি (স্বরূপকাঠি-কাউখালী-বানারিপাড়া) শুন্য ঘোষিত হয়। 
উক্ত আসনের উপ-নির্বাচনে পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও আব্দুর রহমানের বড় ভাই জয়নুল আবেদীন আওয়ামীলীগ থেকে প্রার্থী হন। স্বরূপকাঠি-বানারিপাড়া-কাউখালী এই তিনটি থানা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর উত্তর প্রাদেশিক পরিষদের আসন ছিল। এ আসনে জয়নুল আবেদীনের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সাবেক মন্ত্রী জাদরেল মুসলীমলীগ নেতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান। এই শুন্য আসনে নির্বাচনী প্রচারনায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে একটি ছোট লঞ্চে করে স্বরূপকাঠিতে এসে সোহাগদলের বড়বাড়িতে অবস্থান নেন। উক্ত নির্বাচনে দুই-তিন দিন প্রচারনা চালিয়ে মাওলানা ভাসানী ঢাকায় ফিরে গেলেও বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে সোহাগদল গ্রামের বড়বাড়িতেই থেকে যান। তিনি (বঙ্গবন্ধু) সোহাগদলের বড়বাড়ির আব্দুর রব তালুকদারের (জয়নুল আবেদীনের চাচা) ঘরে একটানা ১৪ দিন থেকে স্বরূপকাঠি-বানারিপাড়া-কাউখালী থানায় অসংখ্য নির্বাচনী জনসভা ও কর্মী সভার পাশাপাশি জনসংযোগ, প্রচারনা ও বক্তৃতা দিয়ে জয়নুল আবেদীনকে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন।
 
শতবর্ষী আব্দুর রহমান তালুকদার আরও জানান, যুক্তফ্রন্টের শরীক দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর ওই নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রচারনায় অন্যান্যের মধ্যে মঠবাড়িয়ার (প্রয়াত) আওয়ামীলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের দু’দুবারের সভাপতি  পিস্তল মহিউদ্দিন আহমেদ (ওই সময় একমাত্র তার কাছে অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল বিধায় তার নাম পিস্তল মহিউদ্দিন নামে পরিচিতি লাভ করে), ইত্তেফাক সম্পাদক ভান্ডারিয়ার তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াসহ স্থানীয়দের মধ্যে শতবর্ষী আব্দুর রহমান, মোসলেম আলী হাওলাদার, হক লাল মিয়া, হাবিবুর রহমান তালুকদার ও হাফিজুর রহমানসহ কয়েকশত স্থানীয় নেতা কর্মী বঙ্গবন্ধুর সাথে সার্বক্ষনিক থেকে প্রচারনায় অংশ নিয়েছিলেন। এখন শতবর্ষী একমাত্র আব্দুর রহমান ছাড়া আর তাদের মধ্যে কেউই বেচেঁ নেই। ওই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা, নির্বাচনী কৌশল এবং তার ব্যক্তিত্বের কারনেই হাশেম আলী খানের মতো জাদরেল নেতাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল এবং তা সমগ্র পাকিস্তানে প্রমান করা সহজ হয়েছিল যে, যুক্তফ্রন্টের স্বপক্ষে জনসমর্থন অক্ষুন্ন রয়েছে। 
১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পাকহানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজরীত ১৭ দিন যে বাড়িতে কাটিয়েছিলেন সেই সোহাগদলের বড়বাড়ির আব্দুর রব তালুকদারের বসত ঘরসহ অন্যান্য ঘরগুলো পুড়িয়ে নিশ্চিন্ন করে দেয়। স্বাধীনতার পর অন্যান্য ঘরগুলো নির্মান করা হলেও দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক আব্দুর রবের ঘরের ভিটা আজও শুন্য পড়ে আছে। এই অজানা তথ্য আবিষ্কৃত হলে প্রয়াত আব্দুর রব তালুকদারের আমেরিকা প্রবাসি পুত্ররা বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতিধন্য এই শুন্য ভিটায় একটি পাকা বাড়ি নির্মান কাজ শুরু করেন। 
ছবিঃ- বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে ১৭ দিন অবস্থান করেছিলেন সেই ঘরটি পাকবাহিনী পুড়ে ফেলায় পাকা ঘরে পরিনত হতে যাচ্ছে।