• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বেকায়দায় রুহুল কবির রিজভী!

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। যেকোনো বিষয়ে মন চাইলেই সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য দিতে পারবেন না তিনি। এখন থেকে প্রয়োজনীয় ইস্যুতে বক্তব্য দেয়ার আগে অনুমতি নিতে হবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।

বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি। হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ীই নির্ধারণ হবে ইস্যু এবং বক্তব্যের ধরণ। সোজা কথায়, প্রতিটি প্রেস কনফারেন্সের আগে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু অবহিত করে হাইকমান্ডের অনুমতি নিতে হবে।

মূলত, দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বহীন ইস্যুতে যখন-তখন প্রেস কনফারেন্স ডেকে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেয়ায় তার প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন দলটির সিনিয়র নেতারা। বিএনপির সিনিয়র নেতা ও জোটের বহু গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওই প্রেস কনফারেন্স আয়োজনে। নেতাদের বিরক্তি-ক্ষোভে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা না করেই অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী বক্তব্য দিয়েছেন স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে।

আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নিয়ে তার সাম্প্রতিক কতিপয় বক্তব্য নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি। তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে দলের অবস্থানের কোনো মিল তো নেই-ই, উল্টো সাংঘর্ষিক। যা রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত বিএনপিকে খাদের কিনারে ঠেলে দিচ্ছে। ফেলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলের সন্দেহের ঘূর্ণাবর্তে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়ে বিএনপির হাইকমান্ড অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে রুহুল কবির রিজভীর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এছাড়া নির্দেশনা পেয়ে রোববার (১২ ডিসেম্বর) তার বক্তব্যের একটি সংশোধনীও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিএনপিতে আবাসিক নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। বারবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে থাকার কারণে নেতাকর্মীদের কাছে তিনি এমন নামে পরিচিতি পান। ২০১২ সালের ৮ই ডিসেম্বর থেকে টানা ৫৭ দিন ও ২০১৩ সালের ৩০শে নভেম্বর থেকে মাসাধিককাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাবন্দি আছে তিনি। সর্বশেষ নিম্নাদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর দিন ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তিনি।

দীর্ঘ দেড় বছর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে রীতিমতো বাসাবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন রুহুল কবির রিজভী। কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছোট্ট একটি কক্ষে অবস্থান করেন তিনি। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া আর রাত কাটান। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে দৃশ্যত তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল-বিকাল দুই দফা গণমাধ্যম ডেকে ব্রিফিং করেন। মাঝেমধ্যে ব্রিফিং ডাকেন রাত ৯টা-১০টায়। যেকোনো ইস্যুতে নিজের ইচ্ছায়, নিজের বক্তব্যই দলীয় অবস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

ব্রিফিংয়ের আগে দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত, মনোভাব জানার অপেক্ষা কিংবা মহাসচিবের সঙ্গে পরামর্শও করেন না বলে অভিযোগ আছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউ বা আশেপাশের এলাকায় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম গুরুত্বহীন করে তুলেছেন তিনি। একই সময়ে ব্রিফিং ডেকে গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে নিয়েছেন নয়াপল্টনে। জোটের অনুষ্ঠানগুলোর দিন তাদের অনুরোধও রক্ষা করেন না রিজভী। যখন-তখন ব্রিফিং ডেকে গণমাধ্যমকর্মীদের ফেলে দেন বিপাকে। কিন্তু তার ভাবখানা এমন যেন প্রতিদিন প্রেস ব্রিফিং করে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি।

দৃশ্যত দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মনে হলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। নির্দিষ্ট, নিয়মিত কিংবা দৃশ্যমান কোনো আয় নেই তার। অনেক সিনিয়র নেতাও টিভিতে নিজেকে দেখানোর আশায় রিজভীকে তোয়াজ করে চলেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে রিজভীর পাশে বসেন। নিজেদের প্রোগ্রাম থেকে যেন গণমাধ্যমকর্মীদের জরুরি তলবের নামে ডেকে নেয়া না হয় সে জন্য রিজভীকে সমঝে চলেন।

উল্লেখ্য, দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি গৃহীত ও দলীয় গঠনতন্ত্রে যুক্ত হয়। কাউন্সিলের পর দলের মহাসচিবসহ অনেকেই এক পদ রেখে অন্য পদ থেকে সরেও দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েও দপ্তর সম্পাদক পদ ছাড়েননি রুহুল কবির রিজভী।