• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বন্দরনগরী স্থাপন-পর্যটন বিকাশে হচ্ছে পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২১  

পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর ঘিরে পরিকল্পিত আধুনিক বন্দরনগরী স্থাপন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে গঠন করা হচ্ছে পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এজন্য পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের (জানুয়ারি) মধ্যেই খসড়াটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।

এছাড়া আগে সিদ্ধান্ত হওয়া রংপুর, সিলেট ও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রক্রিয়ায়ও গতি পাচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে এই তিন কর্তৃপক্ষ গঠনে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পায়রায় সমুদ্র বন্দর হচ্ছে, আছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা হবে। এখানে প্রচুর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হবে। শহর গড়ে উঠবে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলে সেখানে একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকবে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত বিভাগীয় শহর বা জেলা শহরে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। দেশে এখন ছয়টি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে- কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন চূড়ান্ত হয়েছে, তবে এখনও কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়নি।

পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি ব্যতিক্রম। সমুদ্র বন্দর ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্প চলমান পায়রা ঘিরে এমন কর্তৃপক্ষ গঠন এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

পায়রা বন্দর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ও বালিয়াতলী সংলগ্ন রামনাবাদ চ্যানেল ও কাছাকাছি আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পায়রা বন্দর ঘিরে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় শেরেবাংলা নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে।

পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় আধুনিক বন্দরনগরী স্থাপন এবং কুয়াকাটা পর্যটন অঞ্চল, রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচরসহ পার্শ্ববর্তী দ্বীপ এবং তালতলী, পাথরঘাটা সমন্বয়ে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনে পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ‘পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২১’ এর খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে এটি ফেরত পাঠিয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালের ৯ জুন রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি। কিন্তু এখনও এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা যায়নি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে আছি। বানান-টানান দেখা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খসড়াটি পাঠাতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘পায়রায় সমুদ্র বন্দর হচ্ছে, আছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা হবে। এখানে প্রচুর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হবে। শহর গড়ে উঠবে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলে সেখানে একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকবে। এই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলবে, পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আইনের মধ্যে সবকিছু যুক্ত করা হবে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম এগোবে।’

কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে রংপুর, সিলেট ও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার ইচ্ছা আছে আমাদের।’

২০১৪ সালে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে রংপুর, সিলেট ও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ মন্ত্রণালয়ে এসেছি তিন মাসের মতো হলো। আমি আসার পর বলেছি কোথায় কী পেন্ডিং আছে নিয়ে এসো। কাজের গতি আসছে, সবগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মনিটরিং অনুবিভাগ) মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের খসড়া যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানা হয়েছিল। তারা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, আমরা সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘পায়রায় যেটা হচ্ছে এটা একসেপশনাল। এটার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, অন্যগুলো সাধারণত বিভাগীয় শহরগুলোতে করা হয়েছে। পায়রায় মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। সেখানে সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে। সেখানে সমন্বিত উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য মূলত পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে।’

রংপুর, সিলেট ও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে খসড়া আইন প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা পদ্ধতি অনুসরণ করে এগোচ্ছি। অনেক অগ্রগতি আছে। আমরা চেষ্টা করব এ অর্থবছরের মধ্যে খসড়াগুলো চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে। সিলেটেরটা নিয়ে আমরা একটি ওয়ার্কশপ করেছি, সেখান থেকে যে পরামর্শ এসেছে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে খসড়ায়। এ বিষয়গুলো আমাদের এপিএ’র (বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি) মধ্যে আছে। আমরা খুবই তৎপর, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’

পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খসড়া আইনে যা আছেঃ

মোটামুটি অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মতোই হবে এ কর্তৃপক্ষের গঠন ও কাজ। খসড়া আইন অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের প্রধান হবেন চেয়ারম্যান।

আধুনিক বন্দরনগরী প্রতিষ্ঠা ও পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার গৃহায়ন ও আবাসন সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পর্যটনকেন্দ্রিক আবাসিক, বাণিজ্যিক, বিনোদন, শিল্প বা এ সম্পর্কিত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পৃথক পৃথক এলাকার অবস্থান নির্ধারণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিতে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর বাস্তবায়ন করবে কর্তৃপক্ষ।

খসড়া অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপদ অবস্থান ও যাতায়াত সহজ করতে আধুনিক বন্দর ও পর্যটন নগরী এবং অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সড়ক, মহাসড়ক, নৌপথ, রেলপথ ও সমুদ্রপথ নির্মাণে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনও করবে পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া কর্তৃপক্ষ সমুদ্র সৈকতসহ আওতাধীন এলাকায় অনুমোদন ছাড়া গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা রোধ বা অপসারণ করবে।

পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, আওতাভুক্ত এলাকার সমন্বয়ে দুর্যোগের ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করে একটি ঝুঁকি অনুভূতিশীল ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এলাকার কোনো অংশে কোনো ব্যক্তি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি সাধারণভাবে কোনো ধরনের রাস্তাঘাট ও ইমারত নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

এ আইন কার্যকর হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার মধ্যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ইমারত নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ, পুকুর বা জলাধার খনন বা পুনঃখনন কিংবা কাটা যাবে না।

বিভিন্ন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

রংপুর-সিলেট-বরিশাল কর্তৃপক্ষ আইন করার কাজও এগোচ্ছে

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের প্রাথমিক খসড়া করা হয়েছে। এ খসড়ার ওপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের আগ্রহে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গত ১৭ নভেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একটি মতবিনিময় সভা হয়। রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি খসড়া প্রণয়নের কাজ করছে।

বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্যও সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি খসড়া প্রণয়নের কাজ করছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (মনিটরিং) আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি খসড়া প্রণয়নের কাজ করছে। এছাড়া ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের অনুমতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।