• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্যে ‘উইন্ডরাশ’ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০১৯  

যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর অভিবাসীদের ভুল করে নাগরিকত্বের অধিকার প্রত্যাখ্যান করার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ডের তহবিল গড়ে তোলা হচ্ছে। বুধবার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এই ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ হাউস অব কমন্সকে জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের দাবিদার প্রত্যেক ব্যক্তিকে কত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে সেটার কোনও সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এই অংকটি ক্ষতিপূরণের পুরো তহবিলের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের উইন্ডরাশ প্রজন্ম নামকরণে একটি জাহাজের ভূমিকা রয়েছে। ১৯৪৮ সালে উইন্ডরাশ নামের ওই জাহাজে করে জ্যামাইকা থেকে শ্রমিকদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হতো। গত বছর বাংলাদেশিসহ ওই সময় যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের রাষ্ট্রীয় সেবা পেতে সংকটে পড়লে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনেককেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। কারণ তাদের ১৯৭৩ সালের আগে ব্রিটেনে পৌঁছার কোনও নথি দেখাতে পারেননি। উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারিতে জ্যামাকাইন বা ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূতদের অধিকাংশকে আটক বা প্রত্যর্পণ করা হলেও বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

গত বছর এপ্রিলে দায়িত্ব নেওয়া সাজিদ জাভিদ বলেন, যখন আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেই তখন উইন্ডরাশ প্রজন্মকে নিয়ে ভুল শোধরানোর অঙ্গীকার করেছিলাম। এরপর থেকেই প্রতিশ্রুতি পূরণে আমরা বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছি এবং এখন পর্যন্ত আমরা ৩ হাজার ৬০০ মানুষকে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করেছি, যা তাদের অধিকার। 

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কিন্তু যারা ভয়াবহ দুর্ভোগ ও জটিলতায় পড়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। এই স্কিমে সেটাই করা হবে। উইন্ডরাশ প্রজন্ম এই দেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। এমন কিছু যেনও আর না ঘটে তা আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।

অভিবাসন বিতর্কের পর যুক্তরাজ্য সরকারের গৃহীত উইন্ডরাশ স্কিমের আওতায় ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেয়েছেন ২৩ জন বাংলাদেশি। ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই ১৯৭৩ সালের আগে যুক্তরাজ্য এসেছেন। ওই সময় ব্রিটিশ নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন হয়। বাকিরা এসেছেন পরে বা তথাকথিত ‘উইন্ডরাশ প্রজন্ম’।

হাউস অব কমন্সের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) গত মাসে উইন্ডরাশ পর্যালোচনায় সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সমালোচনা করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূতরা সংকটে বেশি পড়লেও বাংলাদেশের মতো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর যেসব নাগরিক এর শিকার হয়েছেন তারা আরও বেশি মনোযোগ দাবি করেন।

এই ক্ষতিপূরণ প্রকল্প যেসব ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে বসবাসের অধিকার প্রমাণে সঠিক নথি নেই এবং এর কারণে তাদের জীবন বিপন্ন হয়েছে তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে থাকতে পারে চাকরি হারানো বা আবাসন, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভোগা।

এই ক্ষতিপূরণ স্কিম তাদের জন্য যারা ১৯৮৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্বে যুক্তরাজ্যে এসেছেন এবং যুক্তরাজ্যে বাস করা অধিকার রয়েছে বা কোনও বাধা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে কাজ করছেন বা এখন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৭৩ সালের পূর্বে কমনওয়েলথ দেশ থেকে যারা যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন তারাও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের পূর্বে যুক্তরাজ্যে আসা শিশু ও নাতি-নাতনি বা পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যরাও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, যেসব ব্যক্তিকে ভুল করে আটক বা যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তারাও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।